গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
লিখিত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রথমে স্বল্প সঞ্চয়ে সুদের হারে ব্যাপক ছাঁটাই। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই এক টুইটে সেই নির্দেশ প্রত্যাহার। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত এবং সিদ্ধান্ত বদলের পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধিরই গন্ধ পাচ্ছেন বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, বাংলা, অসম, কেরল, তামিলনাড়ু এই ৪ রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচেরিতে এই মুহূর্তে ভোটে জিতে সরকার গড়াই মূল লক্ষ্য বিজেপি নেতৃত্বের। তার মধ্যে সুদের হার কমালে ভোটবাক্সে তার প্রভাব অবশ্যম্ভাবী। সেই ফাঁড়া কাটাতেই সিদ্ধান্ত নিয়েও তা থেকে সরতে বাধ্য হল কেন্দ্র।
বৃহস্পতিবার বাংলায় যখন দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ চলছে, সেই সময়ই টুইটারে সুদের হার ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের কথা জানান কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। জানান, ভুলবশত সুদের হার কমানোর যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তা নিয়ে টুইটারে কেন্দ্রীয় সরকারকে কটাক্ষ করেছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে বিতর্ক সামাল দিতে যে ভাবে ‘ক্রোনোলজি’ বোঝানোর চেষ্টা করতেন অমিত শাহ, সে ভাবেই বিজেপি নেতৃত্বকে কটাক্ষ করেছেন মহুয়া।
সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রকের ঠিক কী কথা হতে পারে, টুইটারে তার একটি কাল্পনিক রূপ তুলে ধরেন মহুয়া। তিনি লেখেন, ‘ক্রোনোলজি সমঝিয়ে! ১ এপ্রিল সকাল ৭টায় মোদী-শাহ বললেন, ৫ রাজ্যে ভোট আর এখন সুদের হারে ছাঁটাই? মূর্খ কোথাকার! এখনই প্রত্যাহার করো। নির্বাচন মিটে গেলে এ সব ঘোষণা করবে। সেই নির্দেশ পেয়ে সকাল ৭টা ৫৪-য় অর্থ মন্ত্রকের জবাব, হ্যাঁ স্যর। কোনও সমস্যা নেই স্যর। এখনই নির্দেশ প্রত্যাহার করে টুইট করবেন অর্থমন্ত্রী’।
তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন টুইটারে লেখেন, ‘দর্শক মুখে কাঁচা ডিম ছুড়ে মারলে যেমন হয়, তেমনই অবস্থা দেখছি যে! নির্বাচনী প্রচারে লরিতে চেপে ফুলের পাপড়ি ছুড়তে ছুড়তে মোদী-শাহ ভুয়ো প্রতিশ্রুতিতে ভরা এপ্রিল ফুলের তামাশা করতে ব্যস্ত বলেই এমন অবস্থা’।
তবে শুধু তৃণমূল নেতৃত্বই নয়, গোটা ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের অভিসন্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস নেতৃত্বও। দলের সাধারণ সম্পাদক মুকুল ওয়ানসিক টুইটারে লেখেন, ‘ভুলবশত, নাকি অসম এবং বাংলার নির্বাচনের জন্য সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হল মোদী সরকারকে? এই সরকারের আসল চেহারা বেরিয়ে পড়েছে’।
গোটা ঘটনায় নেটমাধ্যমে সাধারণ নাগরিকদেরও সমালোচনার মুখে পড়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের সিলমোহর দেওয়া লিখিত বিজ্ঞপ্তি কী ভাবে ‘ভুলবশত’ হতে পারে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার যুক্তি দিয়েছেন, গোটাটাই কেন্দ্রের পরিকল্পনা ছিল। শুধু সামঞ্জস্যের অভাবে ভোটের আগে তা বেরিয়ে গিয়েছে। তাই এখন নির্দেশ প্রত্যাহার করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে। তবে এ নিয়ে বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।