পাঁচ বছর বাংলায় শাসন করল তৃণমূল! তবু কুলতলিতে আজও যেন অতলে শাসক দল! নইলে ভোট-সকালে প্রার্থী কখনও নালিশ করেন নিজের দলের নামে?
সক্কাল সক্কাল দেখা মিলল তৃণমূল প্রার্থী গোপাল মাঝির। এ কথা সে কথায় শুরুতেই বেরিয়ে এল ক্ষোভের কথা— ‘‘দল আর টাকা দিল কোথায়? ও ক’টা টাকায় ভোট লড়া যায়?’’
গোপালবাবুর সেই অভাব-অনটনের ছাপ যেন কুলতলির দেওয়াল জুড়ে। গেরস্তের বাড়ি ঘর দোকানের পাঁচিল বেশির ভাগই দখলে চলে গিয়েছে সিপিএম ও এসইউসি-র দেওয়াল লিখনে। শাসক দলের ফেস্টুন পতাকাও ওদের তুলনায় সংখ্যালঘু। শনিবার ভোটের দিন বেলা যত বাড়ল আপাত দর্শনে লড়াইটাও ফুটে বেরোল ওই দুইয়ের মধ্যেই। ব্যতিক্রম নয়?
সুন্দরবন লাগোয়া কুলতলি ও জয়নগর যেন সত্যিই এ বার ব্যতিক্রম! ভোটের দিন রাজনৈতিক হিংসা, শাসক বিরোধী আকচা-আকচি, রক্তপাত এ তল্লাটের ভোটের রুটিনে বসে গেছিল! অথচ, এই প্রথম কুলতলিতে বারুদের গন্ধ নেই। রাস্তায় রক্তের দাগ নেই। লাঠি, বল্লম উঁচিয়ে একে অপরের দিকে তেড়ে যাওয়া নেই। জলপাই উর্দির কড়া পাহারায়, বরং সকাল থেকে বুথে বুথে ভিড় জমল মানুষের। বেলা ১টার মধ্যেই পঞ্চাশ শতাংশের বেশি ভোটও পড়ে গেল কম বেশি সব বুথে।
কুলতলিতে বর্তমান বিধায়ক সিপিএমের রামশঙ্কর হালদার। এ বারও তিনিই প্রার্থী। রামশঙ্কর দাবি করলেন, ‘‘কুলতলিতে এই শান্তি ফিরিয়ে আনতে প্রতি ইঞ্চিতে লড়াই করতে হয়েছে আমাদের। তাই এখন এখানে আর রক্তপাত হয় না। সারা বছরই এখানকার মানুষ শান্তিতে থাকে।’’ তৃণমূলের পাল্টা দাবি, এখানে আইনের শাসন কায়েম করেছেন দিদিই। উন্নয়নও এসেছে দিদির হাত ধরে।
সে যাক। শান্তির সেই পরিবেশেই ভোটের লড়াইটা হল শনিবার সূর্যাস্ত অবধি। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবেই বামেরা যেমন তৃণমূলকে প্রধান প্রতিপক্ষ বলে মানতে চাইলেন না। রামশঙ্কর বললেন, ‘‘ওদের তো এখানে সংগঠনই নেই।’’ আবার এসইউসি প্রার্থী জয়কৃষ্ণ হালদারের বক্তব্য, ‘‘এখানে আমাদের লড়াই সিপিএম তথা জোট প্রার্থীর সঙ্গে।’’ শুধু কুলতলি নয়, পাশের আসন জয়নগরের ছবিটাও একই রকম। সেখানকার এসইউসি প্রার্থী প্রাক্তন বিধায়ক তরুণ নস্করও মনে করছেন, আজ তাঁর লড়াই হল জোটের সঙ্গে। জয়নগরে জোট প্রার্থী কংগ্রেসের সুজিত পাটোয়ারি। স্থানীয় পুরসভা কংগ্রেসের দখলে। আবার জয়নগর ও কুলতলির পঞ্চায়েত সিপিএমের দখলে। কুলতলিরও ১৩টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৯টি সিপিএমের।
ঠিক এমনই পরিস্থিতিতে গোপালবাবু এ দিন অভিযোগ করেন, তাঁর দলের বিরুদ্ধেই। তাঁর প্রতি দলের বঞ্চনার কথা তুলে ধরেন প্রথম দর্শনেই। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, লড়াইয়ে পিছিয়ে থাকার কি এটাই কারণ? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘না তা ঠিক নয়। আমি ব্যাকফুটেও নই। বরং আমিই ভাবী বিধায়ক।’’ গোপালবাবুর গাড়ি দলীয় পতাকা লাগিয়ে এ দিন সকালে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার সময় কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। তিনি সেই সময় গাড়িতে না থাকলেও সেটি আটক করে বাহিনী। পরে রাজ্য পুলিশের হস্তক্ষেপে গাড়িটি উদ্ধার হয়। গোপালবাবু ঘটনার কথা যথারীতি অস্বীকার করে বলেছেন, ‘‘ওটা আমার গাড়ি ছিল না। কারা এই কাজ করেছে বলতে পারব না।’’
গোপাল মাঝি চরিত্রটি এখানে অপ্রাসঙ্গিক। কারণ, ‘রাজ্যের ২৯৪টি আসনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রার্থী’ বলে দিদি বারবারই বলেছেন। যদি তাই হয়, তা হলে সত্যিই ব্যতিক্রম জয়নগর ও কুলতলি!