জয় বাবা ভূতনাথ

ফাঁকা বুথে খেল ভূতেরই

খাঁ খাঁ করছে একের পর এক বুথ। কিন্তু ভোট পড়ছে শ’য়ে শ’য়ে। যেমন, চন্দনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৭৩ নম্বর বুথে ঢুকতেই পারেননি বাম এজেন্ট। মোট ভোটার ৭৩২ জন। সকাল এগারোটার মিনিট দশেক আগেই সেখানে ভোট পড়ে গিয়েছে ৪১৬টি। পাশের ১৭২ নম্বর বুথে বুথে ওই একই সময়ে ৬৭৫ জন ভোটারের মধ্যে না কি ভোট দিয়ে ফেলেছেন ৪০৭ জন।

Advertisement

অমিত কর মহাপাত্র

দাঁতন শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৬ ০১:০৯
Share:

খাঁ খাঁ বুথ। ভোটার নেই। নেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানও। কেশিয়াড়ির সুন্দরা হাইস্কুলের ১১০ নম্বর বুথে সোমবার বিকেল ৩টে ৩৯-এর ভোট-চিত্র। ভোটকর্মীদের হিসেবে ততক্ষণে অবশ্য ভোট পড়ে গিয়েছে ৮৭.৬৩%। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

খাঁ খাঁ করছে একের পর এক বুথ। কিন্তু ভোট পড়ছে শ’য়ে শ’য়ে।

Advertisement

যেমন, চন্দনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৭৩ নম্বর বুথে ঢুকতেই পারেননি বাম এজেন্ট। মোট ভোটার ৭৩২ জন। সকাল এগারোটার মিনিট দশেক আগেই সেখানে ভোট পড়ে গিয়েছে ৪১৬টি। পাশের ১৭২ নম্বর বুথে বুথে ওই একই সময়ে ৬৭৫ জন ভোটারের মধ্যে না কি ভোট দিয়ে ফেলেছেন ৪০৭ জন।

কী ভাবে এটা সম্ভব হল? বুথের কাছেই ঘুরছিলেন তৃণমূলের এক যুব কর্মী। কথার মাঝে তিনি বলেই ফেলেন, “সব ‘ম্যানেজ’ করা হয়ে গিয়েছে।” বুথ থেকে ৫০ মিটারের মধ্যেই জনাকয়েক তৃণমূল কর্মীর জটলা চোখে পড়ল। সেখান থেকেই ভেসে এল উত্তর,“বিরোধীদের ভোট কম। এখানে গণ্ডগোল নেই। অন্য পার্টির লোক বসে কী করবে?”

Advertisement

মানে, আবার সেই ভূতের খেলা। জয়-জয়কার সেই ভূতেদেরই।

মোহনপুরের সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীরও দেখা পাইনি। মোহনপুর হাইস্কুলে আবার দেখলাম ভূতের অন্য কেরামতি। ১৮৮ ও ১৮৯ নম্বর বুথে ছিল রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ ও একজন করে এনভিএফ কর্মী। অথচ মোহনপুর থানার এক কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে বুথ দু’টি। সেখানে নজরদারি নেই। তাই তৃণমূল কর্মীরা অবাধে রিকশা চেপে ঢুকে পড়ছেন বুথ চত্বরে। সীতাপুর গ্রাম থেকে মহিলাদের ভোট দেওয়াতে নিয়ে এসেছিলেন তৃণমূল কর্মী দেবু শ্যামল। বুথ চত্বরে ঢুকলেন কী করে? জবাব এল, “আমরা তো ভোটারদের সাহায্যই করছি।” চিত্রগ্রাহক সোহম ছবি তুলতে গেলে টনক নড়ল ৬ নম্বর সেক্টর অফিসের রাজ্য পুলিশ কর্মী আশিস মুখোপাধ্যায়ের। তিনি ওই তৃণমূল কর্মীকে মৃদু ভৎর্সনার সুরে বললেন, “কমিশনের নিয়ম নেই। যাও আর এ রকম করবে না।” মুচকি হেসে বুথে ভোটারদের লাইনে ঢুকে গেলেন দেবু। এ যেন পান্তভূতের খেলা!

বৈতা প্রাথমিক স্কুলের ২০৬ ও ২০৭ নম্বর বুথে আবার কমিশনের নির্দেশ সত্ত্বেও সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না। সিপিএমের মোহনপুর জোনাল সম্পাদক প্রণব দের অভিযোগ, ‘‘ছাপ্পা ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দিতেই রাজ্য সরকারের কর্মীরা এই ব্যবস্থা করেছেন।’’ ১৬ নম্বর সেক্টর অফিসের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্টর অফিসার মোহনপুর ব্লকেরই একটি পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক। তিনি বললেন, “ক্যামেরা আসার কথা ছিল। আসেনি। কারণ জানি না।”

এই স্কুলের দু’টি বুথেই নজরদারির দায়িত্বে ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। তাঁদের সঙ্গেই জলপাই রঙা পোশাকে মিশে ছিল এক এনভিএফ কর্মী। সঞ্জু পশারী নামে ওই কর্মী বুথের প্রবেশপথে পাহারা দিচ্ছিলেন। বললেন, “কেউ ছিল না। তাই দরজায় দাঁড়িয়েছিলাম।” কিন্তু এই পোশাকে কেন? থতমত খেলেও আর উত্তর দিলেন না। ছবি তুলতে গেলে ছুট দিলেন।

সিপিএমের দাঁতন-২ জোনাল কমিটির সম্পাদক রতন দে বলেন, “দাঁতন কেন্দ্রের ১৮টি বুথে আমাদের এজেন্ট নেই। আরও দশটি বুথে এজেন্টদের বাড়ি গিয়ে খুনের হুমকি দিয়ে তাঁদের বুথ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। ৩০টিরও বেশি বুথে বিকেল চারটের পর থেকে গণহারে ছাপ্পা পড়েছে।” সিপিআই প্রার্থী শিশিরবাবুর প্রশ্ন, ‘‘কমিশন অনেক বড়াই করেছিল, কিন্তু কাজে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।’’

যদিও ভোট দেখে খুশি তৃণমূল প্রার্থী বিক্রমচন্দ্র প্রধান। তিনি বলছেন, “অতীতে নিজেদের অপকর্মের জন্য এখন বামেরা ভূত দেখছে। মানুষ শান্তিতেই
ভোট দিয়েছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement