তুফানগঞ্জে নির্বাচনী প্রচারের সভায় রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।
আর মেরেকেটে দু’সপ্তাহ বাকি ভোটের। তাই, মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচ নিয়ে উত্তরের উত্তেজনা কমতেই ডান-বাম প্রার্থীরা নেমে পড়েছিলেন প্রচারে। প্রচারের ব্যস্ততায় কারও খাওয়া হয়নি, কেউ গ্লুকোজ মেশানো জল খেয়েছেন। কারও রোদ লেগেছে, বৃষ্টিতে বিঘ্ন ঘটেছে কারও প্রচারের। একনজরে দেখে নেওয়া যাক, রবিবাসরীয় সেই প্রচারেরই নানা ঝলক।
কুলো-ঘট
শেষ চৈত্রের ভোট মিছিলে দেখা মিলল কুলো-ঘটের। রবিবার দুপুরে মাটিগাড়ার কংগ্রেস প্রার্থী শঙ্কর মালাকারের সঙ্গে জোটের মিছিল বের হয়েছিল। সঙ্গে ছিলেন শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি তাপস সরকার। ছিলেন চা বাগানের শ্রমিকেরা। অনেক মহিলা পরেছিলেন হলুদ-সাদা শাড়ি। মাথায় ঘট। বিকেলে ফুলবাড়ি-ডাবগ্রাম কেন্দ্রে বাম প্রার্থীর সমর্থনে মিছিলে দেখা গেল কুলো। এক একটি কুলোয় প্রার্থীর নামের এক একটি অক্ষর। ওই ওয়ার্ডেই চলন্তিকা কালীবাড়িতে বিকেলে পুজো দিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী গৌতম দেব। তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে বের হওযা যা মিছিলের শুরুতেও মহিলাদের হাতে কুলো ধরা ছিল। কুলোয় কন্যাশ্রী, যুবশ্রীর মতো সরকারি প্রকল্পের নাম লেখা। কুলো হাতে হাঁটতে হাঁটতে কয়েকজন মহিলা উলুধ্বনিও দিলেন।
রং বদল
রবিবারের প্রচারে কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা নাটাবাড়ি কেন্দ্রের প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের পাঞ্জাবির রং লাল। তুফানগঞ্জের অন্দরানফুলবাড়ি, ঘোগারকুঠি সহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিক সভা করেন তিনি। সাধারণত সাদা, সবুজ, নীল, হলুদ রঙের পাঞ্জাবিতে বেশি দেখা যায় তাঁকে। রবীন্দ্রনাথবাবু অবশ্য বলেন, “কোথায় লাল, এ তো খয়েরি।’’ সঙ্গে সংযোজন ‘‘তবে লাল বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পক্ষে শুভ। সিপিএমের জন্য শুধু অশুভ।” নাটাবাড়ির সিপিএম প্রার্থী তমসের আলির পাল্টা কটাক্ষ, “লাল আসছে বুঝেই তৃণমুল নেতারাও ওই রঙের পাঞ্জাবিতে ঝুঁকেছেন।” এ দিনই শিলিগুড়িতে তৃণমূলের মিছিলে ভাইচুং ভুটিয়ার পাশে দুই দলের কর্মী নজর টানেন। একজনের গায়ে তেরঙ্গা রং। অন্য জনের সারা গায়ে লাল। বুকের কাছে লেখা ‘‘লালেই বিপদ।’’
চেনা পোশাকে
প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরে প্রথম কয়েকদিন পাঞ্জাবিতে দেখা গিয়েছিল উদয়ন গুহকে। বিরোধীদের কেউ কেউ কটাক্ষ করে বলেছিলেন, দল বদলানোর সঙ্গে পোশাকও বদলেছেন উদয়নবাবু। তবে রবিবারের প্রচারে ফের চেনা পোশাকে দেখা গেল দিনহাটার তৃণমূল প্রার্থীকে। সেই শার্ট-প্যান্ট। বলেন, ‘‘প্যান্ট-শার্টই সাধারণভাবে বেশি পরি। এদিনও পরেছিলাম।’’ তাতেও অবশ্য কটাক্ষ পিছু ছাড়ছে না। বিরোধীদের টিপ্পনী, ‘‘উনি বুঝেছেন, বেশি বদল ভাল নয়।’’
রায়গঞ্জে প্রচারের মিছিলে জোট প্রার্থী মোহিত সেনগুপ্ত।—নিজস্ব চিত্র
জোটে প্রচারে
শিলিগুড়ির বাম প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্যকে সামনে রেখে সাত সকাল থেকে পাড়ায় পাড়ায় কোথাও সাইকেল র্যালি, লোকশিল্পীদের মিছিল, একাধিক পদযাত্রা তো হলই, বাদ থাকল না জোটের কর্মিসভাও। কোথাও সিপিএমের লাল পতাকা থেকেছে, কোথাও তাতে জুড়েছে কংগ্রেসের তেরঙ্গা পতাকা। অশোকবাবুর কথায়, ‘‘সর্বত্র মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিচ্ছেন। নিজেরাই মিছিলে ঢুকে যাচ্ছেন।’’
ভোটের পালা
লেকটাউনে এলেন গুপি-বাঘা। সঙ্গে হীরক রাজও। বাম প্রার্থীর সমর্থনে শিলিগুড়ির লেকটাউনে গুপি-বাঘার পালা দেখালেন গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের সদস্যরা। ঢোল-করতাল-হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান হল। গানের তালে নাচলেন গুপি-বাঘা। সুরে সুরে দাবি করলেন, রাজ্যে চলছে হীরক রাজ্য, বিপন্ন গণতন্ত্র। রবিবার ছুটির দিনে পালা গান দেখতে ভিড়ও জমল অনেক। উৎসাহিত বাম কর্মীরা জানালেন, এ বার থেকে শিলিগুড়ি জুড়েই পথ নাটিকা এবং পালাগানে প্রচার চলবে।
বৃষ্টি বিঘ্ন
রবিবার সকালের প্রচারের শুরুতেই বৃষ্টি বাদ সাধল মালদহ এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে। তবে আকাশ পরিষ্কার হতেই প্রচার শুরু করেন ডান বাম সব দলের প্রার্থীরা। ইংরেজবাজারে মিছিল করে প্রচার করেন তৃণমূল প্রার্থী তথা রাজ্যের বিদায়ী মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। ওই কেন্দ্রের জোটের নির্দল প্রার্থী নীহাররঞ্জন ঘোষ পদযাত্রা করেন। বিকেলে বৃষ্টি থামতে বালুরঘাট শহরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের খাদিমপুর এলাকায় ঢাকঢোল, শঙ্খ বাজিয়ে তৃণমূল প্রার্থী শঙ্কর চক্রবর্তী সমর্থনে মিছিল হয়। সকালে তপন বিধানসভা কেন্দ্রের জোটের রঘু ওঁরাও প্রচার শুরু করতেই বৃষ্টির মুখে পড়েন। বালুরঘাটের আরএসপি প্রার্থী বিশ্বনাথ চৌধুরী সকালে হিলি এলাকায় প্রচারের কর্মসূচি পিছিয়ে দেন। বিকেলের পরে রবিবাসরীয় প্রচারে জোর দেন হরিরামপুর থেকে কুশমন্ডির প্রার্থীরা।
খাওয়া গাড়িতেই
ভোটের আর বেশি দেরি নয়। প্রচারের দিন ফুরিয়ে আসছে। কাজের দিনে সকালে-দুপুরে সকলকে পাওয়া যায় না। তাই রবিবার ছুটির দিনে খাওয়ার সময়ও নষ্ট করার জো নেই প্রার্থীদের। এ দিন দুপুরে ইসলামপুরের গাইসাল, কালনাগিন এলাকাতে প্রচার করলেন ইসলামপুরের তৃণমূল প্রার্থী আবদুল করিম চৌধুরী। সাতসকালে না খেয়েই বেরিয়েছিলেন। কিন্তু খালি পেটে হাঁটাও যায় না। মাঝেমধ্যে শরবত চেয়ে খেয়েছেন। দুপুরে খেতে যাওয়ার সুযোগ পাননি কংগ্রেস প্রার্থী কানাইয়ালাল অগ্রবালও। চোপড়ার সিপিএম প্রার্থী এক্রামুল হক এক কর্মীর বাড়িতেই খিচুড়ি আর পাঁপর ভাজা খেয়েছেন। তবে গোয়ালপোখরের তৃণমূল প্রার্থী গোলাম রব্বানি দুপুর দেড়টা নাগাদ গাড়িতেই দুপুরের খাওয়া সেরে নেন।
সঙ্গে আছে গ্লুকোজ
দিনভর রোদে দৌড়তে হচ্ছে। তাই রোদের তাপে সতেজ থাকতে গ্লুকোজই ভরসা মালবাজার বিধানসবার সিপিএম জোট প্রার্থী অগাস্টুস কেরকেট্টার। রবিবার এ দিকে রোদের তাপ বেশিই ছিল। সকাল সকাল সাইলি চা বাগানে প্রচার চালান অগাস্টুস, পরে চলে যান তারঘেরায়। অগাস্টুসের কথায় সকালে আকাশে মেঘ ছিল না, দিনভর দাবদাহ থাকবে ধরে নিয়েই সোজা ওষুধের দোকান থেকে একটা বড় গ্লুকোজ কিনে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। যেখানেই সময় সুযোগ হয়েছে একগ্লাস জল চেয়ে নিয়েছি আর গ্লুকোজ ঢেলে মিশিয়ে খেয়ে নিয়েছি।