দুই তৃণমূল নেতাকে মারধরের পাশাপাশি এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে বাম-কংগ্রেস জোটের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। রবিবার সকালে নির্বাচন শুরু হওয়ার পর মালদহের চাঁচলের শ্রীপতিপুর ও রাজনগর বুথে দুটি পৃথক ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়।
ঘটনার পরেই তৃণমূল নেতাকে মারধরের অভিযোগে শ্রীপতিপুরের ঘটনায় ব্লক কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদককে পুলিশ গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, ধৃত নেতার নাম মহবুবুল হক। তিনি খরবা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধানও। ধৃত কংগ্রেস নেতা ঘটনাস্থলে না থাকলেও তাকে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস।
উল্টে তৃণমূলের বহিরাগত কয়েকজন নেতা বুথের সামনে গিয়ে বিধি ভেঙে প্রচার চালানো-সহ ভোটারদের প্রলোভন দিচ্ছিলেন বলে পাল্টা অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস। তাতে বাধা দেওয়ায় এক কংগ্রেস কর্মীকেই তৃণমূলীরা বেধড়ক মারধর করে বলে তারাও পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছে। ওই ঘটনায় চার জনকে চাঁচল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। দুটি এলাকাতেই আধা সামরিক বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। চাঁচলের এসডিপিও রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দু’তরফেই অভিযোগ জানানো হয়েছে। গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূলের প্রহৃত ওই দুই নেতার নাম সাইমুদ্দিন শেখ ও আইনুদ্দিন শেখ। সাইমুদ্দিন খরবা অঞ্চল তৃণমূল কমিটির সভাপতি ও আইনুদ্দিন শ্রীপতিপুর বুথের এজেন্ট। তৃণমূলের অভিযোগ, এ দিন বুথে যাওয়ার সময় আইনুদ্দিনকে প্রথমে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। ফিরে যাওয়ার পর তার বাড়িতে চড়াও হয়ে আইনুদ্দিনের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকেও মারধর করা হয়। অঞ্চল সভাপতি সাইমুদ্দিন শেখ ঘটনার কথা জেনে সেখানে গেলে তাকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
কংগ্রেসের অবশ্য দাবি, তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি ওই বুথ এলাকার বাসিন্দা নন। তিনি কয়েকজন বহিরাগতকে নিয়ে বুথের বাইরে ভোটারদের প্রলোভন দেখিয়ে প্রভাবিত করছিলেন। ওই সময় কংগ্রেস কর্মীরা বাধা দেওয়ায় বেলালুদ্দিন আহমেদ নামে এক কংগ্রেস কর্মীকে বেধড়ক মারধর করা হয়। সেখানেই জোটের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ওই বহিরাগত তৃণমূল নেতাদের হাতাহাতি বেধে যায়। তারপরেও বাড়িতে চড়াও হওয়ার ঘটনা সাজিয়ে কংগ্রেস কর্মীদের ফাঁসানো হয়েছে। আবার সেখানে ঘটনার সময় ব্লক কংগ্রেসের সম্পাদক মহবুবুল হক না থাকলেও চক্রান্ত করে তাকে ফাঁসিয়ে থানায় দেখা করার কথা বলে ডেকে গ্রেফতার করা হয়।
দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে রাজনগর প্রাথমিক স্কুল বুথের সামনে। এ দিন সেখানে জোটের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের একাংশের বচসার সময় জওয়ানেরা এক সিপিএম কর্মীর গালে চড় মারেন বলে অভিযোগ। তারপরেই আলি আকবর নামে এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে চড়াও হয়ে জোটের কর্মী-সমর্থকরা ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ। কংগ্রেসের অভিযোগ, আলি আকবর নামে ওই সিভিক ভলান্টিয়ার ডিউটিতে না থাকলেও এদিন বুথের সামনে তিনি ভোটারদের তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার কথা বলে প্রভাবিত করছিলেন। তা দেখে এক সিপিএম কর্মী প্রতিবাদ করেন। কিন্তু আলি আকবর আধা সামরিক বাহিনীকে ভুল বুঝিয়ে সিপিএম নেতাকে মার খাওয়ান। কেন আলি এমন করলেন তা জানতেই তার খোঁজে বাড়িতে গেলেও ভাঙচুর চালানো হয়নি বলে কংগ্রেসের দাবি। মামলা সাজাতে নিজেরাই দু-তিনটি টালি ভেঙে দিয়েছে বলে জোটের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে।
চাঁচল-১ ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি ইন্দ্রনারায়ণ মজুমদার বলেন, জোটের বাধার মুখে পড়ে কিছু করতে না পেরে ওরা এখন আমাদের নেতা-কর্মীদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসাতে চাইছে। তৃণমূলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমানের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘ওরা আমাদের কর্মীকে বুথে ঢুকতে দেয়নি। কারা গায়ের জোরে কী করেছে তা পুলিশ তদন্ত করলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’