শুভেন্দু অধিকারী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ নন্দীগ্রামে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একের পর এক কড়া সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আর ভোটগ্রহণের আগের সন্ধ্যায় তৃণমূল ও বিজেপি দুই শিবিরই কার্যত থম মেরে রয়েছে। তেমন ভাবে কোনও বিতর্ক তৈরি হয়নি গোটা দিনই। তবে দিনভরই বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনের টেবিলে। সেই সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে কিছু কিছু পদক্ষেপও করেছে কমিশন। তাতে বিজেপি যে খুশি তা স্পষ্ট। অন্য দিকে, তৃণমূল যে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিয়ে পুরোপুরি খুশি নয় তা বুঝিয়ে দিয়েছেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিকঠাক নাকা চেকিং হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
মমতার মুখ্য নির্বাচনী এজেন্টের দায়িত্বে রয়েছেন নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ান। তিনি জানিয়েছেন, ৩৫৫টি বুথের সবকটিতেই বুথ এজেন্ট দেওয়া থেকে শুরু করে ক্যাম্প অফিস তৈরির নির্দেশ দেওয়ার কাজ শেষ পর্যায়ে। বিজেপি শিবিরও বুথ সামলানোর প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। শুভেন্দু অধিকারীর হয়ে সেই কাজ দেখছেন বিজেপি-র মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট মেঘনাদ পাল।
দুই শিবিরেরই বক্তব্য মূলত এক। দু’পক্ষই দাবি করছে, শান্তিপূর্ণ ভোট করাই তাদের লক্ষ্য। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি ভোটের দিন নন্দীগ্রামে বহিরাগত ঢোকাতে পারে। ঠিক উল্টো দাবি রয়েছে বিজেপি-র। যদিও মঙ্গলবার থেকেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনকে নন্দীগ্রামের সীমানা সিল করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। একই সঙ্গে গোটা নন্দীগ্রামেই জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। যেটা সাধারণত থাকে শুধুই বুথ চত্বরে। এ ছাড়াও ৩৫৫ আসনের নন্দীগ্রামের জন্য ২২ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকেই নন্দীগ্রামে ঢোকা ও বেরনোর প্রতিটি সীমানায় শুরু হয়েছে নাকা চেকিং। চলছে হেলিকপ্টারে নজরদারি। সব মিলিয়ে ভোটগ্রহণের আগের দিনই নন্দীগ্রাম যেন দুর্গ।
বিজেপি বুধবারই নির্বাচন কমিশনে গিয়ে গোটা নন্দীগ্রামে ১৪৪ ধারা জারির আবেদন জানিয়েছিল। সেই দাবি কার্যত মেনেও নেয় কমিশন। তার বিরোধিতাও করেনি তৃণমূল। যদিও প্রশাসন ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন প্রার্থী মমতা। গত রবিবার থেকে নন্দীগ্রামেই রয়েছেন মমতা। মঙ্গলবার সেখানকার প্রচার পর্ব মেটার পরে বুধবার হুগলি ও হাওড়ায় সভা সেরে ফিরে যান নন্দীগ্রামে। বিকেলে নন্দীগ্রামে পৌঁছেই অভিযোগ তোলেন তিনি। মমতার দাবি, নন্দীগ্রামে কোথাও নাকা চেকিং হচ্ছে না। ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ হলেও সেটা বিজেপি নেতাদের সুরক্ষা দিতে বলে দাবি করেন মমতা।
বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় রাজ্যের ৪ জেলার ৩০ আসনে ভোটগ্রহণ। তবে নজরে একটাই কেন্দ্র নন্দীগ্রাম। ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগে থেকেই যে কেন্দ্রকে ‘ভিআইপি’ বানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তিনি প্রার্থী হতে পারেন ঘোষণার পর থেকেই নীলবাড়ির লড়াইয়ের ভর কেন্দ্র হয়ে ওঠে নন্দীগ্রাম। বিজেপি ওই আসনে শুভেন্দুকে প্রার্থী করে লড়াইয়ে নতুন মাত্রা এনে দেয়। সেই থেকে উত্তাপ শুধু বেড়েছে। চাপানউতোরে জমে উঠেছে প্রচারপর্ব। মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন মমতার জখম হওয়া থেকে ভোটের আগের সন্ধ্যায় সীমান্ত সিল করে দেওয়া পর্যন্ত একের পরে এক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে নন্দীগ্রাম। এ বার ভোট দেওয়ার অপেক্ষায় নন্দীগ্রাম।