শুক্রবার কোচবিহারের খোল্টায় প্রচারে সূর্যকান্ত মিশ্র। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
পালাবদলের গন্ধ পেয়ে রাজ্যের শাসক দল নবান্ন থেকে বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয়ের ফাইল লোপাটের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।
শুক্রবার সকালে কোচবিহার উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের খোল্টা বাজার লাগোয়া মাঠে সভা করেন সূর্যবাবু। সেখানে তিনি বলেন, “আমি খবর পাচ্ছি, সারদা থেকে শুরু করে শ্যামল সেন কমিশন, সাইকেল (স্কুলপড়ুয়াদের জন্য ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্প), ত্রিফলা বাতি— নানা কাগজপত্র নবান্ন থেকে হাপিশ করার চেষ্টা হচ্ছে। (এই) সরকার বুঝে গিয়েছে, ওরা আর থাকবে না। অফিসারেরা যাঁরা আছেন, তাঁদের দায়িত্ব আছে। একটা ফাইল যদি খোয়া যায়, কেউ পার পাবেন না।”
সূর্যবাবুর এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে পাল্টা আক্রমণ করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের বিদায়ী মন্ত্রী গৌতম দেব। কোচবিহারে নির্বাচনী প্রচারে এসে সাংবাদিক বৈঠকে গৌতমবাবু বলেন, “এমন অভিযোগ তুলে হাওয়া গরম করার কোনও মানে হয় না। এখন তো নির্বাচন কমিশন আছে। সাহস থাকলে নির্দিষ্ট অভিযোগ করুন। আসলে সূর্যবাবুর কেন্দ্রে ভোট হয়েছে। তিনি যে হারবেন, তা বুঝতে পেরে গিয়েছেন। আর গরমও খুব পড়েছে। তাই আবোল-তাবোল বকছেন।”
এ দিনের সভায় মূলত দুর্নীতি নিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। শুধু ফাইল লোপাট নয়, সূর্যবাবুর অভিযোগ, তৃণমূল আমলে সরকারের সমস্ত কাজকর্মেই কমিশন পাইয়ে দেওয়ার চল ছিল। তাঁর কথায়, “সাইকেল, বালা (‘কন্যাশ্রী’ বালা)— যা কিছু সরবরাহ হয়েছে, সব কমিশনে। যেখানে আপনি নতুন কিছু দেখছেন, সেখানেই কমিশন। এক-একটা সাইকেল বাজার দরের থেকে সাত-আটশো টাকা বেশি পড়েছে।”
এই প্রসঙ্গেই মমতা ও তাঁর দলের শীর্ষ নেতাদের হেলিকপ্টারে চেপে ভোটের প্রচারে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সূর্যবাবু। বলেছেন, “উনি তো হেলিকপ্টারে ঘুরছেন। হেলিকপ্টারের খরচ কত জানেন? এখন তো ছবিও আঁকছেন না। টাকা কোথা
থেকে এল?” রাজ্যে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল নিয়ে প্রায়ই গর্ব করেন মমতা। সেই প্রসঙ্গে এ দিন প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যবাবু বলেন, “সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের জন্য বড় বড় ভবন হয়েছে। সেই ভবনে বেড়াল ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর কিছু
হচ্ছে না।”
কোচবিহারে ভোট শেষ দফায়— ৫ মে। এ দিনের মঞ্চ থেকে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে সূর্যবাবু বলেন, “পোলিং এজেন্ট তাঁরাই হবেন, যাঁদের বুকে পাটা আছে। মানুষের লড়াইয়ে আপনাকে সামনে থাকতে হবে।” তিনি দাবি করেন, শনিবার ভবানীপুরের ভোটে পিছিয়ে পড়বেন তৃণমূল নেত্রী। রাজ্যে নতুন সরকার বাম গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিপেক্ষ জোটই গড়বে।
এ দিন সূর্যবাবুর সঙ্গে মঞ্চে দেখা করেন স্থানীয় ছাত্রী নবনীতা কার্জি। রাজ্য জুড়ে চলা নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে ‘সবুজ সাথী’র সাইকেল এবং কন্যাশ্রীর টাকা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন নবনীতা। সভায় ছিলেন প্রাক্তন বনমন্ত্রী অনন্ত রায়, শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায়, ওই কেন্দ্রের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী নগেন্দ্রনাথ রায় প্রমুখ। পরে দেওয়ানহাট ও তুফানগঞ্জেও সভা করেন সূর্যবাবু।