বুথের বাইরে ধস্তাধস্তি। —নিজস্ব চিত্র।
পোস্টাল ব্যালটে ভোটগ্রহণ ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা বোলপুরে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে অবাধে ভোট লুঠ করার অভিযোগ বিজেপি-র। তা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বচসা, ধস্তাধস্তি এবং শেষ পর্যন্ত মারামারিও হয়। বোলপুরের যে স্কুলে ভোটগ্রহণ চলছিল, সেখানে ভোট বাতিলের দাবি তুলেছে বিজেপি। নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে তারা। যদিও তৃণমূলের দাবি, বিজেপি-র লোকজনই গিয়ে ঝামেলা পাকান। পরিস্থিতি তাতিয়ে তোলেন।
এলাকাভিত্তিক পোস্টাল ব্যালটই গোছানোর কাজ চলছিল বুধবার। বোলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে যে ভোটকেন্দ্র, সেখানে পোস্টাল ব্যালট সাজানোর কাজ করছিলেন ভোটকর্মীরা। কিন্তু বিজেপি-র দাবি, ভোট করানোর দায়িত্বে থাকা শিক্ষক-শিক্ষিকারাও ভোট দিতে এসেছিলেন। কিন্তু বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল না। শুধুমাত্র রাজ্য পুলিশের উপস্থিতিতে ভোট চলছিল। তাঁরা তৃণমূলের কথাতেই চলছিলেন। ভোটবাক্সে তালা না দিয়ে জমায়েত করে ভোট দেওয়া হচ্ছিল সেখানে।
বিষয়টি চাউর হতেই বুথে পৌঁছে যান স্থানীয় বিজেপি নেতা-কর্মীরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছন বোলপুরের বিজেপি প্রার্থী অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় এবং তাঁর সমর্থকরা। বুথে ঢুকে নিজেদের এজেন্টের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। তার পর ভোটকর্মীদের কাছে জবাবদিহি চান। সেখানে তৃণমূলের এজেন্ট এবং কর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু হয় তাঁদের। তৃণমূল কর্মীদের টানতে টানতে নিয়ে এসে বুথের বাইরে মারধর করার অভিযোগও ওঠে তাঁদের বিরুদ্ধে। এমনকি অনির্বাণ নিজের সমর্থকদের তৃণমূল কর্মীদের মারধর করার নির্দেশ দেন বলেও অভিযোগ করেছে জোড়াফুল শিবির। গোটা ঘটনায় ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়াই বন্ধ হয়ে যায় ওই বুথে।
যদিও বিজেপি-র তরফে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তৃণমূল ভোট লুঠ করছে বলে এজেন্ট খবর দেওয়াতেই তাঁরা বিষয়টি দেখতে আসেন বলে জানিয়েছেন দলের স্থানীয় নেতৃত্ব। সংবাদমাধ্যমে অনির্বাণ বলেন, ‘‘ভোটবাক্সে তালা লাগার আগেই ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে যায়। এজেন্টের কাছে খবর পেয়ে ছুটে আসি আমি। আমি তো এর কোনও ব্যাখ্যাই পাচ্ছি না। বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী নেই। শুধু রাজ্য পুলিশ রয়েছে। আমরা বিশেষ পর্যবেক্ষককে বিষয়টি জানিয়েছি। ভোট বাতিল করতে অনুরোধ করেছি। কারণ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে যে, তৃণমূল ভোট লুঠ করছে। মানুষকে প্রভাবিত করছিল ওরা। ভোটবাক্সে তালা নেই কেন, ভোটারদের অনেকেও প্রশ্ন তুলেছেন। তার জন্য তাঁদের হেনস্থাও করা হয়। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ভোট দিতে এসে যদি এমন হয়, সেই দায় কি প্রশাসনের নয়? কমিশনকেও বিষয়টি জানিয়েছি। ভোট বাতিল করতে হবে।’’
তবে পোস্টাল ব্যালটে ছাপ্পাভোট এবং ভোট লুঠের কোনও প্রশ্নই ওঠে না বলে পাল্টা দাবি করেছেন বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি অশান্তি সৃষ্টি করতে চাইছে। দলের কর্মীদের সাবধান করে দিয়েছি আমি। বরং ওঁদের প্রার্থীই ওই স্কুলে গিয়ে ঝামেলা করেছেন। আমাদের কর্মীদের মারধর করার নির্দেশ দিয়েছেন। ভাবছেন নোংরামি করে চলে যাবেন আর বোলপুরের মানুষ তা মেনে নেবেন। এ সব এখানে হবে না।’’ অনির্বাণের বুথে ঢোকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনুব্রত। তাঁর কথায়, ‘‘প্রার্থী মারধর করার নির্দেশ দিচ্ছেন। ঝামেলা পাকাচ্ছেন। এটা শোভনীয় নয়। ওঁর উস্কানিতেই অশান্তি হয়েছে। কই আমাদের প্রার্থী চন্দ্রনাথ সিংহ তো যাননি! আর ছাপ্পা ভোট হবে কী করে? পোস্টাল ব্যালটে ভোট হয়েছে। অন্যের খাতে যাবে কী করে? এখানে ছাপ্পাভোটের কোনও প্রশ্ন নেই।’’
ভোট লুঠের অভিযোগ নিয়ে অনির্বাণের দিকে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন অনুব্রত। তিনি বলেন, ‘‘উনি দেখেছেন ছাপ্পাভোট হতে? শুধু শুধু ওখানে গিয়ে সিআরপিএফ-কে দিয়ে লাঠিচার্জ করালেন। আমরা এফআইআর দায়ের করব। এমন লোক যদি বিধায়ক হন, বোলপুরের কী হাল হবে ভাবুন। শ্যামবাটিতে তো পুলিশের গাড়িতে বিজেপি-র জিনিসপত্র ধরা পড়েছে। পুলিশ লেখা গাড়িতে বিজেপি-র পতাকা দেখা গিয়েছে। তার নীচে বোমা ছিল কি না, জানি না। কারণ উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ বিহার থেকে লোক এনে জায়গায় জায়গায় বোমা বানাচ্ছে ওরা। পুলিশ পর্যবেক্ষককে বিষয়টি জানাব।’’