পাশে আছি। এক বৃদ্ধা ভোটারকে বুথে নিয়ে আসছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ান। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।
দিনের শেষে শাসক ও বিরোধী উভয়েরই দাবি, ‘মানুষ ভোট দিতে পেরেছেন’। এটাই ছিল শনিবার টালিগঞ্জের ভোট-চিত্র। বিভিন্ন বুথের সামনে সমর্থক-কর্মীদের জটলা ঘিরে শাসক ও বিরোধীর চাপানউতোর থাকলেও পুলিশ, জওয়ানদের তৎপরতায় কোনও জায়গাতেই জটলা দানা বাঁধতে পারেনি।
টালিগঞ্জের কলাবাগান, আনন্দপল্লি, সাহাপাড়া, পূর্ব পুঁটিয়ারি, কংগ্রেসপল্লি, ঢালিপাড়া, রায়নগর, ব্রহ্মপুর, আতাবাগান, কামডহরি-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বুথের সামনে শাসক দলের কর্মীদের জটলার খবর পাওয়া যায় দিনভর। কিন্তু ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা যায় পুলিশ ও জওয়ানেরা তাড়া করে ভিড় হটিয়ে দিচ্ছেন।
গত পুরভোটে বাঁশদ্রোণীর চাকদহ স্কুল, খানপুর স্কুল, বিজয়গড়ের পল্লিশ্রী, অশ্বিনীনগর, সমাজগড়ের মতো এলাকায় শাসকদের বিরুদ্ধে ভোট লুঠের অভিযোগ করেছিলেন বিরোধীরা। এ বার সেই সব এলাকাতেও গিয়ে দেখা যায়, জওয়ানদের সহায়তায় ভোটাররা ভোট দিচ্ছেন নির্বিঘ্নে। বুথের কয়েকশো মিটারের মধ্যেও ছিলেন না কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মী।
বিজয়গড়ের খাস্তগীর স্কুলের সামনে জনা কয়েক শাসক দলের সমর্থক জড়ো হয়েছেন খবর পেয়েই সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ সেখানে হাজির হন টালিগঞ্জের সিপিএম প্রার্থী মধুজা সেনরায়। পৌঁছন এলাকার তৃণমূল নেতা তথা কলকাতা পুরসভার ১০ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তপন দাশগুপ্তও। মধুজাদেবী তপনবাবুকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘আপনি কে? আমি তো প্রার্থী?’’ শুনেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন তপনবাবু। তাঁর সঙ্গে থাকা তৃণমূল কর্মীরাও ঘিরে ধরেন মধুজাদেবীকে। পাল্টা উত্তেজিত হয়ে পড়েন মধুজাদেবীর সঙ্গে থাকা সিপিএমের কর্মীরাও। শুরু হয় বাগবিতণ্ডা। কিন্তু পুলিশ ও জওয়ানরা হাজির হতেই নীরবে সরে যায় দু’পক্ষই।
সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ পূর্ব পুঁটিয়ারির গঙ্গাপুরী স্কুলের একটি কেন্দ্রে ভোট দিতে যান সিপিএম-এর প্রাক্তন কাউন্সিলর অমল মিত্র। তিনি অভিযোগ করেন, বুথের দায়িত্বে থাকা ভোটকর্মীরা কোনও ভোটারের পরিচয়পত্র বা ভোটার স্লিপ দেখছেন না। বুথেই এক ভোটকর্মী শাসক দলের প্রার্থীর হয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করছিলেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন। পুলিশ এবং জওয়ানেদের হস্তক্ষেপে অবশ্য সেই সমস্যাও মিটে যায়।
গড়িয়ার সিপিএম নেতা এবং কাউন্সিলর চয়ন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সকাল থেকেই শাসক দলের কর্মীরা বুথের সামনে জটলা করে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন, জওয়ান এবং পুলিশের তৎপরতায় সেই চেষ্টা সফল হয়নি।’’ দিনের শেষে সিপিএম প্রার্থী মধুজা সেনরায়ের বক্তব্য, ‘‘শাসকের প্ররোচনা উপেক্ষা করে মানুষ ভোট দিতে পারায় আমি খুশি।’’ বিধানসভার কোনও এলাকাতেই এ দিন দেখা যায়নি তৃণমূল প্রার্থী অরূপ বিশ্বাসকে। ভোটপর্ব মিটে যাওয়ার পরে অরূপবাবু অবশ্য ফোনে বলেন, ‘‘মানুষ ভোট দিতে পেরেছেন। এটাই বড় বিষয়।’’