মারের চোটে ফেটে গিয়েছে কানের পর্দা। দেখাচ্ছেন প্রিসাইডিং অফিসার জয়ন্তকুমার নন্দী। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।
সাত রাত আগে ভূতেদের ঘুঁষি খেয়ে কানের পর্দা ফেটে গিয়ে এখনও তিনি ঝিঁ ঝিঁ ডাক শোনেন। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করছেন তিনি, ‘‘ভোটের আগের রাতে হামলাকারীদের মারধরে যে যন্ত্রণা পেয়েছিলাম, তা আর কী করে বুঝবেন সাংসদ?’’ প্রশ্নকর্তা বাঁকুড়ার মালিয়াড়া পরীক্ষাপাড়া প্রাথমিক স্কুলের বুথের প্রিসাইডিং অফিসার জয়ন্তকুমার নন্দী।
আর যাঁকে নিয়ে তাঁর প্রশ্ন, তিনি বিষ্ণুপুরের তৃণমূল সাংসদ সৌমিত্র খাঁ।
শনিবারই সৌমিত্রবাবু মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘মালিয়াড়ার ঘটনা নিয়ে কেন লাগাতার খবর করা হচ্ছে?’’ তিনি ভোটকর্মীদের মারধরে অভিযুক্ত মালিয়াড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য বাপ্পা চন্দ্রাধূর্যকে ‘ভাল ছেলে’ ও ওই হামলা ‘ছোট ঘটনা’ বলে দাবি করেছিলেন। তাঁর সাফ কথা, “বাপ্পা ভাল ছেলে। ও তো পৃথিবী উল্টে দেয়নি যে গ্রেফতার করতে হবে!” রবিবার আনন্দবাজারে সাংসদের ওই মন্তব্য দেখে তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন প্রহৃত প্রিসাইডিং অফিসার। সংবাদপত্রে বাপ্পার ছবি দেখিয়ে এ দিন জয়ন্তবাবু দাবি করেন, ‘‘এই লোকটাই আমাকে ঘুঁষি মেরেছিল। আমি যখন ১০ এপ্রিল রাতে হামলার সময় কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য চাইতে স্কুলের দোতলার দিকে যাচ্ছিলাম, তখন এই লোকটাই আমাকে টেনে ফের স্কুল ঘরের বুথে টেনে নিয়ে যায়।” এরপরেই বাঁ কানে হাত ঠেকিয়ে তাঁর মন্তব্য, “ওই লোকটার ঘুঁষির চোটে এই কানের পর্দা ফেটে গিয়েছে। আর সাংসদ দাবি করছেন, সে পৃথিবী উল্টে দেয়নি!’’
জয়ন্তবাবু মনে করিয়ে দেন, ঘটনার পর বড়জোড়ার বিডিওকে তিনি পাশে পাননি। সব জেনেও
তিনি উল্টে তাঁকে ‘শারীরিক অসুস্থতার কারণে ছুটি চাই’ বলে মুচলেকা লিখিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। পুলিশও অভিযোগ নিতে চায়নি। তাঁর কথায়, ‘‘জেলাশাসক হস্তক্ষেপ না করলে আমি হয়ত অভিযোগটাই করে উঠতে পারতাম না। আর এ বার সাংসদ দোষীদের পক্ষ নিচ্ছেন। তা হলে কি আর বিচারের আশা
করা যায়?’’
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছিল, ঘটনার মূল হোতা বাপ্পা। তাঁর মতো দলের এক নিচুতলার কর্মীর কৃতকর্মের জন্য সাধারণ মানুষের কটাক্ষ হজম করতে হচ্ছে বলে অস্বস্তিতে পড়ার কথা জানাচ্ছেন স্থানীয় নেতারা। সেখানে সৌমিত্র এ দিনও নিজের অবস্থানে অনড়। ফের তিনি বলেন, “আমি এখনও বলব সে দিন বুথে তেমন কিছু ঘটেনি। বাপ্পা ভাল ছেলে।” এরপরেই সুর কিছুটা নরম করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘শিক্ষকদের মারধর করা অবশ্য ঠিক নয়।’’ ওই ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করলেও পুলিশ বাপ্পার নাগাল এ দিনও পায়নি। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘বাপ্পার খোঁজ চলছে। পূর্ব মেদিনীপুরের একটি এলাকায় শেষবার তার টাওয়ার লোকেশন মিলেছিল।”