কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় ফাইল চিত্র।
রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার দিনই বিস্ফোরক মন্তব্য করে দলকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন সিপিএম নেতা তথা পরাজিত প্রার্থী তন্ময় ভট্টাচার্য। এ বার ধর্মীয় রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সিপিএমের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন দলের প্রবীণ নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে কান্তিও এ বারের ভোটে হেরেছেন। ঘটনাচক্রে, দুই নেতাই জানিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের বক্তব্যে অনড় থাকছেন।
সিপিএমের গঠনতন্ত্রে এ ভাবে প্রকাশ্যে দলীয় সিদ্ধান্ত বা মতামত প্রকাশ করা যায় না। কিন্তু দলের এই কঠিন সময়ে তন্ময়-কান্তির মতো ‘বিদ্রোহী’ নেতাদের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপও করতে পারছে না আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। বস্তুত তন্ময়ের ক্ষেত্রে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটি বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অবস্থান (তন্ময়ের মন্তব্য ব্যক্তিগত) জানালেও কান্তির ক্ষেত্রে তেমনটাও করতে নারাজ সিপিএম।
বুধবার প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি বলেছেন, ‘‘এ বারের নির্বাচনে মানুষ যে রায় দিয়েছেন, তাকে আমি কুর্নিশ জানাই। মানুষ ধরে নিয়েছিলেন, এ রাজ্যে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদকে রুখতে পারবে তৃণমূল কংগ্রেস। বামপন্থীরা নয়। কেন আমরা পারিনি তার জন্য শীর্ষ নেতৃত্ব আলাপ আলোচনা করবেন। তাঁরা নিশ্চয়ই তথ্যনিষ্ঠ অনুসন্ধান করবেন। গোল গোল কথা বললে হবে না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা ভুল তো করেইছি। তা না হলে এমন ফল হবে কেন? বস্তুনিষ্ঠ আত্মসমালোচনা না করলে ভুল করা হবে। অপরাধ হবে।’’
সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে বলেও মন্তব্য করেন কান্তি। তিনি বলেন, ‘‘ধর্মীয় মেরুকরণ রুখতে গেলে প্রধান দ্বন্দ্বকেই রুখতে হবে। অপ্রধান দ্বন্দ্বের সঙ্গে অনেক সময়ই আপস করতে হয়, সমঝোতা করতে হয়। প্রধান শত্রুকে পরাস্ত করার জন্য।’’
রাজনীতির কারবারিদের মতে, এমন মন্তব্য করে কান্তি আসলে দলের সমালোচনার পাশাপাশি তৃণমূলের সঙ্গে জোটের রাস্তায় হাঁটার বার্তা দিতে চেয়েছেন। তাঁর ওই মন্তব্যের পরেই কান্তির সঙ্গে আলাদা করে কথা বলতে চাইছেন সিপিএম নেতৃত্ব। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের সম্পাদক শমীক লাহিড়ি বলেন, ‘‘কান্তিদার কথা আমরা সবটাই শুনেছি। আমি প্রয়োজন মতো ওঁর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলব।’’
প্রসঙ্গত, ছেলের অসুস্থতার জন্য দুশ্চিন্তায় আছেন কান্তি। শমীক জানিয়েছেন, কান্তি-পুত্রের শারীরিক অবস্থা ঠিক হওয়ার পরেই তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন। তার আগে কান্তির মন্তব্য প্রসঙ্গে কোনও বিবৃতিও জারি করবেন না তিনি।
এর আগে দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করায় উত্তর দমদমের প্রাক্তন বিধায়ক তন্ময়ের বিরুদ্ধে বিবৃতি জারি করে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম। তার পরেও নিজের মন্তব্যে অটল থেকেছেন তন্ময়। কান্তিও নিজের অবস্থান থেকে সরবেন না বলেই জানিয়েছেন।