এসএসকেএম হাসপাতালে আহত মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই।
নন্দীগ্রামে আহত হয়েছেন সন্ধ্যার দিকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহত হওয়ার খবর নিয়ে তোলপাড় দেশ। রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপি বনাম তৃণমূল জোর চাপানউতর শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কোনও বার্তা নেই। মুখ খোলেননি নন্দীগ্রামে তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মুখ্যমন্ত্রীর একদা সতীর্থ এবং বর্তমানে বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীও।
বুধবার সন্ধ্যার দিকে নন্দীগ্রামের বিরুলিয়া বাজারের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার ঘটনার পর থেকেই তোলপাড় রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতি। টুইট করে মুখ্যমন্ত্রীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন রাজ্যে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে তদন্ত করানো হোক। রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালও একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘‘হারবেন বুঝে নাটক করছেন মমতা।’’ দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তের টুইট, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী চাইলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক তাঁর নিরাপত্তা দেবে।’’ এ ছাড়া উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদীর পার্টি প্রধান অখিলেশ যাদব, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল, তেজস্বী যাদবরাও সুস্থতা কামনা করেছেন মমতার। ঘটনা অত্যন্ত গুরুতর এবং তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।
কিন্তু অন্তত এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া নেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। বিশিষ্ট কোনও ব্যক্তি, রাজনীতিবিদ অসুস্থ বা দুর্ঘটনায় আহত হলে সাধারণত তাঁর সুস্থতা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, রাজনীতিবিদরা। বুধবার মমতার আহত হওয়ার ঘটনা সেক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রমীই বটে। রাজ্যের বিজেপি নেতাদের অনেকেই সংবাদ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানালেও নন্দীগ্রামে মমতার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী শুভেন্দু অধিকারীও এ নিয়ে নিশ্চুপ।
অন্য দিকে ঘটনায় ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘নিশ্চয়ই ষড়যন্ত্র আছে। পুলিশ এসপিজি কেউ ছিল না।’’ তৃণমূল নেতৃত্বও এই ষড়যন্ত্রের তত্ত্বেই সরব। ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন সৌগত রায়, কুণাল ঘোষের মতো নেতারা। যদিও এ নিয়ে পাল্টা কটাক্ষ করতে ছাড়েননি রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। সাংসদ অর্জুন সিংহ যেমন বলেছেন, ‘সাজানো নাটক’। কেন সেই সময় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশ ছিল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি নেতা শমিক ভট্টাচার্য। তার পাল্টা হিসেবে আবার সৌগত রায়ের বক্তব্য, যাঁরা নাটুকে, তাঁরাই ‘নাটক’-এর কথা বলছেন।
মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের পুলিশমন্ত্রীও। সেই প্রসঙ্গ টেনে খোঁচা দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুলিশমন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশ ছিল না। শুধুমাত্র পায়ে চোট লাগল, এটা ভণ্ডামি।’’
বুধবারই নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। ফেরার পথে নন্দীগ্রামের রানিচকে একটি মন্দিরে হরিনাম সংকীর্তনে অংশ নেন তিনি। মন্দির থেকে বেরিয়ে রেয়াপাড়ায় নিজের অস্থায়ী আস্তানায় ফেরার পথে বিরুলিয়া বাজারে উৎসুক জনতার সঙ্গে কথা বলার জন্য গাড়ি থেকে নামেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময়ই পড়ে গিয়ে চোট পান তিনি। তাঁর বাঁ পা, মাথা এবং কপালে চোট লেগেছে। সড়কপথে গ্রিন করিডোর করে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে তাঁকে।