প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর বার্তা, টিকা নেওয়া এবং বিধি মেনে সতর্ক থাকা, দু’টোই একসঙ্গে চালাতে হবে। দেশকে আবার লকডাউনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য জনতার সচেতনতার কাছেই মঙ্গলবার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। বাংলায় ভোট চলাকালীন প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস-সহ সব অ-বিজেপি দলই। তাদের বক্তব্য, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেখানে জনসভা এবং বড় বড় রোড-শো চালিয়ে গিয়েছেন, সেখানে আর মোদীর এই বার্তার কার্যকারিতা কতটুকু! বস্তত, ৫০০ লোক নিয়ে মোদীর পরবর্তী সভা করা নিয়ে এ দিনই বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ কার্যত মেনে নিয়েছেন, বাইরে বেশি ভিড় হলে তাঁদের তেমন কিছু করার নেই।
তৃণমূল নেতা ও সাংসদ সৌগত রায় যেমন বলেছেন, ‘‘আমরা প্রচারে রাশ টেনেছি। প্রধানমন্ত্রী এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন! নির্বাচন কমিশনও ভোটের দফা কমাতে রাজি হয়নি। এখন ভোট প্রচার প্রায় শেষ হওয়ার পরে এ সব কথা মনে পড়ল? করোনা মোকাবিলার জন্য টিকা দরকার, অক্সিজেন দরকার। ভাষণ দেওয়া বন্ধ করে প্রধানমন্ত্রী আগে রাজ্যগুলোকে অক্সিজেন, ওষুধ পাঠান।’’ একই ভাবে তৃণমূলের আর এক সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়ও মনে করিয়ে দিয়েছেন, গত ফেব্রুয়ারি থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে টিকা চেয়ে আসছেন। সুখেন্দুবাবুর কথায়, ‘‘তখন প্রধানমন্ত্রী রাজ্য জয় করতে বেরিয়ে পড়েছিলেন। দিল্লিতে কোনও সরকার ছিল না। আর এই সুযোগে ওষুধের মুনাফাখোরি বেড়েছে। সরকার আগে পরিকাঠামো ও চিকিৎসার দিকটা নিশ্চিত করুক।’’
এই প্রশ্নে বিজেপি তথা প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধতে ছাড়ছে না সিপিএম ও কংগ্রেসও। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, সবই দেশবাসীর জন্য। নিজের দলের লোকজনকে সেই পরামর্শ দিচ্ছেন কি? বাংলায় তাঁর দলের কাজকর্ম দেখে তো সে সব মনে হচ্ছে না। মানুষকে মন্দির-মসজিদে ভাগ করেছেন, গত এক-দেড় বছর মন্দির নির্মাণ করতে ব্যস্ত ছিলেন। একটাও হাসপাতাল তৈরি করতে পেরেছেন? পরিযায়ী শ্রমিকেরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।’’ করোনা পরিস্থিতি মাথায় রেখে ভোটের প্রচারে বড় কর্মসূ্চিতে রাশ টানার কথা প্রথম বলেছে সিপিএম। বিকল্প হিসেবে সামাজিক মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক প্রচারও তারা শুরু করে দিয়েছে। সে কথাও এ দিন উল্লেখ করেছেন সুজনবাবু।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীরও মন্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নিজে বাংলায় এসে বারবার ভোটের প্রচার করে যাচ্ছেন। আর কার কী করা উচিত, তা নিয়ে উপদেশ দিচ্ছেন! করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আটকাতে কেন্দ্রীয় সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে? সর্বত্রই মানুষ বিপদে আছেন।’’
করোনা সংক্রমণের প্রেক্ষিতে বিজেপিও প্রচারে নিয়ন্ত্রণ জারি করার কথা বললেও তার কার্যকরী প্রভাব নিয়ে সংশয় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবুর বক্তব্যেই। রাজ্যে ২৩ এপ্রিল মোদীর যে চারটি সভা রয়েছে, সেখানে ৫০০ জনের প্রবেশের জন্য আমন্ত্রণপত্র দেবে বিজেপি। কিন্তু সভার জন্য বাইরে ভিড় হলে তাঁদের যে কিছু করার নেই, তা কার্যত মেনে নিয়েছেন দিলীপবাবু। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর সভায় ৫০০ জনকে আমন্ত্রণপত্র দেওয়া হবে। এর বাইরে কেউ এলে বা প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে বাইরে ভিড় হলে কিছু করার নেই। পুলিশের কাছে আবেদন করব, ভিড় জমতে দেবেন না।’’
বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয় জানিয়েছেন, বিহারের ভোটের মতো এ বার এখানেও মোদী ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাষণ ডিজ়িটাল সম্প্রচারের পথে যাবেন তাঁরা। মোদী ও অন্য বড় নেতাদের সভাস্থলের বাইরে এবং বিভিন্ন মণ্ডল ও বুথে এলইডি স্ক্রিন টাঙানো হবে। প্রতিটি স্ক্রিনের সামনে দূরত্ব বিধি মেনে ৫০ জনকে বসতে বলা হবে। কিন্তু সেখানেও ভিড় বেড়ে গেলে কী হবে? এ ক্ষেত্রেও দিলীপবাবুর বক্তব্য, ‘‘বুথ স্তরে তো অল্প লোক থাকে। সকলের দায়িত্ব আছে। সতর্ক থাকুন সবাই, এই আবেদন করব।’’