ভোটের দিনে। মেমারির বামুনপাড়ার লালবাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছেন সুকান্ত কোঙার। ছবি তুলেছেন বিকাশ মশান।
বামুনপাড়ার লাল বাড়ি— এই নামেই বাড়িটাকে চেনে মেমারি শহর।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির বহু উত্থানপতনের খুব কাছের সাক্ষী এই বাড়ি। এই বাড়ির লোকেদের পদবি যে ‘কোঙার’! এই মেমারির সঙ্গে জড়িয়ে আছে খোদ হরেকৃষ্ণ কোঙারের নাম।
১৯৭৭ সাল। এ রাজ্যের রাজনৈতিক ইতিহাসের মোড় ঘোরানো সেই নির্বাচন। কংগ্রেস সরকারের পতন। এবং বামফ্রন্টের ক্ষমতা দখল। সেই ‘ঐতিহাসিক’ ভোটে এই মেমারি আসন থেকেই জিতেছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, প্রয়াত বিনয় কোঙার। তার পর থেকেই বর্ধমান জেলার এই জনপদের সঙ্গে কোঙার-বাড়ি কার্যত সমার্থক। সেই শুরু। ২০১১ সালের আগে পর্যন্ত মেমারির রাজপাট থেকেছে সিপিএমের (আরও নির্দিষ্ট ভাবে বললে কোঙার-পরিবার) হাতেই। ’৮২ থেকে !৯১ পর্যন্ত এই আসনে জয়ের হ্যাটট্রিক আছে বিনয়বাবুর স্ত্রী মহারানি কোঙারের। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জেতেন দলের প্রার্থী তাপস চট্টোপাধ্যায়। ২০০৬-এ ৫৫ হাজারের বেশি ভোটে জয়লাভ করতে সমস্যা হয়নি নতুন প্রার্থী সন্ধ্যা ভট্টাচার্যেরও।
ছবিটা বদলে গেল ২০১০ সালের পুরভোট থেকে। মেমারি পুরসভায় সিপিএমকে ১৬-০ গোল দিয়ে দিল কংগ্রেস-তৃণমূল জোট! পুরপ্রধানের কুর্সি হারালেন বিনয়বাবুর ছোট ছেলে, সিপিএমের জোনাল সম্পাদক অভিজিৎ কোঙার। তখনই বোঝা গেল পাশা ঘুরছে। অচিরেই মেমারিতে কোঙার প্রভাব কমে মাথা তুলতে শুরু করল ঘাসফুল। এর পর ২০১১ সাল। মেমারিতে সিপিএম ধুয়েমুছে সাফ।
আরও একটা ভোট বৃহস্পতিবার দেখল মেমারির এই লালবাড়ি। যে ভোট ঘিরে আশাবাদী অভিজিৎবাবু বা তাঁর দাদা সুকান্ত কোঙার। আশার কারণ, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট। গত লোকসভা ভোটের পরিসংখ্যান বলছে, হাজারের কিছু ভোটে মেমারিতে তৃণমূলের চেয়ে এগিয়ে আছে জোট। অঙ্কের হিসাবে খুবই নগণ্য। কিন্তু, এ বার জোটের বলে বলীয়ান হয়ে প্রথম থেকেই শাসকদলের ভোট লুঠের কৌশল ঠেকাতে মরিয়া ছিলেন সিপিএম নেতা-কর্মীরা।
ভোট লুঠ রুখতে মহিলারা যে বিশেষ ভূমিকা নিতে চলেছেন, তার ইঙ্গিত বুধবারই দিয়েছিলেন অভিজিৎবাবু। এ দিন ভোটের সময় সেই ছবি ধরাও পড়েছে। সকালে মেমারির তেলসারায় ১১৮ নম্বর বুথে সিপিএমের এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়। সেই এজেন্টকে বুথে ঢোকাতে গেলে অভিজিৎবাবুকে তৃণমূল কর্মীরা মারধর করেন বলে অভিযোগ। সেখানকার মহিলারাই প্রথম প্রতিরোধ করেন। বুথের সামনে চিৎকার-চেঁচামেচি জুড়ে দেন। অভিজিৎবাবুর বক্তব্য, ‘‘কংগ্রেস জমানায় সিপিএম কর্মীদের খুন, মার মানুষ দেখেছেন। কিন্তু, এখন জোট বেঁধে না তৃণমূলের সন্ত্রাস না রুখলে ছেলে বা আরও আত্মীয় হারাতে হবে। সেই জন্যই জোট চেয়েছেন সাধারণ মানুষ।’’
মোটের উপরে মেমারিতে কয়েকটি ছোটোখাটো ঘটনা ছাড়া, তেমন বড় গোলমাল হয়নি ঠিকই। তবে, এ দিন সকাল থেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে দলের এজেন্টদের শাসানি-ধমকানি শুনতে হচ্ছিল বলে অভিযোগ সুকান্তবাবুর। যিনি সারাদিনই নিজের বামুনপাড়ার বাড়ির একতলার ঘরে বসে থেকে মেমারি, পূর্বস্থলী ও কালনার ভোট পরিচালনা করছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘সেই সাড়ে ছ’টায় গিয়ে ভোট দিয়ে এসেছি। আসলে মানুষ খুব বীতশ্রদ্ধ। আমরা খুশি যে, লোকসভা নির্বাচনের মতো মানুষ ভোটদানে বাধা পাচ্ছেন না। এ বার তাঁরা কাকে ভোট দেবেন, সেটা তাঁদের ব্যপার।’’
বাড়ির সামনে দিয়ে মিছিল গেলে এখনও জোর বেড়ে যায় তাঁদের, দলেরও। মেমারি, কালনা ,মন্তেশ্বর সিপিএম জিতবে বলেও দাবি করছেন দুই ভাই।