মেদিনীপুর-বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে ছিল মুড়ি। শিল্পাঞ্চলে ১১ এপ্রিল ভোটের দিনও দেখা গিয়েছিল সেই মুড়ি-চিত্র। বর্ধমানের গ্রামীণ এলাকায় তা পাল্টে গেল তরমুজ, সরবত, কলা-পাউরুটিতে। বুথ থেকে ফেরার পথে রাস্তার মোড়ে ভোটারদের ডেকে-ডেকে এই সবই হাতে তুলে দিতে দেখা গেল শাসকদলের লোকজনকে। বিলি করার ফাঁকেই তাঁদের যুক্তি, ‘‘গরমের মধ্যে মানুষ কষ্ট করে ভোট দিয়েছেন। তাই এই সামান্য আয়োজন।’’
এ দিন বর্ধমান উত্তর ও দক্ষিণ কেন্দ্রের নানা জায়গায় ক্যাম্প করে বসেছিলেন তৃণমূলের কিছু কর্মী। ভোট দিতে যাওয়া-আসার পথে তরমুজ খাওয়ার জন্য ডাকাডাকি করছিলেন তাঁরা। কিছু এলাকায় সরবত বিলি করতে দেখা যায়। এ ছাড়াও ছিল কচুরি-তরকারি বা কেক-কলার ঢালাও আয়োজন। এক ভোটারের বক্তব্য, ‘‘এ তো একেবারে ভোট দাও, তরমুজ খাও।’’ বর্ধমানের এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘গরমে ভোটারদের ঠান্ডা রাখতেই এমন আয়োজন।’’ ঠান্ডা রাখা মানে? মুচকি হাসেন নেতা।
বর্ধমান উত্তরে তরমুজ খেতে খেতে ফেরা হানিফা বিবি, সওকত আলিরা বলেন, ‘‘ভোট দেওয়ার পরে দিল। খাব না, বলার সাহস কার আছে!’’ সরবতের স্টলেও ভিড় ছিল। এক যুবক বলেন, ‘‘গরমে ভোট দেওয়ার পরে সরবত পেয়ে ভালই লাগছে। না খেলে বিপদে পড়তে হত!’’
পূর্বস্থলী উত্তরের হাপানিয়া প্রাথমিক অবৈতনিক স্কুলের বুথ থেকে বেরোতেই এক মহিলাকে তৃণমূলের এক কর্মী বলেন, ‘‘কষ্ট করে এই গরমে ভোট দিয়েছেন। পাউরুটি, কলা নিয়ে যান।’’ গরমে শুকনো কলা-পাউরুটি কি গলা থেকে নামবে? তৃণমূল কর্মীর জবাব, ‘‘জলের ব্যবস্থাও আছে।’’
সিপিএমের অভিযোগ, তরমুজ, পাউরুটি বিলি করে ভোটারদের প্রভাবিত করেছে তৃণমূল। তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, গরমে গ্রামের মানুষ অনেকটা পথ হেঁটে গিয়ে ভোট দিয়েছেন। তাঁদের কষ্ট লাঘব করতেই এই সামান্য বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যায় কিছু নেই। আর শক্তিগড়ের এক মহিলার মন্তব্য, ‘‘কংগ্রেসকে এক সময় তরমুজ দল বলত তৃণমূল। এখন তারাই তরমুজ বিলি করছে!’’