শিল্পাঞ্চলে ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে রাজনৈতিক অশান্তি। কখনও ভরদুপুরে মিছিলে বেরোনো বিরোধীদের মাথার ছাতা কেড়ে নিয়ে বেধড়ক পেটানো, কখনও মহিলা প্রার্থীর শাড়ি ধরে টানাটানি, কখনও আবার সরাসরি হুমকি। এমনকী অভিযোগ, সোমবার মাঝরাতের পরে ভাঙচুর চালানো হয় বিরোধীদের তিনটি কার্যালয়েও। এলাকা জুড়ে তাণ্ডব চালিয়ে রাস্তার বাতিস্তম্ভের আলো ভেঙে ইট-পাটকেল ছোড়া হয় সিপিএম ও কংগ্রেস কর্মীদের বাড়িতে। সঙ্গে ভোট না দিতে যাওয়ার হুমকিও। মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের কাছে এমনই অভিযোগ করেছেন খড়দহ এবং পানিহাটির বিরোধী জোট প্রার্থী সিপিএম-এর অসীম দাশগুপ্ত এবং কংগ্রেসের সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়।
সূত্রের খবর, খড়দহ ও সোদপুরের মাঝে পানশিলার সুভাষনগর, পঞ্চাননতলা ও রাসমণি মোড়ে সিপিএম-এর তিনটি কার্যালয়েই সোমবার রাত থেকে ভোরের মধ্যে ভাঙচুর চলে। চেয়ার-টেবিল-টিভি ফেলে দেওয়া হয় নর্দমায়। ছেঁড়া হয় দলীয় পতাকা, ছবি, ভোট প্রচারের কাগজপত্রও। পানিহাটি পুরসভার ১৮ এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে পঞ্চাননতলা, দক্ষিণ পানশিলা, গভর্নমেন্ট কলোনি, সুভাষনগরের ১৪টি বাড়িতে হামলার অভিযোগও উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দা কিংশুক পালের অভিযোগ, ‘‘আগেও বহু বার একই কায়দায় আক্রমণ চালিয়েছে তৃণমূল। প্রথমে রাস্তার আলো ইট ছুড়ে ভাঙে। পরে জানলা -দরজা লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে থাকে। আমরা এ বার ডাকাত বলে চেঁচানোয় পালিয়ে যায়।’’
পানিহাটির তৃণমূল প্রার্থী তথা দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পর্যবেক্ষক নির্মল ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘ভোটের আগেই মানুষের রায়ে নিশ্চিত হার বুঝে এখন সাজানো গল্প তৈরি হচ্ছে সর্বত্র। অসীমবাবুরাও ব্যতিক্রম নন।’’
ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে মিছিল করেন সিপিএম ও কংগ্রেস কর্মীরা। ছিলেন অসীমবাবু। ঘটনাস্থলে যান সন্ময়বাবুও। উভয়েই আক্রান্ত কর্মীদের পরিজনদের সঙ্গে কথা বলেন। অসীমবাবুর নেতৃত্বে মিছিল পঞ্চাননতলা, সুভাষনগর হয়ে পৌঁছয় সাধুর মোড়ের কার্যালয়ে। চড়া রোদে প্রায় তিন কিমি হাঁটার পরে কার্যত বিধ্বস্ত অসীমবাবুকে বসতে দেওয়ার চেয়ারও ছিল না সেখানে। পাশের দোকান থেকে আনা হয় চেয়ার। অসীমবাবু বলেন, ‘‘নিজেদের অস্তিত্ব সঙ্কটের আশঙ্কায় পরিকল্পনামাফিক এই আক্রমণ। এতে আমাদের মনের জোর আরও বাড়লো। স্থানীয় ভাবে আমরা তৃণমূলের কিছু দুষ্কৃতীকে চিহ্নিত করেছি, যারা এ দিন বাইকে চেপে আমাদের মিছিলের উপরে
নজর রেখেছে।’’
মঙ্গলবার ঘটনার পরে কেন্দ্রীয় বাহিনী ওই এলাকায় রুট মার্চ করে। পুলিশ পিকেটও রাখা হয়েছে। ব্যারাকপুরের নির্বাচনী আধিকারিক তথা মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামী বলেন, ‘‘সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে জানাচ্ছি। কোনও অভিযোগ ফেলে রাখা হচ্ছে না। পানশিলার ঘটনাও কমিশনে জানানো হয়েছে।’’