কথা ছিল, জিতলে এলাকার ছবি বদলে যাবে। রাস্তা হবে, পিচ ঢালা পথে ঝলমল করবে আলো। কল খুললেই জল পাবেন বাসিন্দারা। যেমনটা নাকি পুরসভা এলাকায় হয়। রাস্তার মোড়ে মোড়ে বাঁধানো কংক্রিটের চাতালে আম জনতার জন্য ট্যাপ কল থাকবে।
বিদায়ী বিধায়ক তৃণমূলের মঞ্জু বসুর কাছে বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিল, বছর ভর নালায় জমা নোংরা জল থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। বাড়িতে টেকা দায় হয়। এলাকার একটি হস্টেলের সেফটি ট্যাঙ্ক থেকে বেরনো আবর্জনাও ওই নিকাশি নালায় ভাসে। এর থেকে রেহাই মিলবে বলেও মঞ্জুদেবী আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু পাঁচ বছরে সেই আশ্বাসের প্রতিফলন চোখে না পড়ায় বাসিন্দারা হতাশ। হাতে গোনা কয়েকটা দিন পরেই ফের ভোট। উত্তর ২৪ পরগনার নোয়াপাড়া বিধানসভার দু’টি পঞ্চায়েত শিউলি আর মোহনপুর এখন বিরোধীদের বড় ঘাঁটি। জিতলে এই দুই পঞ্চায়েতই যে তাঁদের উত্তরণের ধাপ হবে তা বুঝে গিয়েছেন জোট ও বিজেপি প্রার্থীরা। তাই এই দুই পঞ্চায়েতের বিভিন্ন পাড়ায় প্রত্যেকদিনই পালা করে সভা করছেন তাঁরা।
একে এলাকার মানুষকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন না করার অভিযোগ, তার উপর শিউলি পঞ্চায়েতে উন্নয়নের তহবিল থেকে টাকার বাঁটোয়ারা নিয়ে নিজেদের মধ্যে অশান্তিতে ১৪জন তৃণমূল সদস্যই সম্প্রতি অনাস্থা এনেছিলেন দলের পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে। ভোট বাজারে দলের উপরতলা থেকে চাপ আসায় তা ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু জনগণের অপ্রাপ্তি আর দলীয় অসন্তোষ এই দু’টি কাঁটা যে তাঁদের প্রার্থীকে ভোগাবে তা নিয়ে একমত তৃণমূলের একাংশ।
রাজ্যের অন্যতম বড় সরকারি বাসের ডিপো এই পঞ্চায়েত এলাকায় বিড়লা গেটে। এলাকার বড় মাঠটিও এখানে। মাঠের পাশে সুকান্ত পল্লি। বাসিন্দারা জানান, বাম আমলে জ্যোতিবাবু এখানে হেলিকপ্টারে চেপে সভা করতে এসেছিলেন। ফুটবলের জন্য বিখ্যাত এই মাঠে বহু নামী খেলোয়াড়ের পা পড়েছে। গত দশ বছরে বিদায়ী বিধায়কের আমলে খেলার মাঠের উন্নয়ন কিছুই হয়নি। অথচ স্থানীয় ফুটবল প্রেমীদের দাবি ছিল, মাঠ সংস্কার করা হোক। বিশেষত, রাজ্য জুড়ে খন ত্রিফলার রমরমা, প্রতিটা বিদ্যুৎস্তম্ভে জড়ানো নীল-সাদা আলোর মালা তখন মাঠে আলোর জন্য একটি টিউব লাইটও লাগানো হয়নি। ফলে রাতে অন্ধকারের সুযোগে যাবতীয় দুষ্কর্মের আখড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মাঠ, এমনটাই বাসিন্দাদের অভিযোগ। তাঁদের আরও অভিযোগ, শাসক দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা এই দুষ্কৃতীরা এতটাই বেপরোয়া যে প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও লাভ হয় না। ফলে এলাকাবাসীদেরই আতঙ্কে থাকতে হয়। ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামী বলেন, ‘‘সমস্ত এলাকাতেই প্রশাসনিক নজরদারি রয়েছে। ভোট শেষ হয়ে যাওয়ার পরে পুলিশকে বলব ওই এলাকায় নজর রাখতে যাতে কোনও অসামাজিক কাজ না হয়।’’
আগের পাঁচ বছরে এলাকার প্রধান মাটির রাস্তার কিছুটা ঢালাই করা হয়েছিল। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই রাস্তার বিভিন্ন জায়গা ভেঙে গিয়েছে। নিম্নমানের মালপত্র ব্যবহারেই এরকম হয়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। রাস্তার ধারের পুকুরে বাম আমলে পাঁচিল দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু তা আজও অসম্পূর্ণই থেকে গিয়েছে। নিকাশি নালার অধিকাংশই কাঁচা। যা বেশিরভাগ সময়েই আবর্জনায় ভরে থাকে। বৃষ্টি হলে সেই ময়লা রাস্তায় উপচে অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে দাঁড়ায়। এলাকায় বিধায়ককে শেষ কবে দেখা গিয়েছে, তা মনে করতে পারেন না বাসিন্দারাই।
জোট প্রার্থী মধুসূদন ঘোষের কথায়, ‘‘পরিকল্পনামাফিক চললে এই এলাকা রাজ্যের সবকটি পঞ্চায়েতের মধ্যে মডেল হতে পারত। অথচ এখানেই অনুন্নয়ন।’’ আশপাশের এলাকায় পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে গেলেও এখানে এখনও পাইপ লাইনই ঢোকেনি। সুকান্তপল্লিতে ঢোকার মূল রাস্তা দখল হয়ে গিয়েছে ঘন বসতির চাপে। রাস্তার উপরেই বাড়ির দেওয়াল উঠেছে নিয়ম ভেঙে। আইনের তোয়াক্কা না করেই জলা বুজিয়ে তৈরি হয়েছে বাড়ি। বিজেপি প্রার্থী অমিয় সরকারের প্রচারেও এসেছে অনুন্নয়নের প্রসঙ্গ। জিতলে উন্নয়ন নিয়ে এলাকার মানুষের যাবতীয় অপ্রাপ্তি যে থাকবে না তারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী।
কি বলছেন বিদায়ী বিধায়ক তথা শাসক দলের প্রার্থী?
মঞ্জুদেবীর কথায়, ‘‘কাজ তো সব সময়ই থাকবে। কিছু কাজ হয়েছে, কিছু বাকি আছে। সব হবে। তবে সবুর করতে হবে।’’