ভোট মিটে গেলে কত ধানে কত চাল, তা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেবেন বলে সিপিএমকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ সেই হুঁশিয়ারির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে নালিশ জানালেন সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্ব। দাবি জানালেন, কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে রাজীব কুমারের অপসারণের।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদীর কাছে গিয়ে সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি ও নীলোৎপল বসু এ দিন দাবি করেন, তৃণমূল নেত্রী জনসভায় বিরোধীদের হুমকি দিচ্ছেন। নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি ভাঙছেন। শাসক দলের চোখরাঙানির মুখে মানুষ যাতে আতঙ্কিত না হন, প্রশাসনের কর্তারা নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে পারেন— তার জন্য কমিশনের তরফে সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। তাতে রাজ্যের ভোটাররা আশ্বস্ত হবেন যে, পশ্চিমবঙ্গে অবাধ ভোট করাতে কমিশন বদ্ধপরিকর।
দু’দিন আগে বাঁকুড়ার তালড্যাংরায় এক সভায় তৃণমূল নেত্রী অভিযোগ তোলেন, ভোট ঘোষণা হওয়ার পরে তাঁদের দলের ন’জন কর্মীকে সিপিএম খুন করেছে। এর পরেই মন্তব্য করেন, ‘‘নির্বাচন তো এক মাস বাদে ফুরিয়ে যাবে। আর আমরাই থাকব মাঠে। আমরাই থাকব রাস্তায়। কত ধানে কত চাল, কড়ায় গন্ডায়, ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেব।’’ মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যকেই বিরোধীদের প্রতি খোলাখুলি হুঁশিয়ারি হিসেবে কমিশনের সামনে পেশ করেছেন সিপিএম নেতারা। জৈদীকে তাঁরা জানান, এর আগে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধেও একই ভাবে অভিযোগ জানিয়েছিল সিপিএম। দাবি করেছিলেন, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা করছেন এই সব নেতানেত্রীরা। এ জন্য যে সব বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট আসন্ন শুধু সেখানেই নয়, কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহলদারি চলুক গোটা রাজ্য জুড়েই।
শাসক দলের চোখরাঙানির মধ্যেও যে সব আমলা ও পুলিশ অফিসার স্বাধীন ভাবে কাজ করছেন, তাঁদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছে বলেও আজ কমিশনের কাছে অভিযোগ তোলেন সিপিএম নেতারা। যুক্তি দেওয়া হয়, ওই সব অফিসাররা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ ঠিকমতো কার্যকর করতে গিয়ে রাজ্য সরকারের কোপের মুখে পড়ছেন। যদি এই সব অফিসারদের সুরক্ষা না দেওয়া হয়, তা হলে রাজ্য প্রশাসন নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করবে না। সীতারাম ও নীলোৎপল মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে জানান, নন্দিনী চক্রবর্তীকে প্রেসিডেন্সি রেঞ্জের কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি ৭টি জেলার ১২৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন। এখন তাঁকে আবার পুরনো পদে ফিরিয়ে আনার কথা শোনা যাচ্ছে। একই ভাবে অন্যান্য ক্ষেত্রেও নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে সদর্থক পদক্ষেপ প্রয়োজন। এই সূত্রেই কলকাতার পুলিশ
কমিশনারের পদ থেকে রাজীব কুমারের অপসারণের দাবি তোলেন সিপিএম নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে শাসক দলের আনুগত্যের স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। তার পরেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না হলে তাতে অবাধ ভোটেই ধাক্কা লাগবে।