ভাবাচ্ছে দ্বন্দ্ব, ভরসা প্রয়াত সাংসদ

ভোটের বৈতরণী পার হতে হবে। চণ্ডীতলায় তাই দলের প্রয়াত সাংসদ আকবর আলি খোন্দকারের উপর ভরসা করছেন তৃণমূল‌নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। আকবর ছিলেন স্থানীয় সাংসদ। চণ্ডীতলার বিধায়কও। দলের কর্মী-সমর্থক তো বটেই, সাধারণ মানুষের মধ্যেও তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল যথেষ্ট।

Advertisement

প্রকাশ পাল

চণ্ডীতল‌া শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৬ ০২:১০
Share:

প্রয়াত সাংসদ আকবর আলি খোন্দকারে ছবি পাশে রেখে মঞ্চে বক্তব্য রাখছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — দীপঙ্কর দে

ভোটের বৈতরণী পার হতে হবে। চণ্ডীতলায় তাই দলের প্রয়াত সাংসদ আকবর আলি খোন্দকারের উপর ভরসা করছেন তৃণমূল‌নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। আকবর ছিলেন স্থানীয় সাংসদ। চণ্ডীতলার বিধায়কও। দলের কর্মী-সমর্থক তো বটেই, সাধারণ মানুষের মধ্যেও তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল যথেষ্ট। এ বার এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী আকবরের স্ত্রী তথা বিদায়ী বিধায়ক স্বাতী খোন্দকার। শনিবার তাঁর সমর্থনে জনাই ট্রেনিং হাইস্কুলের মাঠে সভা করেন মমতা।

Advertisement

এ দিন হুগলিতে চারটি সভা করেন মমতা। প্রথম সভা হয় আরামবাগে। ওই সভা সেরে দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ জনাইতে নামে মমতার হেলিকপ্টার। মঞ্চে ওঠার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মাইক হাতে নেন। মঞ্চের সমনে ডান দিকে আকবরের হাসিমুখের একটি বাঁধানো ছবি রাখা হয়েছিল। ক্ষণিকের জন্য ছবিটির সামনে দাঁড়ান তৃণমূলনেত্রী। আর বক্তব্যের গোড়াতেই আকবরের নাম উঠে আসে মমতার মুখে। বললেন, ‘‘আকবরের একটা ছবি রয়েছে মঞ্চে। আকবার আমার খুব প্রিয় সাংসদ ছিল। ওর অকালমৃত্যু ওর পরিবারটাকে প্রায় জলে ভাসিয়ে দিয়ে যায়। শুধু ওর পরিবার নয়, হুগলি জেলা তৃণমূলের পরিবারকেও।’’ এর পরে যোগ করেন, ‘‘আমাদের দলে যারা চলে যায়, তাদের সন্তান, তাদের পরিবারকে রক্ষা করা, তাদের দেখা আমাদের কর্তব্য। সে জন্যই স্বাতীকে বিধায়ক করা হয়েছিল। স্বাতী এবারেও দাঁড়িয়েছে।’’ স্বাতীদেবীর দুই ছেলেমেয়েকে পাশে ডেকে নিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আকবর যখন মারা যায়, তখন ওরা খুবই ছোট। এক দিন কিন্তু ওরা আকবরের মতোই বড় হবে।’’

এমনিতে চণ্ডীতলা আসনটি উদ্ধার করা তৃণমূলের পক্ষে খুব একটা সহজ হবে না বলে, তৃণমূলের অনেকেই মনে করেন। তা হলে এই আসনে জিততে প্রয়াত সাংসদের উপরে ভরসা করতে হল কেন? রাজ্যের অনেক জায়গার মতো এই কেন্দ্রেও দলের নেতাদের দ্বন্দ্ব চিন্তায় রেখেছে শাসকদ‌লকে। হুগলির যে ছ’টি আসনে দলের নেতাদের প্রচারে বাড়তি জোর দিতে বলেছেন খোদ দলনেত্রী, তার মধ্যে চণ্ডীতলাও আছে। স্বভাবতই মানুষের ভোট অনুকূলে টানতেই তিনি আকবরের স্মৃতি উস্কে দিয়ে গেলেন বলে দলের অনেকেরই অভিমত। বক্তব্যের শেষে মঞ্চ থেকে নামার সময় মমতা দলের স্থানীয় নেতাদের বলে যান, তাঁরা যেন এককাট্টা হয়ে লড়াই করেন। এ দিন তৃণমূলনেত্রীর বক্তব্যের সিংহভাগ জুড়ে ছিল উন্নয়নের ফিরিস্তি। তার মাঝেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, ‘‘তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিবিআই করছ, নানা এজেন্সিকে করছ। সিপিএম বা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একটাও করেছ? করোনি কেন, ওরা লাইন করে রাখে বলে? জেনে রেখ, তৃণমূল মরে গেলেও তোমাদের সঙ্গে লাইন করবে না।’’ সঙ্গে সঙ্গেই যোগ করেন, ‘‘আমরা একবার অটলজিকে সমর্থন করেছিলাম। কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় পরিবার ওঁর থেকে কত সাহায্য নিয়েছে জানি। তবে আমি প্রকাশ্যে তা বলি না। এখনও বলতে চাইছি না।’’

Advertisement

এ দিনের মঞ্চে ছিলে‌ন দলের জেলা যুব সভাপতি দিলীপ যাদব, দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক সুবীর মুখোপাধ্যায়, জেলা পরিষদের সদস্য সুরজিৎ মণ্ডল প্রমুখ। স্বাতী খোন্দকারের পাশাপাশি পাশের কেন্দ্র জাঙ্গিপাড়ার দলীয় প্রার্থী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর হয়েও ভোট চান মমতা। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে তিনি কত বার চণ্ডীতলায় এবং জেলায় এসেছেন, তা বোঝাতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আমার তো মনে হয়, লোকাল নেতাদের থেকেও আমি বেশি আসি।’’ মমতা জানান, তাঁর কাছে দলীয় নেতারা অভিযোগ করছেন বিভিন্ন জায়গায় দলের পতাকা, ফ্লেক্স খুলে নেওয়া হচ্ছে। ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। মমতার অভিযোগ, ‘‘রাজনৈতিক দল ছাড়াও অন্যরাও এ সব করছে। আমার মিটিংয়ের ফ্ল্যাগও খুলে নেওয়া হচ্ছে।’’ তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘মনে রাখবেন, আইন কিন্তু সবার জন্যই সমান। সাহস ভাল, দুঃসাহস ভাল নয়। ডায়েরি আমার সঙ্গে থাকে। আমি ঠিক দেখে নেব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement