প্রচারের শেষ বেলায় ধাক্কা শাসকদলের

জঙ্গলমহলে প্রচারের শেষ বেলায় মুখ পুড়ল শাসকদলের। রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক শুভেন্দু অধিকারীর সভায় লোক ভরাতে ব্যর্থ হল তৃণমূল। সভাস্থলে লোক না হওয়ায় শনিবার গোপীবল্লভপুর বিধানসভার অন্তর্গত ঝাড়গ্রামের লোধাশুলি চকে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক মুম্বই রোডের ধারে দলের ঝাড়গ্রাম ব্লক কার্যালয়ে প্রায় ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করতে হয় শুভেন্দুকে।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

লোধাশুলি শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:০৮
Share:

হাতে গোনা শ্রোতার সামনে বক্তব্য রাখছেন শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

জঙ্গলমহলে প্রচারের শেষ বেলায় মুখ পুড়ল শাসকদলের। রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক শুভেন্দু অধিকারীর সভায় লোক ভরাতে ব্যর্থ হল তৃণমূল। সভাস্থলে লোক না হওয়ায় শনিবার গোপীবল্লভপুর বিধানসভার অন্তর্গত ঝাড়গ্রামের লোধাশুলি চকে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক মুম্বই রোডের ধারে দলের ঝাড়গ্রাম ব্লক কার্যালয়ে প্রায় ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করতে হয় শুভেন্দুকে। তা সত্ত্বেও লোধাশুলি মার্কেট কমপ্লেক্সের সভাস্থলে মেরে কেটে শ’খানেক লোকজনের বেশি জোটাতে পারেননি তৃণমূল কর্মীরা। শেষ পর্যন্ত ‘কর্মসূচির বাইরে’ এলাকার লোকজনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন বলে অস্বস্তি এড়ান তমলুকের সাংসদ।

Advertisement

গোপীবল্লভপুরের দলীয় প্রার্থী চূড়ামণি মাহাতোর সমর্থনে মিনিট সাতেক বক্তৃতা দিয়ে নারায়ণগড়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেন শুভেন্দু। ভোটের আগে অস্বস্তিতে পড়ে গিয়ে শাসক দলের নেতারা এখন পরস্পর বিরোধী ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা।

তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা বিদায়ী বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতো এবারও গোপীবল্লভপুর আসনে শাসকদলের প্রার্থী হয়েছেন। শনিবার প্রচারের শেষ দিনের সকালে এলাকায় একাধিক মিছিলের আয়োজন করা হয়। এ দিন দুপুরে গোপীবল্লভপুর বিধানসভার অন্তর্গত ঝাড়গ্রাম ব্লকের লোধাশুলি বাজার এলাকায় একটি ছোট সভার আয়োজন করা হয়। তৃণমূল সূত্রের খবর, সভায় শুভেন্দুকে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান চূড়ামণিবাবু।

Advertisement

শুক্রবার শুভেন্দু জানিয়ে দেন, নারায়ণগড়ের সভায় যাওয়ার আগে তিনি লোধাশুলির সভায় যোগ দেবেন। রোদের তাপ থেকে বাঁচার জন্য লোধাশুলি মার্কেট কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণটি সভাস্থলের জন্য বেছে নেওয়া হয়। তৃণমূল সূত্রের দাবি, ওই শেডের তলায় ও আশেপাশে ঠাসাঠাসি হাজার খানেক লোক ধরানোর মতো পরিস্থিতি ছিল। দুপুর দু’টো নাগাদ সেখানে পৌঁছে দেখা যায়, মঞ্চে ঝুমুর গান পরিবেশন করছেন এক ঝুমুরশিল্পী। মঞ্চে পাশাপাশি দু’টি চেয়ারে বসেছিলেন চূড়ামণিবাবু ও তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট বিকাশ মাহাতো। ঝাড়গ্রাম থেকে এসেছিলেন তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মী। আর সভাস্থলে হাতে হাতে গোনা গোটা দশ-বারোজন বসেছিলেন। দুপুর আড়াইটে নাগাদ পাঁচটি গাড়ির কনভয় নিয়ে লোধাশুলিতে এসে পৌঁছন শুভেন্দু। সভাস্থলে লোক হয়নি খবর পেয়ে জাতীয় সড়কের ধারে দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন তিনি।

শুভেন্দু আসায় গোপীবল্লভপুর বিধানসভা ও ঝাড়গ্রাম বিধানসভা এলাকার কিছু তৃণমূল কর্মী দলীয় কার্যালয়ে এসে ভিড় করেন। কিন্তু সভাস্থলে লোক না হওয়ায় শুরু হয় গুঞ্জন। তৃণমূল সূত্রের খবর, দলীয় কার্যালয়ে বসে চা-বিস্কুট খান শুভেন্দু। দলীয় সূত্রের খবর, চা পানের ফাঁকে দৃশ্যতই বিরক্ত শুভেন্দু জানিয়ে দেন, তাঁর নামে এক ঘন্টার নোটিসে পাঁচ হাজার লোক জড়ো হয়ে যায়। তাহলে কেন এদিন লোক জমায়েত হয়নি সেই প্রশ্ন তোলেন শুভেন্দু।

সূত্রের খবর, লোক না হওয়ায় শুভেন্দু ফিরে যাবেন ঠিক করেন। কিন্তু দলীয় কার্যালয়ের বাইরে মিডিয়ার লোকজন দাঁড়িয়ে আছে শুনে সিদ্ধান্ত বদলান। সাড়ে তিনটে নাগাদ কার্যালয় থেকে মঞ্চে ওঠেন শুভেন্দু। সভাস্থলে তখন শ’খানেক লোকজন। তার মধ্যে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি ও আশেপাশের বাড়ির মহিলা। চূড়ামণিবাবুকে পাশে নিয়ে শুভেন্দু বলেন, “আপনাদের সঙ্গে একবার মিলিত হওয়ার জন্য চূড়ামণিবাবু আমাকে অনুরোধ করেছিলেন। সেই অনুরোধ রক্ষা করে আমার কর্মসূচির বাইরে এসেছি।” তিনি জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে তিন জন মাওবাদীদের হাতে খুন হন। তারপর মাওবাদীরা আর একটাও খুন করতে পারেনি।

বাম-কংগ্রেস জোট ও বিজেপি-র সমালোচনা করেন শুভেন্দু। শুভেন্দুর সভায় লোক না হওয়ার প্রসঙ্গে চূড়ামণিবাবুর ব্যাখ্যা, “প্রচারের শেষ বেলায় প্রতিটা বুথে কর্মীরা মাটি কামড়ে ছিলেন। তারপর রোদের যা তাপ। সেই জন্যই লোক কম হয়েছিল।” ঝাড়গ্রাম ব্লক তৃণমূলের সভাপতি অনিল মণ্ডল বলেন, “শুভেন্দুবাবু অনেকদিন পরে এলাকাবাসীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। ওটা ঠিক সভা নয়, ওটা ঘরোয়া আলোচনাসভা।”

সিপিএমের প্রদীপ সরকার, কংগ্রেসের সুব্রত ভট্টাচার্য থেকে ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর চুনিবালা হাঁসদাদের কটাক্ষ, “জঙ্গলমহলে শেষের শুরুটাই এদিন দেখে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেনাপতি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement