ভূত ভাগিয়ে অবাধ ভোট

কমিশনের মান রাখল বাহিনী, সঙ্গত পুলিশের

পাশে হাওড়ার ছবিটা ব্যতিক্রম। গত প্রায় পঞ্চাশ বছরে এমন নির্বিঘ্ন ভোটের নজির নেই এ বঙ্গে। এ যেন প্রায় পশ্চিমে সূর্য ওঠা! সক্কাল সক্কাল বুথের বাইরে দীর্ঘ লাইন। সচিত্র পরিচয়পত্র থাকলে তবেই বুথে ঢোকা যাচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:০৫
Share:

কড়া নজরে। বাগনানের একটি বুথের বাইরে। ছবি: সুব্রত জানা।

পাশে হাওড়ার ছবিটা ব্যতিক্রম। গত প্রায় পঞ্চাশ বছরে এমন নির্বিঘ্ন ভোটের নজির নেই এ বঙ্গে। এ যেন প্রায় পশ্চিমে সূর্য ওঠা!

Advertisement

সক্কাল সক্কাল বুথের বাইরে দীর্ঘ লাইন। সচিত্র পরিচয়পত্র থাকলে তবেই বুথে ঢোকা যাচ্ছে। বুথের দরজা থেকে ফিতে মেপে দু’শো মিটারের মধ্যে রাজনৈতিক দলের ক্যাম্প অফিসের দেখা নেই। তার বাইরের অফিসে দুইয়ের বেশি তিন জন থাকা তো দূরস্থান, তিনখানা চেয়ার দেখলেও বহু জায়গায় ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। আর পেশিশক্তির গন্ধ পেলে তো কথাই নেই। বাইক বাহিনীকে প্রায় উধাও করে দেওয়া হয়েছে পথ থেকে। এমনকী তালা পর্যন্ত ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে সব সিন্ডিকেট অফিসে। যা দেখে শাসক দল চিৎকার করছে, কমিশন ঠিক করছে না! বাড়াবাড়ি করছে কেন্দ্রীয় বাহিনী!

শেষ কবে এমন ভোট হয়েছিল বাংলায়? মনে পড়ে?

Advertisement

হতে পারে উত্তর চব্বিশ পরগনা ও হাওড়ার মাত্র ৪৯টি বিধানসভা আসনে ভোট হল সোমবার। কিন্তু প্রায় পাঁচ দশকের মধ্যে এই প্রথম যথার্থ ভোট হল বাংলায়। কিছু জায়গায় ভোট লুঠ বা অনিয়ম হলেও সামগ্রিক ছবির নিরিখে তা নগণ্য।

বাংলার ভোটে অবাধ সন্ত্রাসের প্রথম অভিযোগ উঠেছিল ১৯৭২ সালে। সে বার ভোটের মাঝপথেই প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছিল বামেরা। কিন্তু তারা নিজেরা ক্ষমতায় এসেও অন্য পথে হাঁটেনি। ভোট প্রক্রিয়াকে কতটা প্রহসনে পরিণত করা যায়, বাম জমানায় তার এক প্রকার ‘কেস স্টাডি’ হয়ে উঠেছিল পশ্চিমবঙ্গ। রাজনৈতিক ইতিহাসবিদদের মতে, যাঁর জনক ছিলেন প্রয়াত সিপিএম নেতা অনিল বিশ্বাস। সন্ত্রাস, ছাপ্পা, বুথ দখল, বৈজ্ঞানিক রিগিং, ভয় দেখিয়ে বুথমুখো হতে না দেওয়া— মানুষের অধিকার খর্ব করাটাই রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ফলে কোথাও আশি শতাংশের বেশি ভোট পড়লেই সন্দেহ হতো, ভূতেরাই বোধহয় ভোট দিয়েছে।

তৃণমূল সেই উত্তরাধিকারই বহন করেছে। অনিল বিশ্বাসের মন্ত্রশিষ্য হয়ে উঠেছিলেন মুকুল রায়। দলে মুকুলের প্রভাব কমলেও, সেই মন্ত্র ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নিয়েছেন দিদির অন্য ভাইরা।

তাই চ্যালেঞ্জ নিয়েই এ বার মাঠে নেমেছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী। কিন্তু প্রথম দু’দফার ভোটের পর বোঝা যায়, কমিশনের চোয়াল দেখতে যতটা শক্ত, কামড় ততটা জোরালো নয়! ফলে কমিশনের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেন বিরোধীরা। প্রধানমন্ত্রীর ছাড়পত্র আদায় করে চাপ বাড়ানো হয় বিজেপির তরফেও। তার পরই হাওয়া একটু একটু করে ঘুরতে শুরু করে। তৃতীয় দফায় বীরভূমে ভোটের দিন থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি মালুম হয়। চতুর্থ দফায় বর্ধমানের গ্রামীণ এলাকার ভোটে আরও সক্রিয় ছিল তারা। সোমবার দেখা গেল দুই জেলার কোনায় কোনায় ছেয়ে রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বহু এলাকায় তাদের সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত করছে রাজ্য পুলিশও। শাসক দলের একাধিক কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে তারা। সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে খেদিয়ে দেয়।

ফলে সাম্প্রতিক কালে লোকসভা, পুরসভা বা পঞ্চায়েত নির্বাচনে যাঁদের ভোট লুঠ হয়েছিল, যাঁরা বুথমুখো হতে পারেননি, তাঁরা এ দিন আঙুলে কালি লাগিয়ে গর্বের সঙ্গে দেখিয়েছেন।

কমিশনের হিসেব বলছে, এ দিন বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত উত্তর ২৪ পরগনায় ভোট পড়েছে ৭৯.১৬ শতাংশ। হাওড়ায় ৭৫.৪৬ শতাংশ। সেই ভোট কোন দিকে গেল, তা অবশ্য এখনই জানার উপায় নেই।

তবে জোট নেতারা উচ্ছ্বসিত। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘মানুষের জোট ধীরে ধীরে ডবল সেঞ্চুরির দিকে এগোচ্ছে।’’ আর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘কমিশনকে অবশ্যই ধন্যবাদ। তবে মানুষের জোটটাই সন্ত্রাস রুখে দিচ্ছে।’’

ঘটনা হল, পাল্টা প্রত্যয়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কলকাতায় এক সভায় তিনি বলেন, ‘‘এ পর্যন্ত ভোটেই সরকার গঠনের জন্য সংখ্যা জোগাড় হয়ে গিয়েছে তৃণমূলের।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement