প্রতীকী ছবি।
বিধানসভা ভোটের প্রার্থী বাছাই নিয়ে অসন্তোষ মাথা চাড়া দিল কংগ্রেস শিবিরে। যে আসনে যাঁকে টিকিট দেওয়া হয়েছে, সেই আসনে তিনিই যোগ্য প্রার্থী কি না, সেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের একাংশ। জলঘোলা হচ্ছে কলকাতা শহরের দু’টি আসনের প্রার্থী নিয়েও।
এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ৮৯টি আসনের জন্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে কংগ্রেস। বিধাননগর ও কাটোয়া কেন্দ্রে প্রার্থীদের নাম নিয়ে প্রদেশ স্তরে দ্বিমত থাকায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার ছাড়া হয়েছে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর উপরে। তার মধ্যে শনিবার বেশি রাতে এআইসিসি ৩৯টি আসনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরেই দেখা দিয়েছে অসন্তোষ এবং ক্ষোভ। টিকিট দেওয়া বা প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষ অবশ্য কংগ্রেসের মতো দলে নতুন ঘটনা নয়। সাংগঠনিক রীতি মেনে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটিতে (সিইসি) রাজ্যের তরফে দলের প্রতিনিধিত্ব করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ও পরিষদীয় নেতা। সেই কারণেই এ বারের অসন্তোষে দলের কোনও অংশের ক্ষোভ প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে, আবার অন্য অংশের আঙুল বিরোধী দলনেতা তথা পরিষদীয় নেতা আব্দুল মান্নানের দিকে।
ভবানীপুর আসনে প্রার্থী বদল চেয়ে রবিবার কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া, এআইসিসি এবং প্রদেশ নেতৃত্বকে চিঠি দিয়েছেন দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ প্রসাদ। তাঁর বক্তব্য, সাবেক কলকাতার ভবানীপুরে শাদাব খান কখনওই উপযুক্ত প্রার্থী নন। প্রদেশ যুব কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে শাদাবের অবশ্যই একটি আসনে টিকিট প্রাপ্য কিন্তু ভবানীপুরে বাঙালির কাছে পৌঁছনোর মতো প্রার্থী প্রয়োজন। ভবানীপুর এলাকার ৮টি ওয়ার্ডের ক্ষুব্ধ কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে এ দিন বৈঠক করে প্রদীপ জানিয়েছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত বদল না হলে তাঁরা নিজেদের সিদ্ধান্ত জানাবেন।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, ভবানীপুর কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে নাম ছিল প্রদীপেরই। একমত ছিলেন অধীর-মান্নান। কিন্তু পরে জোড়াসাঁকোয় শিখা মিত্রকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিতে গিয়ে সেখানে শাদাবকে জায়গা দেওয়া যাচ্ছিল না। যুব কংগ্রেস সভাপতিকে টিকিট দেওয়ার দাবিতে অনড় ছিলেন মান্নান। শেষ পর্যন্ত শাদাবকে ভবানীপুরে প্রার্থী করা হয়। আবার শিখা নিজে রাজি না হওয়ায় এক কালের সোমেন মিত্র-ঘনিষ্ঠ আজমল খানকে জোড়াসাঁকোয় টিকিট দেওয়া হয়। যাঁকে নিয়ে ওই এলাকার দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা প্রশ্ন তুলছেন।
নদিয়ার কালীগঞ্জ আসনে দলীয় প্রার্থী আবুল কাসেমকে মানতে রাজি নন কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের একাংশ। প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি তুলে এ দিন পলাশি বাজার এলাকায় মিছিল বার করা হয়। কালীগঞ্জে দলের ব্লক সভাপতি কাসেমের সঙ্গে জেলা কমিটির সহ-সম্পাদক কাবিল শেখের গোষ্ঠী-বিরোধ দীর্ঘ দিনের। গত বার কাবিলকে প্রার্থী করা হতেই অন্য শিবিরের লোকজন একই ভাবে রাস্তায় নেমে পড়েন। তাঁদের বিক্ষোভের জেরে কাবিলের বদলে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থেকে হাসানুজ্জামান শেখকে প্রার্থী করে আনা হয়। ভোটে জিতে তিনি পরে তৃণমূলে চলে যান, এ বার কোনও দলেরই টিকিট পাননি।
আড়িয়াদহের অমল মুখোপাধ্যায়কে বরানগরে প্রার্থী করা নিয়েও দলের মধ্যে প্রশ্ন আছে। আবার প্রশ্ন আছে তালিকায় মহিলা মুখ কম থাকা নিয়েও। ঘোষিত ৮৯ জন প্রার্থীর মধ্যে মহিলা এখনও পর্যন্ত ৬ জন। স্বয়ং সনিয়া যে হেতু মহিলা প্রতিনিধিত্ব ও সংরক্ষণের দাবিতে বরাবর এগিয়ে, তাই রাজ্যে কংগ্রেসের তালিকায় মহিলাদের সংখ্যা কম হওয়া নিয়ে দলের হাইকম্যান্ডের একাংশও প্রশ্ন তুলেছেন।
ক্ষোভ-অসন্তোষ নিয়ে প্রদেশ সভাপতি বা বিরোধী দলনেতা প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। তবে প্রদেশ কংগ্রেসের এক বর্ষীয়ান নেতার বক্তব্য, ‘‘রাজ্যে আমরা লড়ছি অল্পসংখ্যক আসনে। তার মধ্যে সব ধরনের দাবি-দাওয়া পুরোপুরি পূরণ করা কী ভাবে সম্ভব?’’