নওসাদউদ্দিন সিদ্দিকী
দল এবং ফ্রন্ট ভূমিষ্ঠ হয়েছে কয়েক মাস আগে। জোটসঙ্গী অন্য দুই পক্ষ বাম ও কংগ্রেস নজিরবিহীন ভাবে যখন বিধানসভা থেকে মুছে গিয়েছে, সেই নির্বাচনে জিতেই আইনসভায় পা রাখতে চলেছেন নবগঠিত ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) চেয়ারম্যান নওসাদউদ্দিন সিদ্দিকী। এক কথায় তিনি স্বীকার করছেন, এমন জয়ে স্বস্তির কোনও অবকাশ নেই। বরং, সামনে কঠিন সময়।
ভাঙড় থেকে তৃণমূলের প্রার্থী রেজাউল করিমকে ২৬ হাজার ১৫১ ভোটে হারিয়ে বিধানসভায় নির্বাচিত হয়েছেন তরুণ নওসাদ। চারটি আসনে আইএসএফ দ্বিতীয়। বাম ও কংগ্রেসের চেয়ে তুলনায় অনেক অল্প আসনে লড়েও তুলনামূলক ভাবে আইএসএফের গড় ভোটপ্রাপ্তির অনুপাত ভাল। এ সব হিসেব-নিকেশ অবশ্য এখন মাথায় নেই নবীন বিধায়কের। তিনি বলছেন, ‘‘ফল প্রকাশের পর থেকে আমাদের লোকজনের উপরে আক্রমণ চলছে। বিশেষত ভাঙড়, ক্যানিংয়ে জেসিবি মেশিন দিয়ে বাড়ি ভাঙা হচ্ছে! কী করে এই মানুষজনের পাশে দাঁড়ানো যায়, সেটাই এখন প্রধান চিন্তা।’’
ফল প্রকাশ পরবর্তী এই পরিস্থিতি হয়তো সাময়িক। তার পরে বিধানসভায় কী ভূমিকা হবে সংযুক্ত মোর্চার একমাত্র প্রতিনিধির? বিধানসভায় একা বিধায়ক হিসেবে স্বাভাবিক ভাবেই অল্প সময় পাবেন তিনি। পরিস্থিতি বুঝেই নওসাদের বক্তব্য, ‘‘ভোটের প্রচারে আমরা যে সব কথা বলেছি, মানুষের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, সেই নীতি মেনেই বিধানসভায় চলব।’’ বাম ও কংগ্রেসের কোনও বিধায়ক না থাকায় বিধানসভায় জোটের তরফে তাঁর উপরে যে বাড়তি দায়িত্ব থাকবে, তা-ও মানছেন নওসাদ।
তবে এমন বিপর্যয়ের পরে জোটের ভবিষ্যৎ নিয়েও তো সংশয় তৈরি হচ্ছে। জোট কি অক্ষুণ্ণ থাকবে? নওসাদের মতে, ‘‘আমরা রাজনীতিতে নতুন। এই নিয়ে আমার মন্তব্য করা উচিত নয়। যাঁরা সিনিয়র নেতা, তাঁরা নিশ্চয়ই এ সব বিষয়ে আলোচনা করবেন। তবে আমার বিশ্বাস, জোটবদ্ধ ভাবেই আমরা লড়াই চালিয়ে যেতে পারব।’’
জোটের মধ্যে বাম ও কংগ্রেস ধূলিসাৎ হয়ে গেল কিন্তু আইএসএফের প্রদর্শন তুলনায় ভাল— এই ফলকেই বা তাঁরা কী ভাবে দেখছেন? আইএসএফের চেয়ারম্যানের মত, ‘‘দক্ষিণবঙ্গে আমরা মূলত লড়াই করেছি। মালদহ ও মুর্শিদাবাদেও অল্প প্রচারে গিয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছে, বিজেপি এসে এনআরসি-সিএএ করে যদি এখান থেকে তাড়িয়ে দেয়, এই ভয় মানুষের মনে কাজ করেছে। সেই ভয় থেকেই তাঁরা তৃণমূলকে সমর্থন করেছেন। অন্য কেউ সরকার গড়তে পারবে না হয়তো, এই সংশয়ও কাজ করেছে। আমাদের বিপর্যয় হয়েছে।’’ মোর্চার ইস্তাহারেও সিএএ-এনআরসি চালু হতে না দেওয়ার ঘোষণা ছিল। নওসাদের সংযোজন, ‘‘কিছু মানুষের কাছে আমাদের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হয়েছে। সব মানুষের কাছে নিশ্চয়ই হয়নি। এগুলো সবই পর্যালোচনার বিষয়।’’
আপাতত উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার নানা এলাকা থেকে ত্রস্ত ফোন সামলাতেই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে ‘ভাইজান’ আব্বাস সিদ্দিকীর ভাইকে। তিনি জানিয়েছেন, প্রথম বার রাজনীতি ও নির্বাচনের ময়দানে নামার সব অভিজ্ঞতা থেকেই তাঁরা শিক্ষা নেবেন।