সরকার মিথ্যে বলছে, ত্বহার তোপে নতুন অস্বস্তি

ভোটের মুখে শাসক দলের রক্তচাপ আরও এক দফা বাড়িয়ে দিলেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী। তাঁর সরকার সংখ্যালঘু উন্নয়নে ৯৯ শতাংশ কাজ করে ফেলেছে বলে হামেশাই দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৬ ০৩:১৪
Share:

মৌলালির যুবকেন্দ্রের সভায় ত্বহা সিদ্দিকি। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

ভোটের মুখে শাসক দলের রক্তচাপ আরও এক দফা বাড়িয়ে দিলেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী।

Advertisement

তাঁর সরকার সংখ্যালঘু উন্নয়নে ৯৯ শতাংশ কাজ করে ফেলেছে বলে হামেশাই দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই দাবিকে কার্যত উড়িয়ে দিয়ে ত্বহা বলেছেন, ‘‘বাংলার মুসলমান সমাজ গত পাঁচ বছরে সরকারের কাজে মর্মাহত। মুখ্যমন্ত্রী রেড রোডে দাবি করেছিলেন, সংখ্যালঘু উন্নয়নে ৯৯ শতাংশ কাজ হয়েছে। এটা মিথ্যে কথা।’’ ত্বহার কথায়, ‘‘সাইকেল নয়, কন্যাশ্রী নয়, যোগ্য মুসলিমদের কাজ চাই। বাংলার মানুষকে বলব, এলাকার বিধায়কদের কাজ দেখে ভোট দিন।’’

শনিবার কলকাতার মৌলালি যুবকেন্দ্রে এক আলোচনাসভায় যোগ দিতে এসেছিলেন পীরজাদা। অনুষ্ঠানের শেষে বাইরে বেরিয়ে তাঁর এই মন্তব্য যে ভোটের মুখে মমতার দলের পক্ষে মোটেই সুখকর নয়, সেটা মানছেন দলেরই অনেকে।

Advertisement

সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে সরকারি দাবিকে এমন চাঁছাছোলা ভাষায় নস্যাৎ করার ঘটনা অবশ্য ত্বহার নতুন নয়। এর আগে নানা সময়ে মমতা সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন তিনি। কখনও বলেছেন, হাত পেতে দান নিতে এ রাজ্যের মুসলিমরা গর্ব বোধ করেন না। কখনও বলেছেন, রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতার প্রতিশ্রুতি ছিল, রেলপথে জুড়বে ফুরফুরা শরিফ। কিন্তু সে কাজ বিশ বাঁও জলে। সেখানে যাঁরা জমি দিয়েছিলেন, তাঁদেরও চাকরি হয়নি। সংবাদমাধ্যমে ত্বহার এ সব বক্তব্য প্রকাশের পরে মুকুল রায় ছুটে গিয়েছিলেন ফুরফুরা শরিফে ক্ষোভ সামাল দিতে। তার পরেই সুর বদলে গিয়েছিল ত্বহার। এ বারও সে রকম কিছু হবে না তো?

পীরজাদা সরাসরি এই প্রশ্নের জবাব দেননি। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি এক জন ধর্মগুরু। সত্যি বলাই আমার ধর্ম। কারও পক্ষ নেওয়া বা কারও বিপক্ষে যাওয়া আমার ধর্ম নয়।’’

এ দিনও কিন্তু ত্বহার বক্তব্য টিভি চ্যানেলে সম্প্রচারিত হওয়ার পরে তড়িঘড়ি ক্ষত মেরামতে নেমেছে তৃণমূল। পীরজাদা সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন মুকুল রায় ও ফিরহাদ হাকিম। দু’জনেরই দাবি, ত্বহার বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে। মুকুল বলেন, ‘‘ত্বহার বক্তব্যের একটা অংশ দেখানো হয়েছে। তৃণমূল সরকারই সংখ্যালঘুদের জন্য যা করার করেছে— এ কথাই বলেছেন উনি।’’ আর ফিরহাদ বলেন, ‘‘আগের সরকার সংখ্যালঘুদের জন্য কিছু করেনি— এই কথাই তিনি বলেছেন বলে ত্বহা আমাকে জানিয়েছেন।’’ ফিরহাদের দাবি, ‘‘ওঁর বক্তব্য বিকৃত করার জন্য সংবাদমাধ্যমে প্রতিবাদপত্র পাঠাবেন ত্বহা।’’

অবশ্য কেবল ত্বহাই নন, সংখ্যালঘু উন্নয়নে মমতার প্রতিশ্রুতির বেশির ভাগই কাগজে-কলমে রয়ে গিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঈদেন ইমাম ক্বারী ফজলুর রহমানও। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘কিছু কাজ হয়েছে। যে বিধায়কেরা সংখ্যলঘুদের জন্য কাজ করেছেন, মানুষ তাঁদের আবার জেতাবে। কিন্তু যাঁরা করেননি, মানুষ তাঁদের ভোট দেবেন না। এটাই স্বাভাবিক।’’ ক্বারী সাহেব বলেন, ‘‘বছর চারেক আগে মুখ্যমন্ত্রী যখন রেড রোডে দাবি করেছিলেন, মুসলিমদের ৯৯ শতাংশ কাজ তিনি করে দিয়েছেন, সেটা ঠিক ছিল না। এখনও বলছি, মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতির বেশির ভাগই বাস্তবায়িত হয়নি।’’

ত্বহার এ দিনের মন্তব্যকে সমর্থন করেছেন কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। তাঁর বক্তব্য, ‘‘উনি (ত্বহা) ধর্মগুরু। প্রতি দিন হাজারো মানুষ ওঁর কাছে অভাব-যন্ত্রণার কথা বলেন। সে সব জেনেই ত্বহা সাহেবের এ দিনের মন্তব্য।’’ মান্নানের সংযোজন, মমতার সরকার যে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের নামে ভণ্ডামি করেছে, তা তো দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার। আর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কটাক্ষ, ‘‘চোখে নেই পানি, কান্দে আমার নানি!’’

সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমেরও প্রতিক্রিয়া, ‘‘ফাঁকা আওয়াজ, মিথ্যে প্রতিশ্রুতি ও ভাতা-সর্বস্ব রাজনীতির উপরে যে এই সরকার দাঁড়িয়ে আছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সামাজিক ও ধর্মীয় নেতারা তা বুঝতে পারছেন।’’

সেলিমের দলের এক সময়ের ‘কমরেড’, এ বার ভাঙড়ের তৃণমূল প্রার্থী রেজ্জাক মোল্লা ঘুরিয়ে সমালোচনাই করেছেন ত্বহার। রেজ্জাক বলেন, ‘‘শুনেছি উনি (ত্বহা) ধর্মগুরু। ওঁর তো ধর্ম নিয়েই কথা বলা উচিত। সরকার, রাজনীতি, উন্নয়ন— এ সব নিয়ে কথা বলার দরকার কী?’’ কিন্তু সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে দাবি করেন, তা কি ঠিক?

সরাসরি জবাব এড়িয়ে রেজ্জাক বলেন, ‘‘সেটা মানুষই ভাল জানে।’’ তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়ানো সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘কে কী বলছেন দেখার দরকার নেই। গ্রাম বাংলায় ঘুরলেই বোঝা যায়, মুখ্যমন্ত্রীর কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, দু’টাকা কেজি দরে চাল, পাকা রাস্তা, আলো ও জলের প্রকল্পগুলি কেমন সাড়া ফেলেছে। সংখ্যালঘুরাও তা বোঝে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement