ডিসপ্লে বোর্ডে সংখ্যার ছোটখাটো ওঠাপড়া দেখেই অনেক সময় ধুন্ধুমার বেধে যায় গণনা কেন্দ্রের সামনে। কিংবা অন্যত্র। এ বার তো রাজ্যে তৃণমূল নাকি জোট— ক্ষমতায় কারা আসবে, তা নিয়ে জল্পনার শেষ নেই। গণনার দিন যত এগিয়ে আসছে, পারদ তত চড়ছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় প্রতি দিনই হামলা-হিংসার কিছু না কিছু খবর পাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এই অবস্থায় ১৯ তারিখ পর্যন্ত স্ট্রংরুমগুলি যে কড়া নিরাপত্তায় রাখা হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার সঙ্গে ভোটের ফল ঘোষণার ক্ষেত্রেও এ বার বিশেষ সতর্ক নির্বাচন কমিশন।
কী রকম? রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সুনীল গুপ্ত মঙ্গলবার জানিয়ে দিয়েছেন, ১৯ মে ফল ঘোষণার জন্য গণনা কেন্দ্রের বাইরে এ বার কোনও বৈদ্যুতিন ডিসপ্লে বোর্ড থাকবে না। প্রতি রাউন্ডের গোনা শেষ হলে নির্বাচনী বিধি মেনে যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে, তবে তা সংবাদমাধ্যমকে জানানো হবে। সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার গণনার সর্বশেষ হিসেব সিইও অফিসে জানানোর পরে কমিশনের তরফে সরকারি ভাবে শুধু চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হবে।
কেন এই পদক্ষেপ? কমিশনের যুক্তি, এ বার রাজ্যের প্রতিটি কেন্দ্রের ফল নিয়ে সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের উৎকণ্ঠা প্রবল। গণনা চলাকালীন ডিসপ্লে বোর্ডে জেতা-হারার প্রবণতা জানতে পারলে তা থেকেই গণ্ডগোল ছড়াতে পারে। তবু প্রশ্ন থাকছে, মিডিয়ার মাধ্যমে ফলাফলের প্রবণতা জানতে পেরেও তো অশান্তি ছড়াতে পারে? কমিশন তার দায় দেবে না।
গণনা চলাকালীন কোনও ভাবে কানাঘুষো খবর চালাচালি বা কোনও রকম হেরফের যাতে কেউ না করতে পারেন, তার জন্য আরও কিছু নির্দেশ জারি করেছে কমিশন। যেমন: গণনা কেন্দ্রে এ বার স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত কোনও ব্যক্তিকে নিয়োগ করা যাবে না। প্রবেশ নিষেধ রাজ্য পুলিশেরও। দরজার বাইরে শুধু কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাহারা থাকবে। গণনা কেন্দ্রে কোন টেবিলে
কমিশনের তরফে কোন কর্মী থাকবেন, তা গণনা শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে রিটার্নিং অফিসার ও মাইক্রো-অবজারভার মিলে ঠিক করবেন। শারীরিক অসুস্থতা ছাড়া কোনও কর্মী গণনা কেন্দ্রের বাইরে যেতে পারবেন না। রিটার্নিং অফিসারদের মোবাইল ফোন নিয়ে গণনা কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হবে না। একমাত্র পর্যবেক্ষকরাই সঙ্গে ফোন রাখতে পারবেন।
এ তো গেল ১৯ তারিখের কথা। মাঝের ক’দিন কতটা সুরক্ষিত রয়েছে ইভিএম-বন্দি রাজ্যবাসীর ভোট?
এই মুহূর্তে রাজ্যের বিভিন্ন স্ট্রংরুমের পাহারায় রয়েছে ৭৮ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। এর সঙ্গে স্ট্রংরুমগুলিতে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালাতে প্রতিটি ঘরের সামনে দু’টি করে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। একটি ক্যামেরায় দরজা, অন্যটিতে সামনের বারান্দার অংশের ছবি তোলা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের কর্মী-অফিসাররা কন্ট্রোল রুমে বসে প্রতিটি স্ট্রংরুমের উপর নজরদারি চালাচ্ছেন। স্ট্রংরুমের ঘরগুলির প্রতিটি জানলা ভিতর ও বাইরে থেকে সিল করে দেওয়া হয়েছে। ঢেকে দেওয়া হয়েছে টিন দিয়ে। দরজায় তালা গালা দিয়ে সিল করা। দরজার বাইরে বসেছে অতিরিক্ত কোলাপসিবল গেট। তাতেও তালা। সিলও করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ঘরের সামনে এক জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান থাকছেন। বারান্দাতেও টহলও দিচ্ছেন তাঁরা।
স্ট্রংরুমের তালার সিল ঠিক রয়েছে কি না রোজ তা পরীক্ষা করছেন ভারপ্রাপ্ত কিছু সরকারি অফিসার। তল্লাশির ৫টি স্তর পেরিয়ে স্ট্রংরুমের দরজায় পৌঁছতে পারছেন তাঁরা। সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক তাঁদের আলাদা পরিচয়পত্রও দিয়েছেন।