বিভিন্ন নির্বাচনে দেখা যায়, রাজনৈতিক দলের লোকেরাই ভোটারদের বাড়ি থেকে নিয়ে আসছেন। এ বার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ, বাড়ি থেকে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনে উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে পুলিশ ও সাধারণ পর্যবেক্ষকদেরই।
বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফার দুই পর্বে আগামী ৪ এবং ১১ এপ্রিল ভোট হবে পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও বর্ধমান জেলায়। তার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে ওই সব জেলার পুলিশ, সাধারণ পর্যবেক্ষক ও হিসেব-পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে বুধবার ভিডিও কনফারেন্স করেন উপনির্বাচন কমিশনার সন্দীপ সাক্সেনা। সেখানেই তিনি জানিয়ে দেন, ভোটকেন্দ্রে যেতে কোনও ভোটার যদি ভয় পান এবং তাঁর বা তাঁদের ভয় পাওয়ার যদি কারণ থাকে, কমিশনকে সেটা জানালে তাঁদের বুথে পৌঁছে দেওয়ার জন্য উপযুক্ত বন্দোবস্ত করতে হবে।
এ রাজ্যের বিভিন্ন নির্বাচনে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, কোনও কোনও এলাকায় ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা পান ভোটারেরা। কিংবা আগেই তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়, যাতে তাঁরা আদৌ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না-যান। ভোটকেন্দ্র এবং আশপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই গ্রামের মধ্যে তেমন আঁটোসাঁটো সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকে না। ফলে অনেক সময়েই বিভিন্ন দলের কর্মীদের হুমকির মুখে পড়তে হয় ভোটারদের। কুঁকড়ে যান তাঁরা।
রাজ্যে বিধানসভার ভোট ঘোষণার দিনেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী তো তিন দিনের জন্য! ভোটটা হয়ে গেলে চলে যাবে। তার পরে তো আমাদেরই দেখতে হবে।’’ কম যান না তাঁর দলের সেনানীরাও। কয়েক দিন আগে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল দলীয় বৈঠকে বলেছেন, ‘‘যদি দেখেন পাঁচ-সাতটা বাড়ি ভোট দেবে না, তা হলে তাদের ভোট দিতে যাওয়ার দরকার নেই।’’ দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে তাঁর আরও নির্দেশ ছিল, ‘‘ভোটের পাঁচ দিন আগে প্রতিটি গ্রামে যে-ভাবে (অপারেশন) চালিয়ে আসেন, সেই ভাবেই চালিয়ে আসবেন।’’ বিরোধীদের অভিযোগ, মমতা এবং অনুব্রতদের এই ধরনের উক্তি ভোটারদের হুমকি দেওয়া বা ভয় দেখানোরই সামিল।
চলতি মাসের মাঝামাঝি নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ কলকাতায় এসেছিল। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী আশ্বাস দেন, ভয় দেখিয়ে ভোটারদের ভোটদানে বিরত করার চেষ্টা করলে কমিশন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। ভোটারেরা চাইলে কমিশন তাঁদের নিরাপত্তা দিয়ে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাবে। এ দিনের ভিডিও কনফারেন্সে উপনির্বাচন কমিশনার সংশ্লিষ্ট অফিসারদের এই বিষয়টি আবার মনে করিয়ে দিয়েছেন।
সাক্সেনা এ দিন পুলিশ ও সাধারণ পর্যবেক্ষকদের নির্দেশ দেন, প্রচার শেষের পরে অর্থাৎ ভোট শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকে সব এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে। ওই সময়ে প্রার্থীদের খরচের উপরেও কড়া নজর রাখতে বলেছেন তিনি। কমিশন চায়, ভোটকেন্দ্র এবং সংলগ্ন যত বেশি এলাকায় সম্ভব, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে প্রত্যক্ষ ভাবে ব্যবহার করা হোক।