বৃহস্পতিবার হাওড়ায় মোদী। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
রাজ্যে পরিবর্তন আনার বদলে নিজেই বদলে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! দুর্নীতির সঙ্গে তৃণমূল নেত্রীর আপসের অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার এ ভাবেই আরও এক বার তাঁকে বিঁধলেন নরেন্দ্র মোদী।
রাজ্যে যখন চতুর্থ পর্বের ভোটগ্রহণ চলছে, তখনই উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট ও হাওড়ায় প্রচারে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর এ বারের প্রচার এমন এক সময়ে, যখন নানা নাটকীয় ঘাত-প্রতিঘাতের পরে শেষমেশ নারদা-কাণ্ডে অভিযুক্তদের পক্ষেই দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া এই দিদিকেই সুচতুর ভাবে আক্রমণ করেছেন মোদী।
হাওড়ার গোলমোহর ময়দানে এ দিন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘যখন আমি গুজরাতের সাধারণ নেতা ছিলাম, দেখতাম দিদির বড় বড় ছবি বেরোয়। দিদিকে শ্রদ্ধা করতাম। ভাবতাম, উনি বাংলায় কমিউনিস্টদের সঙ্গে লড়ছেন। দুর্নীতির সঙ্গে লড়ছেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরে পাঁচ বছরে কী হল?’’ সারদা-কাণ্ড, নারদের গোপন ক্যামেরায় ঘুষ-কাণ্ড এবং বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভেঙে পড়ার ঘটনার দৃষ্টান্ত টেনেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনটি ঘটনার পিছনেই তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের নাম জড়িয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। আর তার পরেই কটাক্ষ, ‘‘কী হল দিদি! এত বদলে গেলেন কী করে?’’
রাজ্যের প্রকৃত পরিবর্তনের বদলে মমতার নিজের পরিবর্তনকেই এ বার বিধানসভার প্রচারে আক্রমণের বিষয়বস্তু করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ভোট-পর্ব এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে তিনি যত বার রাজ্যে প্রচারে আসছেন, তাঁর আক্রমণের ধারও বাড়ছে। তৃণমূল রাজ্যে কোণঠাসা হচ্ছে দেখেই নিজের সুর আরও চড়াচ্ছেন মোদী। শিল্প থেকে আইনশৃঙ্খলা— সার্বিক ভাবে মমতার হাতে পশ্চিমবঙ্গ অন্ধকারে তলিয়ে গিয়েছে বলে মন্তব্য করে এ দিন যেমন মোদী বলেছেন, ‘‘দিদি ইতিমধ্যেই হেরে গিয়েছেন। তাই এখন খুন-সন্ত্রাস শুরু করেছে তাঁর দল!’’
বস্তুত, মমতার সৌজন্যে এ বার বাংলায় দুর্নীতির প্রশ্ন জাতীয় স্তরেও চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। মোদী থেকে রাহুল গাঁধী, সর্বভারতীয় নেতারা এসে বারেবারে একই প্রশ্ন তুলছেন। কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল যেমন বলেছিলেন, দিল্লিতে আগে দুর্নীতির প্রশ্নে খুব সরব থাকতেন মমতা। বলতেন, বাংলায় তিনি কোনও
দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেন না। অথচ সারদা, নারদ বা উড়ালপুল-কাণ্ডে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি কেন, প্রশ্ন তুলেছিলেন রাহুল। মোদী এ দিন আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, ‘‘২০১১ সালে দিদি বলেছিলেন, বাংলায় একটা দুর্নীতিমুক্ত সরকার গঠন করবেন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ৫০ হাজার টাকা দিয়েও সরকারি চাকরি পাওয়া যাচ্ছে!’’
সরাসরি উল্লেখ না করলেও প্রধানমন্ত্রী আসলে টাকার বিনিময়ে চাকরি বলতে টেট কেলেঙ্কারির কথাই বোঝাতে চেয়েছেন বলে বিরোধী শিবিরের অভিমত।
দুর্নীতির সুতোয় সারদা, নারদ এবং উড়ালপুলকে গেঁথে এক হাতিয়ারেই এ দিন মমতাকে নিশানা করে গিয়েছেন মোদী। বলেছেন, তিনটি ঘটনার পিছনে জড়িয়ে আছে একটা দলেরই নাম। অথচ এই দলের নেত্রীই মানুষকে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন! শেষে তাই মোদীর সওয়াল, ‘‘এই পাঁচ বছরে অনেক দুর্নীতির সাক্ষী হয়েছেন এই রাজ্যের মানুষ। এমন পরিবর্তন তাঁরা চাননি। একমাত্র বিজেপি-ই পারে তাঁদের দুর্নীতিমুক্ত, উন্নয়নমুখী সরকার দিতে।’’