নিষেধের গুঁতোয় চাষ জমিতে পতাকা-ফ্লেক্স

এত টাকা দিয়ে ফ্লেক্স হল, কিন্তু টাঙাব কোথায়— আপাতত এটাই প্রশ্ন নানা দলের নেতা-কর্মীদের। অন্য বার ভোটের মরসুমে রাস্তা, বাড়ির দেওয়াল, ছাদ থেকে সরকারি জায়গা নানা দলের পতাকা, ফ্লেক্সে ঢেকে যায়। তবে এ বার নির্বাচন কমিশনের গুঁতোয় সবই ফাঁকা। অগত্যা চাষের জমিতে খুঁটি পুঁতে ঠাঁই খুঁজছে দলগুলি। কর্মীদের কথায়, একে সরকারি জায়গায় ফ্লেক্স, ব্যানার টাঙানো নিষেধ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৫৫
Share:

জামালপুরের রাস্তায় জমির ফাঁকে খুঁটিতে দলীয় পতাকা। নিজস্ব চিত্র।

এত টাকা দিয়ে ফ্লেক্স হল, কিন্তু টাঙাব কোথায়— আপাতত এটাই প্রশ্ন নানা দলের নেতা-কর্মীদের।

Advertisement

অন্য বার ভোটের মরসুমে রাস্তা, বাড়ির দেওয়াল, ছাদ থেকে সরকারি জায়গা নানা দলের পতাকা, ফ্লেক্সে ঢেকে যায়। তবে এ বার নির্বাচন কমিশনের গুঁতোয় সবই ফাঁকা। অগত্যা চাষের জমিতে খুঁটি পুঁতে ঠাঁই খুঁজছে দলগুলি।

কর্মীদের কথায়, একে সরকারি জায়গায় ফ্লেক্স, ব্যানার টাঙানো নিষেধ। রাস্তা ঢেকে ব্যানার দেখা গেলেও তা খুলে দিচ্ছে প্রশাসন। রাজনীতির রোষের ভয়ে অনেকে বাড়িতেও পতাকা টাঙানোর অনুমতি দিচ্ছেন না। অগত্যা চাষ জমির আলে খুঁটি পুঁতে পতাকা টাঙাচ্ছে দলগুলি। কোথাও আবার জায়গা না থাকায় এক খুঁটিতেই ঝুলছে বাম-তৃণমূলের বৈঠক। তবে রেহাই নেই তাতেও।

Advertisement

কেন? এখন বেশির ভাগ জমিতেই বোরো ধান, গরমের সব্জি, তিল, বাদাম চাষ হচ্ছে। তার ফাঁকেই বাঁশের খুঁটি পুঁতে ফ্লেক্স টাঙিয়েছে দলগুলি। ফলে আলপথে বা খেত জমিতে ঢুকতে মুশকিলে পড়ছেন চাষিরা। তাঁদের অভিযোগ, যেখানে সেখানে খুঁটি থাকায় জমির কাজে অসুবিধে হচ্ছে। তবে ভোটের ঠেলায় টুকটাক ক্ষোভ জানানো ছাড়া মুখ খুলতে পারছেন না কেউ। আবার রাজনৈতিক কর্মীদের দাবি, প্রচারটা তো করতে হবে। ফ্লেক্স টাঙানোর জায়গায় তো নেই।

বর্ধমান গ্রামীণ এলাকার ১৬টি কেন্দ্রে আগামী ২১ এপ্রিল ভোট। তিন সপ্তাহও সময় নেই। বেশির ভাগ জায়গায় দেওয়াল লিখনও শেষ। তবে সব জায়গায় লিখে দেওয়ালে চোখ টানার মতো প্রশিক্ষিত কর্মী না থাকায় এবং সময় বাঁচাতে ফ্লেক্স ও ফেস্টুনের উপরেও ভরসা রাখতে হচ্ছে দলগুলিকে। স্থানীয় নানা সমস্যার কথাও ফ্লেক্স তুলে ধরছেন অনেকে। কিন্তু ব্যানার বা ফ্লেক্স টাঙাতে গিয়েই সমস্যায় পড়ছে শাসক-বিরোধীরা।

জেলা প্রশাসনিক দফতরের কর্তারা জানান, নির্বাচন বিধি চালু হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই ফ্লাইং স্কোয়াড এবং এমসিসি লোকেরা গাড়ি নিয়ে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। সরকারি জায়গা থেকে শুরু করে রাস্তার উপর রাজনৈতিক দলের প্রচার দেখলেই তা খুলে বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। শাসক দলের এক নেতা তো বলেই ফেললেন, “কমিশনের বজ্র আঁটুনির জেরে আমাদের প্রচার করতে সমস্যা হচ্ছে। অথচ গত লোকসভা, পঞ্চায়েত নির্বাচনে বেশ কিছু জায়গায় সরকারের জমিতেই ফ্লেক্স লাগিয়েছিলাম। প্রচারের টাকাই জলে চলে যাচ্ছে!” দক্ষিণ দামোদর এলাকার শাসক দলের এক প্রার্থীও বলেন, “আগে রাস্তার দু’ধারে বাড়ির গ্রিলে বা বিদ্যুতের খুঁটি, টেলিফোন খুঁটিতে দু’দিকে দড়ি দিয়ে ফেস্টুন ঝুলিয়ে দিতাম। এ বারও কয়েক জায়গাতে লাগানো হয়েছিল। কিন্তু তা খুলে দিয়েছে সরকারি কর্মীরা।” জানা গিয়েছে, গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো যে বিধানসভা এলাকায়, যে দলের ফ্লেক্স খোলা হচ্ছে, সেই দলের প্রার্থীর কাছে যাবতীয় খরচ আদায় করছে কমিশন।

জেলা নির্বাচন দফতর সূত্রে খবর, সর্বদলীয় বৈঠকে সব দলকে পই পই করে সরকারি জায়গায় দেওয়াল লিখন মুছে দেওয়া ও প্রচার সামগ্রী সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়ের পরেও অনেক ফেস্টুন একই জায়গায় রয়ে গিয়েছে দেখে কমিশনের কর্মীরা সেগুলি সরিয়ে দিচ্ছেন। বর্ধমান জেলা প্রশাসনের নির্বাচনী কর্তা সব্যসাচী ঘোষ বলেন, “বর্ধমান গ্রামীণ এলাকায় এখনও পর্যন্ত ২৭ হাজারের উপর ফ্লেক্স-পতাকা খোলা হয়েছে। হাজারের উপর সরকারি প্রতিষ্ঠানের দেওয়ালের লেখা মুছে দেওয়া হয়ে গিয়েছে।” তার মধ্যে ২২ হাজার পতাকা-ফেস্টুন শাসক দলের বলেও জানা গিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে বর্ধমান শহর ছাড়িয়ে জামালপুর, খণ্ডঘোষ থেকে ভাতার-মঙ্গলকোট, কাটোয়া থেকে কালনা সর্বত্রই দেখা গিয়েছে খেত জমির উপর পতপত করে উড়ছে লাল-তেরঙা পতাকা, কিংবা খুঁটি পুতে টাঙানো হয়েছে ফ্লেক্স। জামালপুরের এক চাষি বলেন, “রাস্তার ধার থেকে ফ্লেক্স খুলে দেওয়ার পরে খুঁটি পুঁতে আমার জমি দখল করে নিয়েছে শাসক দল। কে বারণ করবেন বলুন তো! অত বুকের পাটা কার?” খণ্ডঘোষের সগড়াই এলাকার এক চাষিও বলেন, “জমির আলে ও খেতে বাঁশের খুঁটি থাকায় চাষে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু মুখ বুজে থাকতে হচ্ছে।”

যদিও অসুবিধের কথা মানেনি কোনও দলই। বর্ধমানের জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “প্রচুর টাকা খরচ করে ফ্লেক্স-ফেস্টুন করা হয়েছে। কমিশনের নিয়ম মেনে আমরা রাস্তা ছেড়ে রাস্তার ধারের জমি ব্যবহার করছি। তাতে পথচলতি মানুষের চোখে পড়ছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য উদয় সরকারও বলেন, “কমিশনের নিয়ম মেনেই আমরা প্রচার করছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement