অধীর রঞ্জন চৌধুরী।
ভোট পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনে তৃণমূল-সঙ্গ নিয়ে তাঁর মন্তব্যের ‘ভুল ব্যাখ্যা’ করা হয়েছে। শুক্রবার এমন দাবিই করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। কলকাতা প্রেস ক্লাবে বুধবার তাঁর সাংবাদিক বৈঠকের পরে ভোট পরবর্তী পরিস্থিতিতে কংগ্রেস-তৃণমূল সমঝোতা নিয়ে জল্পনা দানা বেঁধেছিল। কিন্তু শুক্রবার অধীরের দাবি, ভোট পরবর্তী পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থনের কোনও বার্তা তিনি দেননি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমার কথা বিকৃত করা হয়েছে।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ত্রিশঙ্কু (বিধানসভা) হলে মমতা বিজেপি-র হাত ধরবেন।’’
শুক্রবার বহরমপুরে কংগ্রেস দফতরে সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন অধীর। বুধবারের প্রসঙ্গ টেনে অধীর বলেন, ‘‘সেদিন আমাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ত্রিশঙ্কু হলে কী হবে, আমি প্রথমে উত্তর দিয়েছিলাম, ত্রিশঙ্কু হওয়ার কোনও সম্ভাবনার কথা আমরা মানছি না। কারণ, সংযুক্ত মোর্চা সরকার গঠন করবে।’’ এর পর বিজেপি-র বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের আবেদন জানিয়ে বিরোধী নেতাদের লেখা মমতার চিঠি প্রসঙ্গ তুলে অধীরের মন্তব্য, ‘‘আজকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের পরাজয় বুঝতে পেরে সনিয়া গাঁধীর কাছে দরখাস্ত করছেন। এমনও তো হতে পারে, যখন সংযুক্ত মোর্চা সরকার গঠন করছে, সরকার গঠনের জন্য শুরু করেছে প্রক্রিয়া, তখন মমতা নিজের ভুল বুঝতে পেরে বলতে পারেন, আবেদন করতে পারেন যে, সংযুক্ত মোর্চা আমি যা ভুল-ভ্রান্তির রাজনীতি করেছি, আমাকে ক্ষমা করো। আমি তোমাদের সমর্থন করতে চাই।’’ অধীরের দাবি, তিনি বুধবার এ কথাটাই বলতে চেয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘এই কথাটাই আমি বলার চেষ্টা করেছিলাম। এবং এটাই আমি বলেওছিলাম।’’ এ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্যের ‘ভুল ব্যাখ্যা’ দেওয়ার অভিযোগ তুলে অধীরের মন্তব্য, ‘‘সেটাকে ঘুরিয়ে দিয়ে কী হল, আমরা নাকি ত্রিশঙ্কু হলে মমতাকে সমর্থন করব!’’
বিজেপি-র সঙ্গে তৃণমূলের ভোট পরবর্তী জোটের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও শুক্রবার দাবি করেন অধীর। তিনি বলেন, ‘‘যদি প্রশ্ন করেন ত্রিশঙ্কু হলে কী হবে? আমি বলছি, মমতা বিজেপি-র হাত ধরবেন।’’ তাঁর দাবি, অতীতে মমতা বিজেপি-র সঙ্গে জোট করে পশ্চিমবঙ্গে ভোটে লড়েছেন। কেন্দ্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারে কয়লামন্ত্রী এবং রেলমন্ত্রী হয়েছেন। সেই সঙ্গে অধীরের মন্তব্য, ‘‘এ বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তো বিজেপি-কে শক্তি দিলেন। কংগ্রেস, বামকে খতম করলেন।’’
অধীরের দাবি, মমতার সঙ্গে বিজেপি-র পুরনো সম্পর্ক, তাই ভোটে ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হলে, পুরনো বন্ধুত্ব ঝালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন তৃণমূলনেত্রী। সরকার গড়তে তিনি প্রথমে বিজেপি-র দ্বারস্থ হবেন। এ প্রসঙ্গে ইংরেজি প্রবাদ আর তার বাংলা তর্জমাও শুক্রবার শোনা গিয়েছে বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদের মুখে, ‘‘পুরনো ঘোড়ায় চড়লে ভরসা হয়। পুরনো মদ খেলে ভাল নেশা হয়। পুরনো বন্ধুকে ভরসা করা যায়।’’ বিধানসভা ভোটে দুই প্রতিপক্ষ শিবিরের প্রচারের ‘মুখ’দের কটাক্ষ করে অধীর বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি দলের দুটো নায়ক। শাহ আর মোদী। আর সহ-নায়ক নড্ডা। তৃণমূল দলের একটা নায়ক আর তার পিসি।’’
শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের নোটিস প্রসঙ্গে অধীর বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে নির্বাচন কমিশন কোনও নোটিস দিয়েছে কি না, আমার জানা নেই। কমিশন যদি মনে করে কিছু করার, তো করবে। আমি নির্বাচন কমিশনকে কোনও চ্যালেঞ্জ দিতেও এখানে আসিনি। ধমকাতেও আসিনি।’’ তবে চতুর্থ দফা ভোটের আগে রাজ্যে প্রবীণ নাগরিকদের ভোট সংগ্রহে কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করেন অধীর। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে একটা আশঙ্কা, ব্যালট বা পোস্টাল ব্যালটে বয়স্ক মানুষদের ভোট সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, তাতে সরকারি দল তৃণমূল একটা বড় ধরনের কারচুপি করার চেষ্টা করছে। সেই জন্য আমরা নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক করেছি।’’
কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে তৃণমূলনেত্রীর উষ্মা প্রসঙ্গে অধীর বলেন, ‘‘এই কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপর আমাদের নির্ভর করতে হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে নির্ভর করতে হয়। কেন্দ্রীয় সরকারেরও নির্ভর করতে হয়। তাই তারা আমাদের রাতারাতি শত্রু হয়ে যাবে, সেই রাজনীতি আমরা করি না। যদি কারও মনে হয় নির্বাচন কমিশন বা কেন্দ্রীয় বাহিনী কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছে, তা হলে তার প্রতিবাদটা সেই ভাবেই করতে হবে। কিন্তু কোনও গালিগালাজ করে বাজার গরম করার রাজনীতি আমি করি না। করতেও পারব না।’’