West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls 2021: কীর্তনের সুরে যেন এক কৃষ্ণের বেদনা

গত লোকসভা ভোটে জলপাইগুড়ি জেলার সাতটি বিধানসভা আসনের মধ্যে যে একটি মাত্র বিধানসভায় ভোটে এগিয়ে থেকে শিবরাত্রির সলতের মতো জেগে ছিল তৃণমূল, তা হল এই রাজগঞ্জই।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২১ ০৫:০৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

চৈত্রের হাওয়ার টানে শুকনো পাতা পিচ রাস্তা দিয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে। গড়িয়ে গড়িয়ে পথচারীদের পায়েও জড়িয়ে যায়। সে-পথে মাঝদুপুরে হেঁটে আসছে একদল নারী-পুরুষ। সকলের পোশাকই সাদা। কারও হাতে খোল-করতাল, কারও কাঁখে হারমোনিয়াম। তীব্র গরমের চারপাশ ফাঁকা। রোদ মাথায় এই ভরদুপুরে ভক্তের দল চললেন কোথায়?

Advertisement

হারমোনিয়াম কাঁখে মাঝবয়সী বললেন, “ওই ঘোষালদের বাড়িতে অষ্টপ্রহর। আমরা গোবিন্দের নাম গাই। ওখানেই যাই।”

এখানে ভোট কবে?

Advertisement

“আইজ্ঞা, বৈশাখের ৩ তারিখ।”

ভোটের হাওয়া কার দিকে, জিতবে কে?

মুখে হাসি ছড়িয়ে পড়ল কীর্তনিয়াদের প্রায় সকলের মুখেই। “আমরা কী আর ও-সব খবর রাখি? আমরা তো গোবিন্দের নাম করি। আমাদের রাখলে গোবিন্দই রাখবে। জয় গোবিন্দের জয়!” দলটি এগিয়ে গেল রাজগঞ্জ থেকে বেলাকোবার দিকে। রাখলে গোবিন্দই রাখবে, এই বিশ্বাসে ভক্তদলের সকলে ঘুম থেকে ওঠেন, সারাদিনের কাজ করেন, কীর্তন গান, আবার রাতে শুতে যান। প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে প্রায় একইরকম বিশ্বাস নিয়ে ঘুম থেকে উঠছেন আবার শুতেও যাচ্ছেন রাজগঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী পরপর তিনবারের বিধায়ক খগেশ্বর রায়। “রাখলে, গোবিন্দই রাখবে।” যিনিই গোবিন্দ, তিনিই গোপাল, আবার তিনিই কৃষ্ণ! তিনিই রাখবেন তৃণমূল প্রার্থীকে? রাজগঞ্জের তৃণমূল কর্মীদের দাবি, খগেশ্বরবাবু যে কৃষ্ণনাম জপছেন সেই কৃষ্ণের দেবত্ব মহিমা নেই, তবে বেশ কয়েক হাজার ভোট উল্টে দেওয়ার ক্ষমতা নাকি রয়েছে।

তিনি কৃষ্ণ দাস। জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের এসসি-এসটি সেলের সভাপতি। সংক্ষেপে তাঁর পরিচয় হল, প্রাক্তন এসএসবি জওয়ান একসময়ে কেপিপি করতেন। ঘোর বাম আমলে সে সময় তিনি তাঁর বারোপেটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত সিপিএম-মুক্ত করেছিলেন। তার পর সিপিএমে যোগ। রাজ্যে পরিবর্তনের পরে তৃণমূলে যোগ। সব আমলেই তাঁর বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠেছে। যদিও তাঁর দাবি, বিরোধীরা রাজনৈতিক ভাবে পেরে উঠতে না পেরে মিথ্যে সব অভিযোগ করেছেন। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে তাঁর প্রভাব নিজের গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে ছাড়িয়ে গোটা বিধানসভা এলাকায় ছড়িয়েছে। গত লোকসভা ভোটে জলপাইগুড়ি জেলার সাতটি বিধানসভা আসনের মধ্যে যে একটি মাত্র বিধানসভায় ভোটে এগিয়ে থেকে শিবরাত্রির সলতের মতো জেগে ছিল তৃণমূল, তা হল এই রাজগঞ্জই। জেলা তৃণমূল নেতাদের ধারণা, তা সম্ভব হয়েছে কৃষ্ণের সৌজন্যেই। সেই কৃষ্ণকেই প্রার্থী পদে এক নম্বরে রেখে রাজ্যকে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল জেলা তৃণমূল। কৃষ্ণ নিজেও গত দেড় বছর ধরে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। দেখা গেল, তৃণমূলের প্রার্থী সেই তিনবারের বিধায়ক খগেশ্বর রায়ই। অভিমানী কৃষ্ণ নির্দল হয়ে লড়ার ঘোষণা করলেও শেষে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে সুর নরম করে দলের প্রার্থীকে মেনে নেওয়ার ঘোষণা করেছেন।

অভিমান মিটেছে?

কৃষ্ণ বলছেন, “দলের নির্দেশ পালন করব। দলের প্রার্থীকে জেতাব।” যদিও অনুগামীরা বলছেন, “দাদা আগের মতো চনমনে নন। কেমন যেন আনমনা থাকেন। মনে হয়, দাদা কে কী যেন কুরে কুরে খায়।” কী চলছে কৃষ্ণের মনে? খগেশ্বর বলছেন, “আরে কৃষ্ণ তো আমার ভাইয়ের মতো। পূর্ণ সহযোগিতা করছে। এই তো সেদিন বেলাকোবা থেকে বটতলা কী বিশাল মিছিল করলাম। কৃষ্ণ তো কত লোক এনেছিল। বিশাল ভোটে জিতব।” রাজগঞ্জ জুড়ে খগেশ্বরের ছবি দেওয়া প্রায় সব পোস্টার-ফ্লেক্সে রয়েছে কৃষ্ণ দাসের ছবি। একদা যুযুধান দুই নেতার সুরও মাঝেমধ্যে ভিন্ন লয়ে যাচ্ছে।

লোকসভা ভোটে ‘রামের কাছে যাওয়া বামের ভোট’ কী এ বার লাল বাক্সে ফিরবে? সোমবার দুপুরে আমবাড়ি শক্তি সঙ্ঘের ক্লাবে বসে খগেশ্বর বললেন, “ফিরবে। পুরোটাই ফিরবে।” পাশে বসা কৃষ্ণ বললেন, “একবার ভোট চলে গেলে আর কি ফেরে? সব না হলেও কিছু ভোট তো।”

সুরে যেন ঠিক সুর লাগে না! তালে যেন ঠিক তাল পড়ে না!

তৃণমূল কর্মীদের একাংশের দাবি, এ সব মনের ভুল। সুর-তাল সব ঠিকই আছে। রাজগঞ্জে বিজেপি প্রার্থী করেছে আরএসএস-ঘনিষ্ঠ সুপেন রায়কে। সিপিএম রতন রায়কে। তবে খগেশ্বর এবং কৃষ্ণ দু’জনেই মেনে নিলেন, লড়াই বিজেপির সঙ্গে। আগামী সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রীর সভা রাজগঞ্জে। তিনি সকলকে এক হয়ে লড়ার বার্তা দেবেন বলে আশা তৃণমূল কর্মীদের। বসন্তের হাওয়ায় আমের মুকুলের গন্ধ মাতাল রাজগঞ্জে। ইতিউতি অষ্টপ্রহরের কীর্তন আসর থেকে ভেসে আসে বাঁশির সুর। বংশীধারী কৃষ্ণের বাঁশির সুরে রাধা বিরহের বেদনা ঝরেছিল। রাজগঞ্জের বাঁশির সুরেও কি কোনও বেদনা-সুর বাজে? কোথা থেকে কোথা ভেসে যায় সেই সুর? চৈত্রের বাতাসে নয়, উত্তর আছে আগামী বৈশাখে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement