বরাহনগর ও পানিহাটি

নিজেদের ভোট নিজেরা দিয়ে খুশি বাসিন্দারা

সকাল থেকে তেমন বড় কোনও অভিযোগ না থাকলেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে গোটা দিনই এক চোরাস্রোত বয়ে গেল উত্তর ২৪ পরগনার বরাহনগর বিধানসভা কেন্দ্রে।

Advertisement

মধুরিমা দত্ত

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৬ ০১:০২
Share:

বুথ-পাহারা। ‘কেন্দ্রীয় বাহিনী’র খুদে সদস্য। সোমবার, বরাহনগরে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

সকাল থেকে তেমন বড় কোনও অভিযোগ না থাকলেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে গোটা দিনই এক চোরাস্রোত বয়ে গেল উত্তর ২৪ পরগনার বরাহনগর বিধানসভা কেন্দ্রে। পাশের দুই কেন্দ্র কামারহাটি এবং পানিহাটিতে থেকে থেকেই যখন দলীয় কোন্দল এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর অতিসক্রিয়তার অভিযোগ উঠছে, ঠিক তখনই বরাহনগরে ভোট-প্রক্রিয়া নিয়ে আশাবাদী তৃণমূল প্রার্থী তাপস রায়। বললেন, ‘‘মানুষ ভোট দিচ্ছেন। সকাল থেকে লম্বা লাইন। এর পরে আর বুঝিয়ে দিতে হয় না, হাওয়া কোন দিকে।’’

Advertisement

সোমবার পঞ্চম দফার নির্বাচনে সকাল সওয়া দশটা নাগাদ বরাহনগরের লেকভিউ অভিযান সঙ্ঘের সামনে পুরসভার চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিককে পাশে নিয়ে তাপসবাবু বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী নির্দেশ মতো ভালই কাজ করছে, কিন্তু কিছু জায়গায় ওরা এক্তিয়ার অতিক্রম করে ফেলছে। ওরা ওদের কাজ করুক, আমরাও ঠিক সময়মতো ব্যবস্থা নেব।’’

দীর্ঘ দিন ধরে বামেদের দখলে থাকা এই বরাহনগর কেন্দ্র উন্নয়নের মুখ দেখেছে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে— এমনটাই দাবি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের। এ বারও সাধারণের রায় যে তাঁদেরই ঝুলিতে, তা নিয়ে প্রবল আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে ভোটে জেতাকেই একমাত্র লক্ষ্য বলে মানতে চাইছেন না স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর অঞ্জন পাল। তিনি বলেন, ‘‘আমরা উন্নয়নের কাজ করেছি। মানুষ এ বার নিজেরা নির্বাচন করুন। জনগণের উপরে আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে।’’

Advertisement

অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ ভোট নিয়ে সকাল থেকে সন্তুষ্ট থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই শাসকদলের বিরুদ্ধে বহিরাগতদের জড়ো করে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ তোলেন বরাহনগরের আরএসপি প্রার্থী সুকুমার ঘোষ। সেই অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন তাপস রায়ের মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট দিলীপনারায়ণ বসু। ‘‘মানুষ নিজেদের ভোট নিজেরা দিচ্ছেন। ওঁদের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পাচ্ছি। আমাদের আর কোনও চাপই নেই,’’ বলেন দিলীপবাবু।

বরাহনগরের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই শান্তিপূর্ণ ভোটের পথেই এগোচ্ছিল পানিহাটি। কিন্তু বেলা বাড়তেই টুকরো টুকরো অভিযোগ আসতে থাকে। বেলা আড়াইটে নাগাদ পানিহাটির বিজেপি প্রার্থী দীপক কুণ্ডুর মেয়ে সঙ্গীতা কুণ্ডু ভোট দিতে আসেন সোদপুর নবোদয় ইনস্টিটিউটে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি অন্য বুথের এজেন্ট। ওই বুথে ভোট দেওয়ার পরেও তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে ‘ভোট পরিচালনা’ করছিলেন। এই নিয়ে তাঁর সঙ্গে বচসা বেধে যায় তৃণমূল কর্মীদের। সঙ্গীতার গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ বিজেপি নেতৃত্বের। স্থানীয় তৃণমূল নেতা পার্থ দাস গোলমাল থামাতে গেলে কেন্দ্রীয় বাহিনী তাঁকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। পরে কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে এলাকা ফাঁকা করে দেয়।

ছোটখাটো এমন দু’একটি ঘটনা ছাড়া ভোট-প্রক্রিয়ায় সন্ত্রাস বা হামলার বড় অভিযোগ আনতে পারেনি শাসক বা বিরোধী— কোনও শিবিরই। কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে পানিহাটির তৃণমূল প্রার্থী নির্মল ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় কোথাও তৃণমূল বা সিপিএমের কোনও অতিরিক্ত লোক বুথে নেই। তা সত্ত্বেও ক্যাম্প অফিসে ঢুকে পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী যে ভাবে পেটাচ্ছে, সেটা অমানবিক।’’ এ দিন উত্তর ২৪ পরগনার জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক তথা প্রার্থী নির্মলবাবুকেও বুথে ঢুকতে গিয়ে বাধা পেতে হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাছে। নির্মলবাবুর দাবি, সচিত্র প্রার্থী পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় বাহিনী তাঁর কাছে ভোটার কার্ড দেখতে চায়। তিনি বলেন, ‘‘প্রার্থী পরিচয় পত্রের পিছনে ভোটার কার্ডটিও রেখে দিয়েছিলাম। পাছে অযথা ঝামেলা না করে।’’ আগরপাড়া, শক্তিপুর, ইলিয়াস রোড, মহাজাতির বিভিন্ন এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী এজেন্টদের খাবার ফেলে দিয়ে মারধর চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন নির্মলবাবু। বিরোধীদের বিরুদ্ধে কয়েকটি বুথ লুঠের অভিযোগ করলেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকার সামগ্রিক প্রশংসাই করেছেন পানিহাটির জোট প্রার্থী, কংগ্রেসের সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement