গিয়াসউদ্দিন মোল্লা নিজস্ব চিত্র।
বুধবার দুপুরে উস্তিতে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে ‘বাংলার মেয়েকে চাই’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন মগরাহাট-পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তথা রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লা। অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের নেতা তথা ফুরফুরা শরিফের পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর নাম না করে ‘কুলাঙ্গার’ বলে কটাক্ষ করেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের ফুরফুরা শরিফের পিরজাদা কখনও রাজনীতি করেন না। যে সমস্ত পিরজাদা রাজনীতি করে আমি মনে করি তারা মুসলমান জাতির কুলাঙ্গার। কারণ, পিরজাদাদের সম্মান দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ত্বহা সিদ্দিকী ছাড়াও অনেক পিরজাদা রয়েছেন, কিন্তু তাঁরা কেউ রাজনীতি করেন না। আমরা পীরজাদার সৈন্য, আমরা পিরজাদাদেরকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করি।’’
গিয়াসউদ্দিন বুধবার আব্বাসকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘‘এ কোন পিরজাদা, যে রাজনীতি করে? আমাদের মুসলমান ধর্মে ইসলাম নিয়ে কেউ রাজনীতি করেন না। ইসলাম ধর্ম সব ধর্মকে সম্মান দেয়। এ পিরজাদা সেই পিরজাদা নয়। ও এসে কি বলল, তাতে কিছু যায় আসে না।’’
তবে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় আব্বাস বলেন, ‘‘ফালতু লোকেদের কথায় আমি কান দিই না। আমাকে কুলাঙ্গার বলা হয়েছে বলে আমাকেও উত্তর দিতে হবে এমনটাও নয়। তবে একটা কথা বলি, অন্য পীরজাদারা রাজনীতি করেন না বলে কি আমি রাজনীতি করতে পারব না! আমার ধর্মেও নিষিদ্ধ নেই, সংবিধানেও নিষিদ্ধ নেই, তাই রাজনীতি করছি।’’
আব্বাস-আসাদউদ্দিনদের সঙ্গে বিজেপি-র গাঁটছড়া রয়েছে বলে অভিযোগ তুলে বুধবার মন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লা, ‘‘ভোট এলে শুধু বিজেপি লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে মুসলমানদের ধরার চেষ্টা করে। তাতে কিছু হবে না। বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব ছিলেন সিরাজদৌল্লা। তাঁর সঙ্গেও মিরজাফরগিরি করা হয়েছে। সমাজেও কিছু মীরজাফর আছে। তারা বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। কিন্তু বাংলার জনগণ অতর্কিত প্রহরীর মত আমাদের সঙ্গেই থাকবে। বিহার নির্বাচনে এই মিম ভাইজানেরা বিজেপিকে সমর্থন দিয়েছিল। ওদের সামাজিক কোনো পরিচয় নেই, ওরা দু'মাসের দল।’’
এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে আব্বাস বলেন, ‘‘তৃণমূল হল বিজেপির প্রোডাক্ট তৈরি করার কারখানা। যতলোক এখন বিজেপি-তে যাচ্ছে সবই তৃণমূলের লোক। যেই তৃণমূল, সেই বিজেপি। তৃণমূলে প্রোডাক্ট তৈরি হয় আর বিজেপি-তে বিক্রি হয়। যে ব্যক্তি আমাকে নিয়ে মন্তব্য করছেন তিনি তো মুর্শিদাবাদের কোনও এক বিজেপি নেতার সঙ্গে গোপনে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। তাঁর মুখে কি আমাকে নিয়ে মন্তব্য মানায়?’’
প্রসঙ্গত, মগরাহাট-পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের অধিকাংশ ভোটারই সংখ্যালঘু এবং তপসিলি জাতিভুক্ত। সংখ্যালঘু ভোটারদের সিংহভাগ ভোট ছিল তৃণমূলের দখলে। অন্যদিকে, তপশিলি জাতিভুক্ত মানুষের ভোট বিজেপি-তৃণমূলে ভাগ হয়েছে গত লোকসভা ভোটে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আব্বারে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট প্রার্থী দিলে সংখ্যালঘু এবং তপসিলি ভোটে বড় থাবা পড়তে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। তবে, তৃণমূলের দাবি, মগরাহাট-পশ্চিম বিধান সভা কেন্দ্রে আদৌ দাঁত ফোটাতে পারবে না বিজেপি কিংবা আব্বাস ও বাম-কংগ্রেস জোট। মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নমূলক কাজকে দেখেই মানুষ জোড়াফুলে ভোট দেবেন।