দমদম-উত্তর দমদম

আক্রান্ত বাম প্রার্থী, দাপট শাসকদের

ভোটে নিরাপত্তার কড়াকড়ি নিয়ে তৎপরতা যখন তুঙ্গে, তখন উত্তর দমদম যেন কিছুটা উল্টো পথেই হাঁটল! সেখানে আক্রান্ত ভোটারকে দেখতে গিয়ে ভোটের দিন যেমন রক্তাক্ত হলেন খোদ বাম প্রার্থী, ভাঙচুর করা হল তাঁর গাড়ি।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায় ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৬ ০১:২৩
Share:

জখম বাম প্রার্থী তন্ময় ভট্টাচার্য। সোমবার উত্তর দমদম বিধানসভা এলাকায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

এ যেন ছন্দপতন!

Advertisement

ভোটে নিরাপত্তার কড়াকড়ি নিয়ে তৎপরতা যখন তুঙ্গে, তখন উত্তর দমদম যেন কিছুটা উল্টো পথেই হাঁটল!

সেখানে আক্রান্ত ভোটারকে দেখতে গিয়ে ভোটের দিন যেমন রক্তাক্ত হলেন খোদ বাম প্রার্থী, ভাঙচুর করা হল তাঁর গাড়ি। তেমনই সেখানকার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, নির্বাচনী বিধিনিষেধের তোয়াক্কাও করলেন না শাসক দলের কর্মীরা। এমনকী, শাসক দলের হয়ে নারায়ণপল্লিতে ভোটের কাজে ব্যস্ত থাকা এক যুবক নিজেকে ‘নিমতা থানার পুলিশ’ বলেও দাবি করলেন!

Advertisement

উত্তর দমদমের নারায়ণপল্লিতেই রতনলাল সারোগি ভোট কেন্দ্রের ৫০ মিটারের মধ্যে কার্যত রাস্তা জুড়ে তৈরি হয়েছিল শাসক দলের ক্যাম্প। সেখানে জড়ো হয়েছিলেন জনা তিরিশেক কর্মী-সমর্থক। কাছে যেতেই কয়েক জন এগিয়ে এসে বললেন, ‘‘এখানে পিসফুল। বিশ্বাস না হলে দেখে আসুন।’’ তাঁদের সঙ্গে গিয়েই দেখা গেল, ভোটকেন্দ্রে অহরহ ঢুকছেন-বেরোচ্ছেন জনা কয়েক মহিলা-পুরুষ। তাতে বিশেষ আমল দিচ্ছে না পুলিশ কিংবা কেন্দ্রীয় বাহিনীও।

বিরাটির এমবি রোডে শাসক দলের বিরাট ক্যাম্পেও জড়ো হয়েছিলেন প্রচুর লোক। একটু দূরেই আর একটি ক্যাম্পে চেয়ার পেতে বসে রয়েছে প্রমীলাবাহিনী। দুর্গানগরের অলিগলিতেও জড়ো হয়েছিলেন লোকজন। রাস্তায় যাতায়াতের পথেও ইতিউতি ষণ্ডা চেহারার লোকেরা নজরে এসেছে। স্থানীয় যুব নেতা বিধান বিশ্বাসের বিরুদ্ধে হামলা ও সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগও উঠেছে। মাঝেরহাটি জলের ট্যাঙ্ক লাগোয়া ভোটকেন্দ্রের কয়েক মিটারের মধ্যে লোকজন নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবী পরা এক যুবক।


শাসকদলের ক্যাম্পে জটলা। বিরাটিতে। ছবি :শুভাশিস ভট্টাচার্য।

এই সবের মধ্যেই আচমকা হামলার শিকার হন উত্তর দমদমের বাম প্রার্থী তন্ময় ভট্টাচার্য। এ দিন কবি সুকান্তনগরে হুমকি উপেক্ষা করে ভোট দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রৌঢ় হ্যাপি চন্দ। তাঁকে দেখতে যাওয়ার সময়ে আচমকা ইট উড়ে আসে তন্ময়বাবুর গাড়িতে। চুরচুর হয়ে যায় গাড়ির পিছনের কাচ। মাথা বাঁচলেও হাত কেটে যায় তন্ময়বাবুর। তাঁর অভিযোগ, ট্যাপা নামে শাসক দল আশ্রিত এক দুষ্কৃতী ও তার দলবলই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। ঘটনার পরে নিমতা থানায় খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, শনিবার থেকেই এলাকায় হুমকি দেওয়া চলছিল। এ দিন সকালেও বহিরাগতদের দেখা গিয়েছে এলাকায়। যদিও জোটপ্রার্থীর উপরে হামলা নিয়ে উত্তর দমদমের তৃণমূল প্রার্থী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই হামলা রাজনৈতিক দৈন্যদশার পরিচয়।’’
নিজের দলের বিরুদ্ধেও অভিযোগ মানেননি তিনি।

ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগেই তো এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছিল প্রশাসন। তা হলে এ দিন সকাল থেকে এমন ভাবে লোকজন জড়ো হল কী ভাবে? তন্ময়বাবুর অভিযোগ, ‘‘এ নিয়ে শনিবার থেকেই বহু অভিযোগ জানিয়েছি।’’ তাঁর অভিযোগ এবং পরিস্থিতি জানিয়ে উত্তর দমদমের সাধারণ পর্যবেক্ষক হর্ষদীপ কাম্বলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। কিছু ক্ষণের মধ্যেই সক্রিয়তা বাড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর। দুপুরের পরে বড় রাস্তার উপরে থাকা শাসক দলের বহু ক্যাম্পেই ভিড় ছিল হাতেগোনা।

সকাল থেকে নাগেরবাজার-সহ দমদমের বেশ কিছু এলাকাতেও ১৪৪ ধারা জারি হওয়ার রেশ ছিল না। রাস্তার পাশে ইতিউতি জড়ো হয়েছিলেন যুবকেরা। বেশ কয়েক জনের বুকে শাসক দলের ব্যাজ সাঁটা। ক্যাম্প অফিসেও ছিল ভিড়। তবে মধুগড় ছাড়া দমদম কেন্দ্রের আর কোনও জায়গায় তেমন ভাবে হামলা-হাঙ্গামার অভিযোগ করেননি বিরোধী নেতারা। বরং নাগেরবাজারের দলীয় অফিসে বসে পোড় খাওয়া সিপিএম নেতা পল্টু দাশগুপ্ত
বললেন, ‘‘আমরা কিন্তু প্রতি বুথেই প্রতিরোধ গড়েছি।’’

দমদমে শাসক দলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি তৃণমূল প্রার্থী ব্রাত্য বসু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি নিজে অনেক জায়গায় ঘুরেছি। বিরোধী এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। কারও কোনও অভিযোগ নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement