মোদী দর্শনে রেলের মাঠে জনজোয়ার

মোদী মোদী চিৎকারে তখন কান পাতা দায়। বিএনআর মাঠে তখন এসে দাঁড়িয়েছে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি। কালো কাঁচ ঢাকা গাড়ি থেকে নরেন্দ্র মোদী নামতেই ছবি তোলার হিড়িক পড়ল। বিজেপি নেতা নয়, প্রধানমন্ত্রী মোদীকে দেখতে রবিবার খড়্গপুরের বহু সাধারণ মানুষও ভিড় জমালেন সভাস্থলে।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৬ ০১:৪৯
Share:

নমো-র সঙ্গে। খড়্গপুরের প্রার্থী তথা বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে করমর্দন প্রধানমন্ত্রীর। রয়েছেন রাজ্য নেতা রাহুল সিংহও (বাঁ দিকে)। রবিবার ছবি তুলেছেন সৌমেশ্বর মণ্ডল

মোদী মোদী চিৎকারে তখন কান পাতা দায়। বিএনআর মাঠে তখন এসে দাঁড়িয়েছে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি। কালো কাঁচ ঢাকা গাড়ি থেকে নরেন্দ্র মোদী নামতেই ছবি তোলার হিড়িক পড়ল। বিজেপি নেতা নয়, প্রধানমন্ত্রী মোদীকে দেখতে রবিবার খড়্গপুরের বহু সাধারণ মানুষও ভিড় জমালেন সভাস্থলে। যা দেখে বিজেপির এক কর্মী বলছেন, ‘‘মোদী যে এখনও দলের সবথেকে বড় তারকা এটাই তার প্রমাণ।’’

Advertisement

বিকেল ৫টা ২০ মিনিট নাগাদ মোদী আসার কথা থাকলেও ঝুঁকি নিতে চাননি বি গায়েত্রী। বিকেল হতেই তড়িঘড়ি বিএনআর মাঠে চলে আসেন তিনি। অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা গায়েত্রীদেবীর স্বামী কর্মসূত্রে খড়্গপুরে থাকেন। মাস কয়েক আগে খড়্গপুরে এসেছেন তিনি। হঠাৎ মোদীর সভায় কেন? বি গায়ত্রী বলছেন, ‘‘মাস কয়েক হল হল শহরে এসেছি। এখনও শহরের ভোটারও হইনি। মোদীকে পছন্দ করি বলে দেখতে এসেছি।

মোদী শহরে আসছেন। তাই তাঁকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের ছাত্রী ভেনেসা পেরেরিরা। তিনি বলছেন, ‘‘আমি রাহুল গাঁধীর ভক্ত। ছুটিতে বাড়ি এসেছি। প্রধানমন্ত্রী শহরে এসেছেন, তাই একবার তাঁকে দেখতে চলে এলাম।’’ ‘‘মোদীকে বাংলায় কথা বলতে শুনে আরও ভাল লাগল’’, যোগ করলেন ভেনেসা।

Advertisement

কানায় কানায় ভরা সুভাষপল্লির বিএনআর মাঠে এ দিন বিকেল ৪টে থেকেই সভা শুরু হয়। একে একে দলের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতারা বক্তব্য রাখছিলেন। বিকেল সাড়ে ৫টায় মোদী সভাস্থলে আসেন। সভাস্থলের অদূরেই শহরের সবচেয়ে বড় গোলবাজার। এ দিন তাই সভায় বহু ব্যবসায়ীও ভিড় জমান। মোদী বলেন, ‘‘বছরের ৩৬৫ দিন ২৪ ঘণ্টা শপিং মল, হোটেল খোলা থাকে। পুলিশ লাঠি মেরে বন্ধ করে না। আর ছুটির দিনে খড়্গপুরের ছোট ব্যবসায়ীরা দোকান খুলে রাখলে পুলিশ এসে লাঠি মেরে বন্ধ করে দেয়।’’ সভায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দেন, এমন কেন হবে? উত্তরও দিয়ে দেন তিনি। মোদী বলেন, ‘‘বাজেটে নিয়ম করে দিয়েছি রাতভর ছোট ব্যবসায়ীরা দোকান খোলা রাখতে পারে।’’ মোদীর কথা শুনে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে জনতা। এ দিন খড়্গপুরের বাসিন্দা জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রাজা রায় বলেন, “ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য মোদী যে পদক্ষেপ করেছেন, তা যথেষ্ট ভাল। খড়্গপুরে এসে এখানকার ব্যবসায়ীদের কথা উনি মনে করায় আমরা খুশি।’’

যদিও মোদীর সভা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। শহরের কংগ্রেস নেতা তথা পুরসভার বিরোধী দলনেতা রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, “ভাল ভিড় হয়েছিল এটা মানছি। তবে বাইরে থেকে ভাড়া করে লোক আনা হয়েছিল। সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে এত ভিড়।’’ তিনি বলছেন, ‘‘একসময় জেলায় প্রচারে রাজীব গাঁধীও এসেছিলেন। তখন তাঁকে দেখতেও বহু মানুষ ভিড় জমিয়েছিল। সভা দেখতে যত লোক এসেছিল, তাদের একাংশের ভোটও আমরা পাইনি। তাই বিজেপিও ভোটবাক্সে এর সুফল পাবে না।’’

তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীও বলছেন, ‘‘এটা আসলে প্রধানমন্ত্রীকে দেখার ভিড়। বাইরে থেকে লোক আনা হয়েছিল। ভিড় দেখে বিজেপি যতই উৎসাহিত হোক, ভোটে এর প্রবাব প়ড়বে না।’’ যদিও মোদীর সভার পর দলীয় কর্মীরা আরও উজ্জীবিত হয়ে প্রচারে নামবেন বলে মনে করছেন দলের জেলা সহ-সভাপতি প্রেমচাঁদ ঝাঁ। তিনি বলছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে আমরা উৎসাহিত। মানুষ বিকল্প খুঁজছে। আমাদের ধারণা, বিজেপির সমর্থনে মানুষ ভোট দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই সভায় এত ভিড় হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement