ভোটে হেরে দাপটও হারাচ্ছেন কৃষ্ণেন্দু

ভোটে পরাজিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাপটও খুইয়েছেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। আর তাতেই টানাটানি শুরু হয়েছে তাঁর সবে ধন নীলমণি চেয়ারম্যান পদটি নিয়েও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৬ ০১:৩৯
Share:

কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী।

ভোটে পরাজিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাপটও খুইয়েছেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। আর তাতেই টানাটানি শুরু হয়েছে তাঁর সবে ধন নীলমণি চেয়ারম্যান পদটি নিয়েও।

Advertisement

ইংরেজবাজারের পুরপ্রধান কৃষ্ণেন্দুবাবু এত দিন দলের শীর্ষ নেতাদেরও তেমন তোয়াক্কা করেননি। ২০১১ সালে তৃণমূলের ঝোড়ো হাওয়াতেও তিনি নিজের বিধানসভা আসনটি জিতেছিলেন। তারপরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। তারপরেও ওই আসনেই বিরাট মার্জিনে জিতেছিলেন। তারপরে ইংরেজবাজার পুরসভাটিও তিনি নিজের হাতেই রাখতে পেরেছেন।

বারবার এই ভাবে ভোটের ময়দানে নিজের ক্ষমতার পরিচয় দিয়ে কৃষ্ণেন্দুবাবু দল থেকেও সমীহ আদায় করে নিতে পেরেছিলেন। তাঁর সঙ্গে সাবিত্রী মিত্রের বারবার সংঘাতের কথা প্রকাশ্যে চলে আসার পরেও তাঁর দাপট কমেনি। দলের শীর্ষ নেতারা বারবার সতর্ক করার পরেও কৃষ্ণেন্দুবাবু ফের প্রকাশ্যে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। তৃণমূলের মালদহেরই এক নেতার কথায়, ‘‘যে ভাবে কৃষ্ণেন্দু নিজের আসন সামলে রেখেছিলেন, তাতে তাঁকে খুব বেশি শাসন করতে পারেননি দলের শীর্ষ নেতৃত্বও।’’ তাই বেশ কয়েকবার তাঁর জন্য দল অস্বস্তিতে পড়লেও তাঁর মন্ত্রীপদ থেকেই গিয়েছিল।

Advertisement

মালদহের তৃণমূলের একাংশেরই বক্তব্য, এখন ভোটে হারার পরে পাশার ঘুঁটিও বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। তাঁদের কথায়, কৃষ্ণেন্দুবাবুকে এখন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষে কড়া ভাবে শাসন করতে কোনও বাধা নেই। কারণ দল এমনিতেই বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। সব থেকে বড় কথা হল, কৃষ্ণেন্দুবাবুর বিরুদ্ধে এত দিন ধরে দলের নিচু তলায় যে ক্ষোভ জমেছে, তার খবরও শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে রয়েছে। বরং জেলায় তৃণমূল আসন না পাওয়ায় এখন নিচুতলার কর্মীদের মানসিক ভাবে চাঙ্গা করতে তাই কৃষ্ণেন্দুবাবু ও সাবিত্রীদেবীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে দল।

সেই সঙ্গে রয়েছে আরও একটি আশঙ্কা। কৃষ্ণেন্দুবাবুর বিরুদ্ধে দলের মধ্যেই যে ক্ষোভ জমা হয়েছে, তাকে পুঁজি করেই এ বার আসরে নামতে চায় বিরোধীরাও। তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলরদের সমর্থন নিয়ে পুরসভা ভাঙার তোড়জোর শুরু হয়েছে। পুরসভার সমস্ত বিরোধী কাউন্সিলরা কৃষ্ণেন্দুবাবুকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরাতে এককাট্টা হতে শুরু করে দিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে তৃণমূলের কিছু কাউন্সিলরও যোগ দিয়েছেন বলে দাবি বিরোধীদের।

কৃষ্ণেন্দুবাবুকে যিনি হারিয়েছেন, সেই নবনির্বাচিত বিধায়ক তথা পুরসভার কাউন্সিলর নীহাররঞ্জন ঘোষ বলেন, ‘‘মানুষের সঙ্গে সঙ্গে কৃষ্ণেন্দুবাবুর পাশ থেকে সরে গিয়েছেন তাঁর দলের কাউন্সিলরেরা। তাঁরা কৃষ্ণেন্দুবাবুর কাছ থেকে রেহাই পেতে চাইছেন। আমাদের সঙ্গে তাঁরা নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। কৃষ্ণেন্দুবাবুও তার আঁচও পেয়েছেন। তাই তিনি পুরসভা আঁকড়ে পড়ে রয়েছেন।’’

বিরোধীদের পুরবোর্ড ভাঙার তৎপরতার আভাস পেয়েছেন খোদ কৃষ্ণেন্দুবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘মানুষের জন্য কাজ করি। ভোট চলাকালীনও আমি পুরসভায় এসেছি। এখনও আসছি। এখানে আঁকড়ে থাকার কোনও বিষয় নেই। পুরবোর্ড ভাঙতে হলে যে আসন দরকার, তা বিরোধীদের নেই।’’ বিজেপির কাউন্সিলর সঞ্জয় শর্মাও কিন্তু বলেছেন, ‘‘পুরসভার ভবিষ্যৎ কী হবে, তা বলছি না। তবে মানুষ যে তাঁকে চান না, তা স্পষ্ট।’’

নীহারবাবু কৃষ্ণেন্দুবাবুকে আগেও হারিয়ে শহরের মানুষের কাছে পরিচিত মুখ। তবে ইংরেজবাজার পুরসভার ২৯টি আসনের মধ্যে তৃণমূল একক ভাবে পেয়েছিল ১৫টি আসন। আর বামেরা পেয়েছিল নটি, বিজেপি তিনটি এবং দু’টি পেয়েছিল কংগ্রেস। পুরবোর্ড গঠনের সময় ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপির কাউন্সিলর শম্পা সাহা যোগ দেন তৃণমূলে। এখন ১৩ জন বিরোধী কাউন্সিলর রয়েছে পুরসভায়।

এর পরেও কী ভাবে পুরবোর্ড ভাঙবে বিরোধীরা? বিরোধী কাউন্সিলরদের দাবি, দশ জন এককাট্টা হলেই পুরসভার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা যায়। সেক্ষেত্রে আস্থা প্রমাণ করতে হবে চেয়ারম্যানকে। সেই সময়ই কৃষ্ণেন্দু-বিরোধী কাউন্সিলরদের সমর্থন তাঁরা পাবেন বলে আশা বিরোধীদের। পুরসভার ১৫ জন কাউন্সিলরের মধ্যে কৃষ্ণেন্দুবাবুর ঘনিষ্ঠদের সংখ্যা কম, সেটাই বিরোধীদের আশা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement