West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls 2021: বিপুল জয়েই লুকিয়ে ভয়, মুকুট তুমি কার?

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের বর্ণালী দে-র ‘বিপুল ভোটে’ জয়ী হওয়াটাই এ বার তাঁর কাছে দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিরোধীদের অভিযোগ, বর্ণালীর স্বামী আনন্দ দে-র ‘বাহিনী’ মানুষকে ভোটই দিতে দেয়নি।

Advertisement

সুস্মিত হালদার 

রানাঘাট দক্ষিণ শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৪৮
Share:

তিন প্রার্থী: বর্ণালী দে রায় ( তৃণমূল ), মুকুটমণি অধিকারী ( বিজেপি ) এবং রমা বিশ্বাস(সংযুক্ত মোর্চা)।

মাথার উপর গনগনে সূর্য।

Advertisement

পিচগলা রস্তার ধারে আমগাছের নীচে ছোট্ট চায়ের দোকানে জনা কয়েক খদ্দের অলস ভঙ্গিতে বসে। নেহাতই হাল্কা মেজাজে। তাদেরই মধ্যে মাঝবয়সি এক জন কিছুটা বিদ্রুপের সুরেই বলেন, “ বলছেন, এটা বিধানসভা ভোট? ধুর মশাই, আপনি কিছুই বোঝেন না!”

মানে? এটা বিধানসভা ভোট নয়? তা হলে কোন ভোট?

Advertisement

লোকটির গলায় শ্লেষ, “পঞ্চায়েত ভোট, ভাই। পঞ্চায়েত ভোট।”

বাকিরা চুপ করে থেকে মিটিমিটি হাসছে। প্রায় নিভে আসা বিড়িতে লম্বা টান মেরে লোকটি ফের বলে ওঠেনন, “পঞ্চায়েত ভোটে বুথমুখো হতে দেয়নি তৃণমূল। এ বার সেই ভোটটাই দিতে যাব আমরা। বুঝিয়ে দেব পঞ্চায়েতে ভোট দিতে না দেওয়ার মজা।”

বোঝা যায়, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের বর্ণালী দে-র ‘বিপুল ভোটে’ জয়ী হওয়াটাই এ বার বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর কাছে দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিরোধীরা এত দিন অভিযোগ করে এসেছে, বর্ণালীর স্বামী আনন্দ দে-র ‘বাহিনী’ মানুষকে ভোটই দিতে দেয়নি। এখন সেই চর্চাই ফিরে আসছে চায়ের দোকানে, পাড়ার মাচায়। উঠে আসছে পথচলতি মানুষের মুখে।

তবে মাঝবয়সি লোকটির কথা শেষ হতে না হতেই রে-রে করে ওঠেন এক তরুণ। লুঙ্গিটাকে ভাঁজ করে নেন উত্তেজনায়। বলেন, “আর স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দিল যে, সেই বেলা? তোমার মেয়েই তো ট্যাব পেয়েছে। দিদি না দিলে কোনও দিন তো ট্যাব চোখেই দেখতে হত না! বড্ড বেইমান তোমরা।” তৎক্ষণাৎ পাশ থেকে এক জন বলে ওঠেন, “হাসপাতালের পরিষেবা শেষ করে দিয়ে এখন স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দিচ্ছে। মিথ্যের ঝুড়ি। কত জন উপকৃত হয়েছে, শুনি?”

বৃদ্ধকুল বাজারে দুপুরের তেতে ওঠা রাস্তা থেকে উড়ে আসে গরম হাওয়া। চায়ের দোকানের পরিবেশও ক্রমে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। যুবটি বেগতিক দেখে চুপ করে যায়। এখানে সে নেহাতই সংখ্যালঘু। তাকে ফের নিশানা করেন মাঝবয়সি লোকটি— “যতই গলাবাজি করিস না কেন, এ বার বিজেপিই জিতবে। তোদের লুট দেখতে-দেখতে মানুষ ক্লান্ত।”

ঠিক তখনই পুরনো লজঝড়ে সাইকেল বাঁশের খুঁটিতে হেলান দিয়ে পরিশ্রান্ত মুখে দোকানে ঢোকেন এক মধ্য ষাট। হাতে গোছা লটারির টিকিট। আগে সিপিএম করতেন। এখন বসে গিয়েছেন। দোকানে পা দিয়েই বিজেপির কথা শুনে তিনি বলেন, “এ বারও সিপিএমের লোকজন সব বিজেপিকেই ভোট দেবে। রমা বিশ্বাস হয়ত কিছু ভোট ঘরে ফেরাবেন। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের সময়ে বাম থেকে রামে চলে যাওয়া বেশির ভাগ ভোট ও দিকেই থেকে যাবে।” কথাটা শুনেই উত্তেজনায় উরু চাপড়ে তৃণমূল সমর্থক তরুণ বলে ওঠেন, “প্রতিহিংসা! বুঝলেন না, প্রতিহিংসা। আমরা যেহেতু সিপিএমকে ক্ষমতা থেকে সরিয়েছি তাই আমাদেরও ওরা হারাতে চাইছে। যেমন করেই হোক। তাতে যদি বিজেপির মত একটা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে হয়, ওরা সেটাও করবে!”

রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রে গত লোকসভা ভোটের খোঁয়াড়ি বোধহয় এখনও কাটেনি। এত দিন বর্ণালীর স্বামী আনন্দ দে-র ‘গড়’ বলে পরিচিত ছিল কুপার্স ক্যাম্প, যেখানে বেশির ভাগটাই বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষের বাস। সেই গড়ে এবারও ফাটল ধরছে। ভরদুপুরে কুপার্সের খাবার হোটেলে ক্লান্ত হাতে ডাল-ভাত মুখে তুলতে-তুলতে এক প্রৌঢ় বলেন, “এ বারও কিন্তু হিন্দু ভোট বিজেপির দিকেই আছে। হিন্দুদের ভিতরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অনেক ক্ষোভ।”

কী সেই ক্ষোভ?

কুপার্স ক্যাম্প হাসপাতালের পরিত্যক্ত জমির এক পাশে টিনের ঝুপড়িতে বাস লোকটির। বলছেন, “সেই ’৪৭ সালের আগে এখানে এসেছি। এখনও জমির পাট্টা পেলাম না। তৃণমূল বলছে, ভোট মিটে গেলে পুরসভা থেকে ঘর দেবে। সে তো প্রতি বারই বলে।” তাঁর কথায় ঘাড় নাড়েন পাশে দাঁড়ানো আর এক প্রৌঢ়। বাতাসে কান পাতলে বোঝা যায়, এখনও আনন্দের দাপট হারিয়ে যায়নি ঠিকই। তবে বিজেপি প্রার্থী, চিকিৎসক মুকুটমণি অধিকারীর ছবি দেওয়া ফ্লেক্সের সংখ্যাও বাড়ছে।

আনুলিয়া থেকে রাস্তা চলে যায় পায়রাডাঙার দিকে। মাঝে গোপালপুর। রাস্তার দু’পাশে ফসলের খেত। বাঁকের মুখে বটগাছের ছায়ায় টেবিল পেতে লস্যি তৈরি করছেন এক জন। সামনে প্লাস্টিকের চেয়ারে জনা কয়েক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে। এঁদেরই এক জন অনিমেষ ঘোষ পাক্কা তৃণমূল। দাবি করছেন, “বর্ণালী দে এবার জিতবেই। দেখে নেবেন।” কেন জিতবে? উত্তর আসে, “লকডাউনের সময়ে বর্ণালী বৌদি যে ভাবে ত্রাণ বিলি করেছেন সেটা মানুষ মনে রেখেছে। আর ক্লাবগুলোতে তো অনেক আগেই টিভি-ক্যারম বোর্ড ঢুকিয়ে দিয়েছে দাদা।” পাশ থেকে এক জন টিপ্পনী কাটেন, “পঞ্চায়েতে ভোট লুট করে লক ডাউনে ত্রাণ বিলি করেছে!”

চাষের খেত থেকে ফিরে লাল প্লাস্টিকের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসেছিলেন এক মাঝবয়সি। গলাটা খাদে নামিয়ে বলেন, “এ দিকে সিপিএম আর কংগ্রেসের একটা অংশ কিন্তু বর্ণালীকে ভোট দেবে। সব বিক্রি হয়ে গিয়েছে, বুঝলেন না? এখন দেখার আবীর বিশ্বাসের লোকেরা কী করে। গত বার তো ওই আনন্দই নিরানন্দ করেছিল আবীরকে। কী বুঝলেন? বুঝলেন না?”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement