কুমারগঞ্জর সভায় গোষ্ঠী কোন্দল মেটাতে বিপ্লব মিত্র এবং শঙ্কর চক্রবর্তীকে (ডান দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি। রবিবার। — অমিত মোহান্ত
লোকসভা ভোটের প্রচার শেষে মালদহ থেকে যাওয়ার মুখে তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেলিকপ্টারে ওঠার সময় পিছন ফিরে বলে গিয়েছিলেন, ‘‘কৃষ্ণেন্দু, সাবিত্রী, বাবলা তোরা মিলেমিশে কাজ করবি।’’ মমতার সামনে ঘাড় নাড়লেও দলনেত্রী চোখের আড়াল হওয়া মাত্রই পুরনো রেষারেষিতে ফিরে গিয়েছিলেন কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী, সাবিত্রী মিত্র ও দুলাল সরকার। লোকসভা ভোটে এ জেলা শূন্য হাতে ফিরিয়েছিল তৃণমূলকে।
মালদহের সেই ছায়াই পড়েছে উত্তরবঙ্গের আর একটি জেলা দক্ষিণ দিনাজপুরেও। রবিবার দুপুরের ঠাঠা রোদের মধ্যে হেলিকপ্টারে করে বিধানসভা ভোটের প্রচারে এই জেলার কুমারগঞ্জের সাফানগরে পৌঁছে মমতার চোখে পড়ে দলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রই মঞ্চে নেই। তৃণমূল সূত্রেই খবর, এই জেলায় বিপ্লববাবুর সঙ্গে দলের বাকি সব বিধায়কের সম্পর্ক খারাপ। সে কারণেই সম্প্রতি বিপ্লববাবুকে সরিয়ে শঙ্কর চক্রবর্তীকে জেলা সভাপতি করা হয়। এ দিন মঞ্চে ছিলেন না বিপ্লববাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ডিপিএসসির চেয়ারম্যান কল্যাণ কুণ্ডু, হিলির ব্লক সভাপতি আশুতোষ সাহারাও। এতেই ক্ষুব্ধ মমতা জেলা পরিষদের সভাধিপতি ললিতা টিগ্গাকে কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করেন বলে দল সূত্রেই জানা গিয়েছে। ললিতাদেবীও বিপ্লববাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
শঙ্করবাবু, সাংসদ অর্পিতা ঘোষ, কুমারগঞ্জের বিদায়ী বিধায়ক মাহমুদা বেগম সহ কুমারগঞ্জ ব্লক ও জেলা নেতারা অবশ্য গোড়া থেকেই মঞ্চে ছিলেন। তাঁদের সামনেই দলনেত্রী ললিতাদেবীকে বলেন, ‘‘কোনও কথা শুনব না। আমি সব খবর রাখি।’’ তা শুনে ললিতাদেবী মুখ কালো করে চুপ করে যান। এরপরই হন্তদন্ত হয়ে মঞ্চে হাজির হন বিপ্লববাবু। ললিতাদেবীর দিকে তাকিয়ে মমতা তখন বলেন, ‘‘কল্যাণ আসেনি কেন? আশু কই? এ সব একদম বরদাস্ত করব না।’’ এরপরই মমতাকে দেখা যায় বিপ্লববাবু ও শঙ্করবাবুকে মঞ্চের একপাশে ডেকে নিয়ে গিয়ে আঙুল উঁচিয়ে উত্তেজিত ভাবে কথা বলতে। তৃণমূলের অন্দরের খবর, দুই নেতাকেই সর্তক করে দিয়েছেন দলনেত্রী।
বক্তৃতাতেও তিনি বলেন, ‘‘মাহমুদাকে এ বার টিকিট দিতে পারিনি। তাই বলে কি মাহমুদা ঘরে বসে আছে? ও তো প্রচারে নেমেছে। কারও সঙ্গে কারও মুখ দেখাদেখি নেই। এ ও-কে সহ্য করে না। তৃণমূলে এ সব নেই। ঝগড়া কখনও বাড়াতে নেই।’’ এরপরে প্রকাশ্যেই তিনি বলেন, ‘‘আমিও তো দলের সভানেত্রী। কিন্তু কারও সঙ্গে আমার কোনও ঝগড়া নেই।’’
কিন্তু এরপরেও এই জেলায় তৃণমূলের দ্বন্দ্ব কমবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে শাসক দলের অন্দরেই। ডিসেম্বরেই মমতা নিজে এসে একবার সতর্ক করে দিয়ে গিয়েছিলেন, তাতে কাজ হয়নি। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও একাধিক বার বালুরঘাটে এসে সভা করে সতর্ক করেছেন। কিন্তু ভবি ভোলার নয়। তপন, গঙ্গারামপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষ থেকে রক্তপাত, পরস্পরের বিরুদ্ধে গুলি-বোমা ছোড়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এক গোষ্ঠীর প্রচারে অন্য গোষ্ঠী বাধা দিচ্ছে, এমন অভিযোগও শাসক দলই করেছে।
সূর্য ডোবার আগে গঙ্গারামপুর থেকে মমতার হেলিকপ্টার ছেড়েছে। ধুলোর ঝড়ের মতোই উড়ে গিয়েছে এক হয়ে চলার বার্তাও। এ দিনই শুরু হয়ে গিয়েছে নতুন বিতর্ক। শাসক দল সূত্রেই জানা গিয়েছে, কুমারগঞ্জের যে মাঠে মমতার সভা হওয়ার কথা ছিল, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই সেই মাঠে মঞ্চ বাঁধা যায়নি। সভা করতে হয়েছে
চার কিলোমিটার দূরের সাফানগরে। তাই দলেরই এক প্রবীণ নেতার
কথায়, ‘‘খোদ দলনেত্রীর সভাই যেখানে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে করা যায় না, সেখানে মাত্র ৬ দিনে কী করে বিবাদ মিটবে, জানি না।’’