এসে পৌঁছয়নি গাড়ি, মাথায় হাত তৃণমূলের আমির আলির

সকাল ১০টা বেজে গিয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ায় তৃণমূলের প্রার্থী আমির আলির গাড়ি আসেনি! এই কেন্দ্রে ৭০ শতাংশের উপর সংখ্যালঘু ভোটারের কথা মাথায় রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে প্রার্থী করেছেন আমির আলিকে।

Advertisement

স্বপন সরকার

বাদুড়িয়া শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩৫
Share:

সকাল ১০টা বেজে গিয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ায় তৃণমূলের প্রার্থী আমির আলির গাড়ি আসেনি! এই কেন্দ্রে ৭০ শতাংশের উপর সংখ্যালঘু ভোটারের কথা মাথায় রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে প্রার্থী করেছেন আমির আলিকে। কিন্তু ভোটের দিন সেই প্রার্থীর গাড়ি নেই, এটা কি সম্ভব?

Advertisement

বাস্তবে তাই হয়েছে। গাড়ি আসছে না দেখে আমির আলি ভেবেছিলেন সাইকেল নিয়েই বেরোবেন। তাঁকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে আটকানো গেল ঠিকই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে গাড়ি এল তা লড়ঝড়ে মারুতি ওমনি!

তাঁর কেন এমন হাল? আমির আলির কথায়, ‘‘আমি কবিতা লিখতে ভালবাসি। সাহিত্য চর্চাও করি। ভোটের দিন সব কিছুর শেষে ভাবছি কেন নির্বাচনে লড়তে এলাম! ভালই তো ছিলাম!’’ তাঁর এই হতাশার পিছনে আসল কারণটা জানতে গিয়ে অন্য এক তথ্যের খোঁজ মিলল।

Advertisement

এলাকার তৃণমূলের একটা অংশ মনে করছে আমির আলির এই হতাশার পিছনে কাজ করছে, ‘অপমান’। যার খেসারত দিতে হয়েছে বাদুড়িয়ায় পুরো দলটাকেই। এই কেন্দ্রে প্রার্থীর দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন বাদুড়িয়ার পুর প্রধান তুষার সিংহ। কোনও কারণে তাঁর নাম কাটা যায়। কিন্তু সংখ্যালঘু এলাকার কারণে দৌড়ে এগিয়ে যান এলাকায় ‘সজ্জন’ মানুষ হিসেবে পরিচিত আমির আলি। তারপর থেকেই তিনি তুষারবাবুর ছায়ায়। ভোটের প্রচারে যা ছত্রে ছত্রে মনে করিয়ে দিয়েছে আমির আলিকে। আর তাতেই তিনি ‘অপদস্থ’ হয়েছেন বলেই মনে করছেন। এলাকায় টাঙানো ফ্লেক্সের উপরদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই তুষারবাবুর ছবি। নীচে শোভা পাচ্ছে প্রার্থী আমির আলি। অনেকটা যেন রাখতে হয় বলে প্রার্থীর ছবি রাখা! শুধু ফ্লেক্সের ছবিতেই, প্রচারেও তুষারবাবু বলেছেন, এখানে প্রার্থী তিনি নিজে। অর্থাৎ আমির আলি ভোটে লড়ছেন তুষারবাবুর প্রতিনিধি হয়েই। পুরপ্রধান তুষারবাবুও বলছেন, ‘‘আমির আলি আমার পিতৃসম। যা করেছি তা দলের জন্য। ফ্লেক্সে আমার যে ছবি টাঙানো হয়েছে, তাতে আমার কিছু করার নেই। দলের কর্মীরা যদি উৎসাহী হয়ে এই কাজ করে থাকে, তাতে আমার কী করার থাকে। আমি তো বাড়ি থেকে ছবি নিয়ে আসিনি!’’

অবশ্য দলের একাংশ বলছে, ‘‘মানুষ কিন্তু বোকা নয়। তুষারবাবু যে ভাবে নিজেকে এখানকার প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছেন, সেটা তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খাটো করারই চেষ্টা।’’ তুষারবাবুর উত্তরে আমির আলিও একই ভাবে পিতা-পুত্রের সর্ম্পকেই টেনে এনেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার ছেলে নেই। তুষারই আমার ছেলে।’’ রাজনীতিতে এমন আবেগের কতটা জায়গা আছে? বলেন, ‘‘এটা যে ব্যক্তিগত জায়গা নয় তা বুঝি। তবে আমার তো কিছু করার নেই। নির্বাচনে লড়তে এসে ফেরার জায়গা কোথায়।’’

আমির আলির প্রতিদ্বন্দ্বী দীর্ঘদিনের কংগ্রেসের বিধায়ক কাজী আব্দুর গফফর। ৯৬ বছরের এই বৃদ্ধ এখন চলার শক্তি হারিয়েছেন। কথাও ঠিক মতো বলতে পারেন না। তবুও বাদুড়িয়ায় তাঁর ছায়া সর্বত্র। এবার তাঁর ছেলে কাজী আব্দুর রহিম (দিলু) জোট প্রার্থী। এতটাই আত্মবিশ্বাসী দিলুবাবু বলছেন, ‘‘রাজ্যের শাসক দল এখানে বিরোধী শক্তি। আমরা এই ভোটকে উৎসব হিসেবেই দেখছি।’’

ভোটের আগের দিন আমির আলির কাছে রাজ্য নেতৃত্বের তরফে জানতে চাওয়া হয়েছিল কী প্রয়োজন, কোনও সমস্যা আছে কি না ইত্যাদি। দলীয় সূত্রে বলা হয়েছে, আমির আলি তাদের জানিয়েছেন, তাঁর কোনও কিছুর প্রয়োজন নেই। তখন অনেকেই তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘ভোটের দিন একটা গাড়ি প্রয়োজন, তা তো বলতে পারতেন!’’ আমির আলি বলেছিলেন, ওই নেতাদের কী একটা সামান্য জিনিস নিয়ে অভিযোগ করা যায়! পরে তিনি বলছেন, ‘‘মানুষ সব বুঝতে পারছেন। তারা বোকা না। আমাকে অপদস্থ করা হচ্ছে। ভোটের প্রয়োজনে গাড়ি পাই না।’’ এমন অবস্থা যে হবে, তা স্বপ্নেও ভাবেননি শাসক দলের এই প্রার্থী। দিনের শেষে তাঁর প্রার্থনা, ‘‘ঈশ্বর আমাকে জিতিয়ে মানুষের কাজ করার সুযোগ করে দাও’’।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement