স্বর্ণকমল সাহা, মহম্মদ ইকবাল আলম এবং প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল
মৌলালির জোড়া গির্জা লাগোয়া বসতি। সেখানে সরু গলির ভিতরে একটি বাড়ির সামনে উদাস চোখে বসে ছিলেন বছর সত্তরের বৃদ্ধা। গলির চারপাশে হরেক রাজনৈতিক দলের পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন। আগন্তুকের প্রশ্ন শুনে বৃদ্ধার জবাব, ‘‘দু’বেলা খেতে পাব, অসুস্থ হলে ভাল চিকিৎসা পাব, এমন সরকার চাই। ভোট তাদেরই দেব।’’
রফি আহমেদ কিদওয়াই রোডের বাড়িতে বসে এন্টালির বিদায়ী বিধায়ক, তৃণমূল প্রার্থী স্বর্ণকমল সাহা বলছিলেন, ‘‘বিরোধীরা যে যা-ই বলুক, আমার কেন্দ্রে ঢের উন্নয়ন হয়েছে। বিধায়ক তহবিলের টাকা দিয়েছি স্কুলে, মাঠ সাজাতেও। আমপান ঝড় থেকে করোনার লকডাউন— মানুষ সব সময়ে আমাকে পাশে পেয়েছেন। আগের বারের চেয়ে দ্বিগুণ ভোটের ব্যবধানে জিতছি।’’
তৃণমূলের সভা-মিছিলে ভিড় হচ্ছে না বলে দাবি করলেন ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল। তাঁর কথায়, ‘‘দু’হাত তুলে মানুষ আমাকে আশীর্বাদ করছেন। আমার সভায় প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে। শাসক দলের অনেক কর্মী-সমর্থকই এ বার বিজেপিকে ভোট দেবেন। ফলের দিন মিলিয়ে নেবেন।’’
শুনে হাসলেন স্বর্ণকমল। বললেন, ‘‘২০১৫ সালে পুরসভার ভোটে উনি লড়েছিলেন। লজ্জাজনক হারের পরে এত দিন ওঁকে কোথাও দেখা যায়নি। রাজ্যের মতো এই কেন্দ্রেও মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করবে।’’
আর সংযুক্ত মোর্চা? এন্টালিতে মোর্চার সমর্থনে খাম প্রতীকে লড়ছেন মহম্মদ ইকবাল আলম। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড লাগোয়া স্যর সৈয়দ আহমেদ রোডের একচিলতে গলিতে পৈতৃক বাড়িতে বসে তিনি বললেন, ‘‘প্রচারে পাঁচটা বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চাকরি, নিকাশি, পানীয় জল। দুর্গাপুর, মাঠপুকুর, বিবিবাগান, হাতিবাগান, তিলজলায় গিয়ে দেখুন, উন্নয়নের লেশমাত্র নেই। একেবারে যেন গ্রাম। কাজের দিশা নেই তৃণমূলের বিদায়ী বিধায়কের। তাই এমন হাল। আর বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে কী উন্নয়ন হয়েছে, তা তো সবাই জানেন।’’
দিল্লির ‘হামদর্দ ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চ’-এর গবেষক ইকবালের দাবি, বাম-কংগ্রেসের ভোটারেরা তাঁর পাশে থাকবেন। সঙ্গে আইএসএফ সমর্থকেরা তো রয়েছেনই। তিনি বলেন, ‘‘আমি রাজনীতির লোক নই। আমার পেশা অন্য। মানুষের সেবা করতেই লড়াইয়ে নেমেছি।’’
ও দিকে, বিজেপির প্রিয়ঙ্কা বলছেন, ‘‘সংযুক্ত মোর্চার কোনও প্রভাবই এই কেন্দ্রে নেই। আর তৃণমূল ভাবছে, সংখ্যালঘু ভোটে জিতবে। ভুল ধারণা। হিন্দু ভোট তো পাবই, তৃণমূলেরও অনেকে আমাকে ভোট দেবেন। আগের বার যে ভোটে তৃণমূল জিতেছিল, আমি তার চেয়েও বেশি ভোটে ওদের হারাব।’’
এন্টালিতে পুরসভার পাঁচটি ওয়ার্ডের সবেতেই তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি। তাঁদেরই এক জন, ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর আমিরুদ্দিন (ববি) বললেন, ‘‘বিজেপি প্রার্থী তো বহুতলের বাসিন্দা, মাটির খবর তেমন রাখেন না। দুর্যোগ-দুর্বিপাকে এই এলাকায় গেরুয়া শিবিরের কাউকে দেখাই যায়নি। আর খাম প্রতীকের প্রার্থীর যদি মানুষের সেবা করার ইচ্ছে থাকে, তা হলে আগে দিল্লির চাকরিটা ছেড়ে আসুন। জনতা কেন ওঁকে বিশ্বাস করবেন?’’
ভোট কাটাকুটির একটা ভাবনা কিন্তু শাসক-শিবিরের অন্দরে ঘুরছেই। এলাকায় কানাঘুষো, ওই কেন্দ্রের অনেক প্রান্তেই সংখ্যালঘু ভোটারের আধিক্য। সংযুক্ত মোর্চা-সমর্থিত আইএসএফ প্রার্থীর দিকে সেই ভোটের কিছু অংশ ঘুরলে আখেরে বিজেপির লাভ হবে বলেই বাড়ি বাড়ি প্রচারে তুলে ধরছে শাসক-শিবির। স্থানীয় সূত্রের খবর, আইএসএফ শীর্ষ নেতার এমন কথার ভিডিয়ো ‘ভাইরাল’ করছে ওই শিবিরই।
তাতে অবশ্য আমল দিতে নারাজ স্বর্ণকমল। তিনি বলছেন, ‘‘ভোট-ময়দানে ধর্মের নামে সুড়সুড়ি দিয়ে, ষড়যন্ত্র করে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু তাতে লাভ হবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের সঙ্গেই মানুষ থাকবেন। জিতছি আমিই।’’