সংখ্যালঘু অঙ্কে জয়ের স্বপ্ন দু’দলে

সংখ্যালঘু ভোট প্রায় ৩৭ শতাংশ। আর তা ঘিরেই যাবতীয় অঙ্ক চলছে মন্তেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রে। সিপিএম এবং তৃণমূল দুই শিবিরেরই দাবি, সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের বেশিটাই তাদের পকেটে। বর্ধমানের গ্রামীণ এলাকায় কেতুগ্রামের পরে সংখ্যালঘু ভোট বেশি রয়েছে মন্তেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রে।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৬ ০১:০৫
Share:

সংখ্যালঘু ভোট প্রায় ৩৭ শতাংশ। আর তা ঘিরেই যাবতীয় অঙ্ক চলছে মন্তেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রে। সিপিএম এবং তৃণমূল দুই শিবিরেরই দাবি, সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের বেশিটাই তাদের পকেটে।

Advertisement

বর্ধমানের গ্রামীণ এলাকায় কেতুগ্রামের পরে সংখ্যালঘু ভোট বেশি রয়েছে মন্তেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রে। ফলে এক দিকে লোকসভা ও পঞ্চায়েত ভোটের সমীকরণ কাজে লাগিয়ে সংখ্যালঘু ভোটে ভর করে উড়ান দিতে চাইছে তৃণমূল। আবার চেনা রাজপাটে সংখ্যালঘু ভোট যে তাঁদেরই সঙ্গে তা মনে করিয়ে জিততে চায়ছে সিপিএম।

বামেদের দুর্গ বলে পরিচিত এই কেন্দ্রে ১৯৭৭ সাল থেকে টানা জিতে আসছে বামেরা। এ বারের সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ হেদায়তুল্লাও আগের দু’বারের বিধায়ক। ২০১১ সালে পরিবর্তনের জমানায় কালনা মহকুমার চার বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে তিনটিতে বামেদের ভরাডুবি হলেও মন্তেশ্বরে তৃণমূল প্রার্থী আবু আয়েশ মণ্ডল হেরে যান প্রায় ৩২৯৮ ভোটে। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস, তৃণমূল জোট ৪৫.৩৪ শতাংশ ভোট পায়। সেখানে সিপিএমের দখলে ছিল ৪৭.২৪ শতাংশ ভোট। বিজেপি ও অন্যান্যদের ভোট ছিল সাড়ে সাত শতাংশের কাছাকাছি।

Advertisement

যদিও পঞ্চায়েত এবং লোকসভা নির্বাচনের ফল আবার উল্টো। দুটিতেই তৃণমূল এগিয়ে ছিল এই কেন্দ্রে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের দখলে ছিল ৪৭.১৫ শতাংশ ভোট। সেখানে সিপিএমের ভোট ছিল ৩৮.০৫ ও কংগ্রেসের দখলে ছিল ৩.০৮ শতাংশ ভোট। তুলনায় মোদী হাওয়ায় বিজেপি দশ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়েছিল ওই কেন্দ্রে। পঞ্চায়েত ভোটেও এই কেন্দ্রে প্রায় ২৩ হাজার ভোটে পিছিয়ে যায় বামেরা। বাঘাসন ও দেনুড় পঞ্চায়েত ছাড়া বাকি সব পঞ্চায়েতেরই দখল নেয় তৃণমূল।

এ বারেও প্রার্থী কে হবে, তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয় শাসকদলের অন্দরে। দলের একাংশের দাবি ছিল, সংখ্যালঘু কোনও প্রার্থীকে টিকিট দেওয়া। যদিও শেষমেশ টিকিট পান জেলা সভাপতি অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ব্লকের দলীয় সভাপতি সজল পাঁজা। তৃণমূলের একাংশ কর্মীদের দাবি, প্রার্থী ঠির হওয়ার পরেও বিরোধী গোষ্ঠীরা সহজে ময়দান ছাড়তে চায়নি। ব্লক পর্যায়ের এক নেতা নির্দল হিসেবে দাঁড়ানোর হুমকিও দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য দলনেত্রীর কড়া নির্দেশে পাশাপাশি আসে সব গোষ্ঠী। অন্তত এলাকার একটি কর্মিসভায় সব গোষ্ঠীর লোকজনকেই একসঙ্গে দেখা যায় সম্প্রতি।

আর বামেদের দাবি, একে এখানে দলের সংগঠন বরাবরই ভাল। তার উপর গত কয়েক বছরে সাধারণ মানুষ বারেবারে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল দেখেছেন। ফলে হাওয়াটা তাদের পালেই। সিপিএমের মেমারি ২ জোনাল কমিটির সম্পাদক অশেষ কোনার বলেন, ‘‘লোকসভা ও পঞ্চায়েত ভোটে কী ভাবে ভোট লুঠ হয়েছে মানুষ দেখেছেন। এ বারে আর তা হবে না। বরং স্বতস্ফূর্ত ভাবে মানুষ আমাদের ভোট দেবেন।’’ সিপিএম নেতাদের দাবি, লোকসভায় তৃণমূল বেশি ভোট পেলেও কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট এ বার তাদের দিকেই আসবে। তা ছাড়া বিজেপির ভোট ভাগ হয়েও আসবে। ফলে টক্কর নয়, জয়ই নিশ্চিত সিপিএমের।

তৃণমূল প্রার্থী সজলবাবু যদিও এত হিসেবে মানতে রাজি নন। তাঁর কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি থেকে শুরু করে নানা জায়গায় দলের সংখ্যালঘু প্রতিনিধিরা রয়েছেন। বামেরা নয়, সংখ্যালঘুদের ভোট ব্যাঙ্ক আমাদের সঙ্গেই রয়েছে।’’ ইতিমধ্যে দেওয়াল লিখন থেকে শুরু করে হেঁটে ভোটারদের কাছে পৌঁছনো সবেতেই বিরোধীদের চেয়ে তিনি এগিয়ে বলে তাঁর দাবি। কিন্তু গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব? প্রার্থী জবাব, ‘‘গোটা দল লড়াইয়ে নেমেছে। আশা করি লোকসভা ও পঞ্চায়েত ভোটের থেকে ব্যবধান অনেক বাড়বে।’’ প্রচারে সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন, এলাকায় স্টেডিয়াম ও মন্তেশ্বর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে গ্রামীণ হাসপাতালে উন্নীত করারও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তিনি।

সিপিএম নেতারা অবশ্য প্রচার বা দেওয়াল লিখনে পিছিয়ে থাকার প্রভাব ভোটে পড়বে না বলেই মনে করছেন। তাঁদের দাবি, এত দিন কী কাজ হয়েছে মানুষ দেখেছেন। এ বারের প্রার্থীও ঘরের লোক। এর ফল মিলবে।

এখন সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে ভরসা করে সিপিএম তিন নম্বর বার জিতবে নাকি, বামেদের শক্ত ঘাঁটিতে এ বার ঘাসফুল ফুটবে তার উত্তর দেবে ভোটবাক্স।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement