দেখা গিয়েছে বাহিনী, বলছেন বিরোধীরাও

রবিবারের ভোটে বীরভূমের নানুরে নাহিনা গ্রামে বুথের কাছে সকাল থেকেই শাসক দলের একদল যুবকের জটলা ছিল। খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছোয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। গাড়ি থেকে নেমেই জওয়ানরা বুথের সামনে থেকে মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে ওই যুবকদের সরিয়ে দেন।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৩০
Share:

কড়া নজর।—নিজস্ব চিত্র

ছবিটা অনেকটাই বদলে গেল।

Advertisement

রবিবারের ভোটে বীরভূমের নানুরে নাহিনা গ্রামে বুথের কাছে সকাল থেকেই শাসক দলের একদল যুবকের জটলা ছিল। খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছোয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। গাড়ি থেকে নেমেই জওয়ানরা বুথের সামনে থেকে মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে ওই যুবকদের সরিয়ে দেন।

সে দিনটা ছিল ৪ এপ্রিল। রাজ্যে প্রথম দফার প্রথম দিনের ভোট। জঙ্গলমহলে লালগড় স্কুলের বুথের সামনে সেদিনও সকাল থেকেই তৃণমূলের ছেলেরা ভিড় করে ছিল। বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল। কিন্তু যে যার মতো। হটিয়ে দেওয়া তো দূরের কথা, তার পর বেলা যত গড়িয়েছে, ওই ভিড় আড়ে-বহরে তত বেড়েছে।

Advertisement

ভোট হচ্ছে, অথচ কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বুথের বাইরে দেখা যাচ্ছে না! তারা রয়েছে চোখ বুজে, হাত গুটিয়ে। রাজ্যে প্রথম দফার দু’দিনের ভোট দেখে নির্বাচন কমিশনের কাছে এমনই অভিযোগ করেছিল বিরোধী দলগুলি। অভিযোগ যে সত্যি, কার্যত তা মেনে নিয়ে বাহিনীকে আরও সক্রিয় ভূমিকায় দেখার আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী।

রবিবার বীরভূম দেখা গেল, বুথের পাশাপাশি রাস্তাঘাটে, মহল্লায় মহল্লায় তাদের সক্রিয় উপস্থিতি। কোথাও গোলমালের খবর পেলেই ইনসাস কাঁধে পৌঁছে যাচ্ছে জংলা পোশাকের জওয়ানরা। বীরভূমের লাভপুরে বাহিনীকে লাঠি চালাতে দেখা গিয়েছে।

কী রকম?

বীরভূমের ইলামবাজারে বুথের সামনে বিজেপি কর্মীদের ফেলে মারধোর করছেন তৃণমূলের লোকেরা। এই অভিযোগ পেয়েই সেখানে পৌঁছে যায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ে মোবাইল ভ্যান। তারা দ্রুত বিবদমান দুই দলকে হটিয়ে দেয়, ঘটনাস্থল থেকে শাসক দলের ৫ জনকে তুলে দেয় পুলিশের হাতে। আবার, ময়ূরেশ্বরে বুথের বাইরে দু’দলের লোকেদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হতেই কাছে দাঁড়িয়ে থাকা এক জওয়ান ওয়াকিটকিতে খবর পাঠান কন্ট্রোল রুমে। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে চলে আসে একটি ভ্যান। সেই ভ্যানে ছিল পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। নিমেষে জায়গাটা ফাঁকা করে দেয় তারা।

এ দিন দ্বিতীয় দফার ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর এই ভূমিকায় মোটের উপর সন্তুষ্ট ভোটাররা। বীরভূমে অনেকেই জানান, ক্রমাগত হুমকি, ভয় দেখানো এবং নেতাদের ভাষণ শুনে ভোট দিতে পারবেন কি না, সেই আশঙ্কা ছিল। কিন্তু সকাল থেকে ভারী বুটের শব্দ শুনে ভরসা পেয়ে ভোট দিয়ে এসেছেন তাঁরা।

তুলনায় উত্তরবঙ্গের ছবি খানিকটা ভিন্ন ছিল। এ দিন বীরভূম ছাড়াও উত্তরবঙ্গের ৬টি জেলায় (কোচবিহার বাদে) ভোট হয়েছে। সব জেলাতেই বুথ পাহারায় ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। শিলিগুড়ি এবং পাহাড়ের কিছু কিছু অংশে বাহিনীর জওয়ানকে ভালমতোই দেখা গিয়েছে। তবে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, দুই দিনাজপুর ও মালদহে বাহিনীকে বিশেষ চোখে পড়েনি।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি অবশ্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর এ দিনের ভূমিকায় মোটের উপর খুশি। সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘গত দু’দিনের ভোট থেকে শিক্ষা নিয়ে এ দিন কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সক্রিয় করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় তাদের সঙ্গে মানুষও রুখে দাঁড়িয়েছে। আশা করব, আগামী কয়েক দফায় তারা আরও বেশি সক্রিয় হবে।’’

কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর কথায়, ‘‘অনেক তদ্বির-তদারকির পর বাহিনীকে এ দিন দেখা গিয়েছে। তবে নিশ্ছিদ্র ছিল না।’’ বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘‘সবাই মিলে চাপ দেওয়া হয়েছিল। এটা হওয়ারই কথা ছিল। আগামী দিনে আরও কার্যকরী হয়ে উঠবে বলে আশা করছি।’’

তৃণমূলের মুকুল রায় বলেন, ‘‘বাহিনী কাজ করতে এসেছে। প্রথম দিন থেকে তাদের কাজ করছে। এই নির্বাচনে বিরোধীরা বেশি করে হারবে বলে বাহিনীর বেশি গলদ দেখছে।’’

বাহিনীর সক্রিয়তা আগের থেকে বেড়েছে বলে মনে করছে সিআরপিএফ-এর কর্তারাও। তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘প্রতি ১০টি ভোটকেন্দ্রের জন্য একটি করে সেক্টর মোবাইল ভ্যান ছিল। প্রতিটি সেক্টর মোবাইল ভ্যানে চার জন করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান ছিলেন।’’

এ দিনের ভোটের আগে অসম থেকে ৪০০ কোম্পানি বাহিনী এসেছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আগের ৪০০ কোম্পানি। সব মিলিয়ে প্রায় ৮০০ কোম্পানি বাহিনীকে এ দিনের ভোটের কাজে লাগানো হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সব মিলিয়ে, বাড়তি পদক্ষেপ ও সক্রিয়তা বাড়িয়ে এ দিন বাহবা কুড়িয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। আর টিভিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর এই সক্রিয়তার ছবি দেখে বিভিন্ন জায়গায় ভোটারকে সাহসে ভর দিয়ে বুথে যেতে দেখা গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement