মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের পরে রতুয়ার জোট প্রার্থী সমর মুখোপাধ্যায়ের সমর্থনেও সভা করলেন প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী। রতুয়ার ওই সভায় অবশ্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গেই হাজির ছিলেন জেলা সিপিএমের সম্পাদক অম্বর মিত্র সহ বাম নেতারা।
মালদহের ১২টি আসনের মধ্যে হরিশ্চন্দ্রপুর ও মালতীপুর আসনে জোট হয়নি। হরিশ্চন্দ্রপুরে ফরওয়ার্ড ব্লক ও মালতীপুরে আরএসপির পাশাপাশি কংগ্রেসও প্রার্থী দিয়েছে। কিন্তু হরিশ্চন্দ্রপুরে নির্বাচনী প্রচারে এসে কংগ্রেস প্রার্থীকে জোটের প্রার্থী বলে দাবি করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। প্রকাশ্য জনসভায় অধীরবাবু একাধিকবার কংগ্রেস প্রার্থী মোস্তাক আলমকে জোটের প্রার্থী বলে দাবি করেন। কেন তিনি জোট প্রার্থী, তার পক্ষে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সাফাইও দেন। যদিও ওই আসনে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হচ্ছে জেনেও কংগ্রেস প্রার্থীকে অধীরবাবু জোট প্রার্থী বলে তুলে ধরায় বাম শিবিরে বিতর্ক ছড়িয়েছে।
রবিবার হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের খন্তা হাইস্কুল ময়দানে জনসভায় তৃণমূলের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীও ছিলেন প্রদেশ সভাপতির আক্রমণের লক্ষ। অধীরবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূলকে সরানোর লক্ষে আমাদের সঙ্গে জোট হয়েছে সিপিএমের। রাজ্যে আসন ভাগাভাগি হয়েছে সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের আলোচনার প্রেক্ষিতে। কংগ্রেসেরও কিছু শরিক রয়েছে। তাদের সামলানোর দায় কংগ্রেসের। তেমনই বাম শরিকদের সামলানোর দায়দায়িত্ব সিপিএমের। ফলে সেই সমঝোতার প্রেক্ষিতেই বলছি, মোস্তাক আলম শুধু কংগ্রেসের নয়, তিনি জোটের প্রার্থী।’’ এরপর অধীরবাবু বামবন্ধুদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘এমন কিছু করবেন না যাতে তৃণমূলের সুবিধে হয়ে যায়। ফলে আবারও বলছি, এখানে জোটের প্রার্থী মোস্তাক আলম।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র অবশ্য দাবি করেছেন, রাজ্যে ৯৫ শতাংশ আসনে জোট হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘হরিশ্চন্দ্রপুরে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হচ্ছে, এটা অধীরবাবু জানেন। কিন্তু সব জায়গায় জোটের সমর্থনে সভা করতে গিয়ে মুখ ফস্কে হরিশ্চন্দ্রপুরের প্রার্থীকে তিনি হয়ত জোটপ্রার্থী বলে ফেলেছেন।’’ অম্বরবাবু বলেন, ‘‘প্রদেশ সভাপতির সঙ্গে আমরাও একমত, যাতে তৃণমূল কোনওভাবেই লাভবান না হতে পারে, ওখানে কোনওভাবেই তৃণমূল সুবিধে পাবে না।’’
তবে ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক শ্রীমন্ত মিত্র বলেন, ‘‘বলা হয়েছিল জেতা আসনে কেউ কারও জায়গায় ঢুকবে না। তারপরেও কংগ্রেস হরিশ্চন্দ্রপুরে প্রার্থী দিয়েছে। আবার এদিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি যা বললেন, তা দুর্ভাগ্যজনক।’’
এ দিন দুপুর আড়াইটেয় হেলিকপ্টারে নির্বাচনী সভায় যোগ দিতে পৌঁছন অধীরবাবু। ভিড়ে ঠাসা ময়দান দেখে আপ্লুত অধীরবাবু বলেন, ‘‘সকাল দেখলে দিন কেমন যাবে বোঝা যায়। তেমনই প্রথম নির্বাচনী প্রচারে এসে এই জনসভাই বুঝিয়ে দিচ্ছে মালদহে শুধু নয়, রাজ্যে নির্বাচনের ফলাফল কী হবে।’’
তারপরেই অধীরবাবু বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে রাজ্যের মানুষের সব স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছে।’’ এই সরকার লুঠেরাদের সরকারে পরিণত হয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রের মোদী ও রাজ্যের মমতা, দুই ম-এ মিত্রতা হয়েছে। দিল্লিতে গিয়ে দিদি মোদীর সঙ্গে আঁতাত করছেন আর রাজ্যে এসে বিরোধিতার ভান করছেন।’’ সেই আঁতাতের জন্যই সারদা তদন্ত ধীরগতিতে চলছে বলেও দাবি করেন তিনি।
রাজ্যে সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী যে পরিসংখ্যান তুলে ধরছেন তাকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি অধীরবাবু। তিনি বলেন, ‘‘দিদি বলছেন, ৭০ লক্ষ বেকারের চাকরি হয়েছে। সাহস থাকলে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক, কাদের চাকরি হয়েছে। ১৯৭৭ সালে নয় শতাংশ সংখ্যালঘু চাকুরে ছিল আর এখন সেটা দেড় শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।’’ রাজ্যে মুসলিম প্রাথমিক শিক্ষক রয়েছেন দেড় শতাংশ, নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন এ কথা বলছেন জানিয়ে অধীরবাবু বলেন, দিদি আসলে অঙ্কে কাঁচা। তাই অন্যদেরও কাঁচা ভেবে ধোঁকা দিয়ে চলেছেন। আর তাই সব অতীত ভুলে তৃণমূলকে বাংলাছাড়া করতে জোট হয়েছে।