বেলদার সভায় অভিষেক।
ঘড়িতে তখন বিকেল সাড়ে তিনটে। আকাশে হেলিকপ্টার দেখে মুখ শুকিয়ে এল দীনেন রায়, প্রদ্যোত ঘোষদের! তখনও নারায়ণগড়ের অর্জুনির মাঠ ভর্তি হয়নি। যেখানে অনায়াসে হাজার পনেরো লোক ধরতে পারে, সেখানে লোক মেরেকেটে দু’হাজার! মঞ্চে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আসার পরই নেতারা আশ্বস্ত করলেন, আরও লোক আসছে। মিনিট কুড়ি পর বক্তব্য রাখার সময় এল অভিষেকের। মাঠের ‘হাল’ দেখে তৃণমূলের ‘যুবরাজ’ অবশ্য ঝুঁকি নিলেন না। জানিয়ে দিলেন, “আগে প্রদ্যোতদা বলুক। তারপর আমি।’’ নারায়ণগড়ের নেতাদের বুঝতে অসুবিধে হল না, আরও কিছুটা সময় কাটাতে চাইছেন অভিষেক। যদি মাঠ ভরে!
কেন ভিড় কম বক্তব্যে তার ব্যাখ্যা দিয়ে নারায়ণগড়ের তৃণমূল প্রার্থী প্রদ্যোত ঘোষ বললেন, “আপনারা রোদের মধ্যে এসেছেন। কষ্টও হচ্ছে। নেত্রী এই সময় নির্বাচন চান না। কিন্তু আমাদের তো কিছু করারও নেই!” সঙ্গে জানালেন, “এটা ছোট সভা! ৪টি অঞ্চলের কর্মী- সমর্থকদেরই ডাকা হয়েছিল!” একই মত তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা খড়্গপুর গ্রামীণের প্রার্থী দীনেন রায়ের। তাঁর কথায়, “লোক ভালই হয়েছিল! ২-৩টি অঞ্চলের কর্মী- সমর্থকদের নিয়েই এই সভা হয়েছে!”
চড়া রোদের অজুহাত শোনাতে হল অভিষেককেও। বক্তব্যের গোড়াতেই তিনি বললেন, “এখন কাঠফাটা রোদ। একে উপেক্ষা করেই আপনারা এসেছেন। আপনাদের ধন্যবাদ।” বক্তব্যের শেষে মাঠে বসে থাকা কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে তাঁকে বলতে শোনা গেল, “কি আমরা পারব তো? তৃণমূল জিতবে তো?” সাড়া দিলেন কর্মী-সমর্থকেরা। যা শুনে অভিষেকের মন্তব্য, “আমি তাহলে ফিরে গিয়ে নেত্রীকে জানিয়ে দিচ্ছি, সূর্যকান্ত মিশ্র ৪০- ৪৫ হাজার ভোটে পরাজিত হতে চলেছেন!” তিনি আরও বলেন, “সূর্যবাবুরা ২০১১ সালে যে ভাবে এখানে ভোট করিয়েছেন, এ বার সেই ভাবেই ভোট করাতে হবে।”
অভিষেক যখন বক্তব্য রাখতে ওঠেন, তখন অর্জুনির মাঠের ভিড়টা কিছুটা বেড়েছে। প্রায় হাজার পাঁচেক লোক। কেন এত কম লোক? সভার আগে-পরে প্রশ্নটা ঘুরপাক খেয়েছে শাসক দলের অন্দরেও! তৃণমূলের নারায়ণগড় ব্লক সভাপতি মিহির চন্দ অবশ্য বলেন, “আমরা রোদের মধ্যে ত্রিপলের ছাউনি দিতে পারিনি। তাও প্রচুর লোক!” সভামঞ্চেই অবশ্য তড়িঘড়ি ব্লক নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়। বার্তা দেওয়া হয়, এরপর থেকে সভা-সমাবেশ হলে আরও সতর্ক হতে হবে! মাঠ-ভর্তি জমায়েত নিশ্চিত করতে হবে! কেন বৈঠক? দীনেনবাবু বলছেন, “এটা দলের সাংগঠনিক ব্যাপার! সব কিছু দেখে নেওয়া হল!”
মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুরে এসে দু’টি নির্বাচনী সভা করেন অভিষেক। প্রথমে দলের প্রার্থী নির্মল ঘোষের সমর্থনে সবংয়ে। পরে দলের প্রার্থী প্রদ্যোত ঘোষের সমর্থনে নারায়ণগড়ে। দু’টি সভাতেই অভিষেক জানিয়ে দেন, মনে রাখতে হবে প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই! যা শুনে সবংয়ের কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়ার কটাক্ষ, “ভালই তো! নির্মল ঘোষ যে যোগ্য প্রার্থী নন এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো বুঝতে পেরেছেন!” ছবি: কিংশুক আইচ।