ভূতের নেত্য, তবু আশায় বাম-কংগ্রেস

আইপিএলের মরসুম। ভোটের পরে দু’পক্ষের কাটাছেঁড়াতেও তাই ক্রিকেট হাওয়া। সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরের ১৩টি আসনে নির্বাচন হয়েছে। ভোট পড়েছে প্রায় ৮৫ শতাংশ। ভোটদানের হারে খুশি শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই। সিপিএমের এক জেলা নেতার দাবি, ‘‘জঙ্গলমহলের পরে দ্বিতীয় পর্বেও মানুষ তৃণমূলকে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়েছে!”

Advertisement

সুমন ঘোষ ও বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৬ ০১:১৪
Share:

আইপিএলের মরসুম। ভোটের পরে দু’পক্ষের কাটাছেঁড়াতেও তাই ক্রিকেট হাওয়া।

Advertisement

সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরের ১৩টি আসনে নির্বাচন হয়েছে। ভোট পড়েছে প্রায় ৮৫ শতাংশ। ভোটদানের হারে খুশি শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই। সিপিএমের এক জেলা নেতার দাবি, ‘‘জঙ্গলমহলের পরে দ্বিতীয় পর্বেও মানুষ তৃণমূলকে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়েছে!” জবাবে তৃণমূলের এক নেতা বলছেন, “এ বার মানুষ এমন বল করেছে যে ওদের তিনটি উইকেটই পড়ে গিয়েছে!”

২০১১-র ঝড়েও এই ১৩টি আসনের মধ্যে মাত্র ৪টিতে জিতেছিল তৃণমূল। বামেদের দখলে গিয়েছিল ৭টি এবং কংগ্রেস পেয়েছিল ২টি। এ বার তাই দিদি চেয়েছিলেন ১৯-০। ভাইয়েরা সেই কথা রাখতে পেরেছেন বলেই দাবি করছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের ভোট শেষ হয়েছে সোমবার। গত ৪ এপ্রিল জঙ্গলমহলের ৬টি আসনের পরে গত সোমবার ভোট হয়েছে ১৯টি বিধানসভা কেন্দ্রে। আত্মবিশ্বাসে ভরপুর শাসক শিবির মনে করছে জেলা এ বার বিরোধী শূন্য হবে!

Advertisement

তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, প্রথমত মানুষ উন্নয়নের পক্ষে রায় দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, সিপিএম বা কংগ্রেস কারও আর মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা নেই। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘প্রতিটি মানুষের গায়েই উন্নয়নের জোয়ারের ঢেউ লেগেছে। প্রতিটি সমস্যায় আমাদের দলের কর্মী-সমর্থকদের পাশে পেয়েছেন মানুষ। আর তার নিরিখেই ভোট দিয়েছেন সকলে।” তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে যতই প্রচার হোক না কেন ভোটে তার প্রভাব পড়বে না।’’

তাই শুধু কেশপুর-গড়বেতার মতো কেন্দ্র নয়, প্রদেশ কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার খাসতালুক সবং, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের গড় নারায়াণগড়, এমনকী খড়্গপুর সদরের দীর্ঘদিনের বিধায়ক জ্ঞানসিংহ সোহন পালের তালুকে মাথা তোলার স্বপ্ন দেখছে ঘাসফুল। সবংয়ের ক্ষেত্রে তৃণমূল জেলা নেতাদের আশা, বাম-কংগ্রেস জোট সেখানে অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। তা ছা়ড়া, ভোটের ঠিক আগে তৃণমূল কর্মী জয়দেব জানা খুনে বাম-কংগ্রেস কর্মীদের নাম জড়ানো জোটের বিপক্ষে যাবে। আর খড়্গপুরে তৃণমূলের ভরসা বিজেপি কংগ্রেসের বেশি ভোট কাটবে। তাতে আখেরে লাভ হবে তৃণমূলের। তবে তৃণমূলের অন্দরেই একাংশ মনে করছে, সবং ও খড়্গপুর সদর এ বারও হাতছাড়া হবে। দলের এক নেতার কথায়, “অনেক অঙ্কই কাজ করতে পারে, আবার না-ও পারে। তবে এই দু’টি আসন বাদে বাকি ১৭টিতে দল জিতবে বলেই আশা।’’

অন্য দিকে, ভোটের পরে প্রাথমিক পর্যালোচনায় সিপিএম মনে করছে, তিনটি আসনে তাদের জয় নিশ্চিত। বুথ-ফেরত এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে দলের জেলা নেতারা মনে করছেন, নারায়ণগড়, খড়্গপুর গ্রামীণ এবং ডেবরা— এই তিনটি আসন তাঁদের দখলে আসবে। তিনটি আসনেই অবশ্য লোকসভার হিসেবে পিছিয়ে আছে সিপিএম। তবু দলের এক জেলা নেতা বলেন, “ব্যবধান খুব বেশি না হলেও এই তিনটি আসনে আমরা জিতছি।’’ তবে কোনও সংখ্যা শোনাননি সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায়, তিনি বলেন, “ফল ভালই হবে। লড়াই হবে। আমরা ভাল জায়গাতেই আছি।’’

দাসপুর, ঘাটাল এবং পিংলা নিয়েও আশাবাদী বামেরা। ওই নেতার কথায়, “এই তিনটি বিধানসভা এলাকার বেশ কিছু বুথে গোলমাল হয়েছে। তৃণমূলের লোকেরা ছাপ্পা ভোটও দিয়েছে। তবে ভোট- পরবর্তী হিসেব করতে বসে আমরা দেখছি, যে সংখ্যক বুথে গোলমাল হয়েছে, তা শতাংশের নিরিখে সামান্যই! ওই বুথগুলোর ৭০-৮০ শতাংশ ভোট তৃণমূল পেলেও তা আমাদের জয়ের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে না।’’ তা ছাড়া, তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল এই আসনগুলোয় জয় পেতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন জেলা সিপিএমের নেতা। আর সবং, খড়্গপুর কংগ্রেসের দখলে থাকবে বলে ধরেই নিচ্ছে বামেরা।

সোমবার নারায়ণগড়ের বেশ কিছু এলাকায় গিয়ে তৃণমূলের লোকেদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তাও কী ভাবে নারায়ণগড় জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী সিপিএম? দলের এক নেতা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, “বিক্ষোভের মুখে পড়তে হতে পারে বুঝেও সূর্যবাবু সুকৌশলে ওই সব এলাকায় গিয়েছিলেন।’’ তাঁর যুক্তি, যে সব এলাকায় তৃণমূল ভোট লুঠ করবে বলে আশঙ্কা বেশি ছিল, সূর্যবাবু সেই সব এলাকাতেই গিয়েছেন। ফলে, অবাধ ছাপ্পা এড়ানো গিয়েছে।

খড়্গপুর গ্রামীণে এ বার তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়। সিপিএমের এক জেলা নেতার বক্তব্য, “এই এলাকাতেও তৃণমূলের লোকেরা ভোট লুঠ করেছে। ৩- ৪টি অঞ্চলের ১২- ১৫টি বুথে অবাধে ছাপ্পা মেরেছে। তবু আমাদের জয় আটকাবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement