নজর: উদ্ধার হওয়া অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম ও কার্তুজ। মঙ্গলবার, নৈহাটিতে। ছবি: মাসুম আখতার
রাজ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে বিধানসভা নির্বাচন। এরই মধ্যে নৈহাটির একটি এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্রের কারখানার সন্ধান পেল ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ। সোমবার রাতে ওই কারখানায় হানা দেন নৈহাটি থানার পুলিশ-সহ কমিশনারেটের কর্তারা। দু’টি ব্যবহারযোগ্য আগ্নেয়াস্ত্র-সহ বেশ কিছু অসম্পূর্ণ অস্ত্র এবং বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে ওই কারখানা থেকে। দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ওই এলাকায়।
জগদ্দল, ভাটপাড়া, নৈহাটি, টিটাগড়-সহ উত্তর শহরতলির বহু জায়গাতেই ভোটের আগে প্রতি বার সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি হয়। দিন কয়েক আগে বোমা এবং অস্ত্র নিয়ে নির্বাচন কমিশনের তোপের মুখে পড়েছিল ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ। সম্প্রতি জগদ্দলের মেঘনা মোড়ে বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহের বাড়ির কাছে বোমাবাজি হয়। তার দিন কয়েকের মধ্যে টিটাগড় বাজারে ব্যবসায়িক গোলমালের জেরে এক দর্জির দোকানের মালিক গুলিবিদ্ধ হন। গত রবিবার রাতে ঘোলা থানা থেকে কয়েক পা দূরে এক পানশালা ব্যবসায়ীকে গুলি করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এই ধরনের ঘটনা ওই সব এলাকায় নতুন কিছু নয়। তবে একের পর এক এই ধরনের ঘটনা ঘটায় অস্বস্তি বাড়ছে ব্যারাকপুর পুলিশের।
এ দিন নৈহাটির ওই অস্ত্র কারখানার হদিস পাওয়া প্রসঙ্গে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (উত্তর) অমরনাথ কে জানান, পুলিশের কাছে খবর ছিল যে, নৈহাটির বাবাগাছি এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি হচ্ছে। গোপন সূত্রে সেই খবর পেয়ে সোমবার রাতে সেখানে হানা দেয় পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেফতার করা হয় আসান আলি এবং সৌরভ খানকে। ধৃতেরা আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করত বলে দাবি পুলিশের। তারা ওই এলাকারই বাসিন্দা বলেও দাবি করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের পরে এ দিনই ধৃতদের আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ১০ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
তদন্তকারীরা জানান, একটি ওয়ান শটার এবং একটি বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছে। ৫০০ গ্রামের মতো গুলি তৈরির বিস্ফোরকও পাওয়া গিয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির নানা সরঞ্জামও। ধৃতদের জেরা করে বেআইনি অস্ত্র তৈরি কিংবা পাচারের আরও তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলেই আশা প্রকাশ করেন কমিশনারেটের ডিসি।
ব্যারাকপুর কমিশনারেটের দাবি, পরের পর বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চলছিল। তার জেরেই ওই কারখানার হদিস পাওয়া যায়। সূত্রের খবর, দিন সাতেক আগে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ তিন জনকে ধরা হয়েছিল। পুলিশি জেরায় তারা জানায়, নৈহাটি এলাকায় কেউ বা কারা আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করছে। এর পরে পুলিশ নৈহাটি এলাকার উপরে নজরদারি বাড়ায়। এক জনকে গ্রেফতারও করা হয়। পুলিশের দাবি, গ্রেফতার হওয়া ওই ব্যক্তির মাধ্যমেই আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির এক কারিগরের হদিস মেলে। তাকে গ্রেফতারের পরে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই কারখানা ও চক্রের সন্ধান মেলে।
ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরেই ওই চক্রের খোঁজ চলছিল। সোমবার কারখানাটির হদিস পাওয়া যায়। আর কেউ ওই চক্রে আছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’