লাভপুরের সিপিএম প্রার্থী।—নিজস্ব চিত্র
ফল ঘোষণার দিন যতই এগিয়ে আসছে, ততই চওড়া হচ্ছে তাঁর কপালের ভাঁজ। ফল নিয়ে সংবাদমাধ্যম প্রশ্ন করলে ফোন কেটে দিচ্ছেন। আর কোনও বার ফোন ধরে ফেললে খিঁচিয়ে উঠছেন।
লাভপুরের তৃণমূল প্রার্থী মনিরুল ইসলামের ওই অভিব্যক্তি দেখেই ঘনিষ্ঠ অনুগামীরা বলছেন, ‘‘মনি মিঁয়ার রাতের ঘুম উবে গিয়েছে। বারবার বলতে শোনা যাচ্ছে, যা-ই হোক, তাড়াতাড়ি ফল বের হলেই ভাল হতো। চিন্তায় প্রেসার, সুগার মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে!’’
মিঁয়ার চিন্তা হওয়াটাই স্বাভাবিক। ‘পরিবর্তনে’র ঝড়ে এর আগে হাজার তিনেক ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন। এ বার এক দিকে দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব, উল্টো দিকে ‘জোটে’র জোর চাপ বাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি কে কোন ‘ভূমিকা’য় অভিনয় করেছেন, তা-ই ঠিকমতো ঠাহর করতে পারছেন না মনিরুল। রাজনৈতিক গুরু আব্দুল মান্নানের সঙ্গে গুটি কয়েক বিশ্বস্ত অনুচরের সঙ্গে দলীয় কার্যালয়ে বসে চলছে চুলচেরা হিসেব। সেই হিসেবে কোনও বুথে বিপক্ষের থেকে খুব বেশি পিছিয়ে পড়লে ফের শুরু হচ্ছে নতুন করে স্ক্রুটিনি। আবার কোনও বুথের হিসেবে বিপক্ষ পিছিয়ে পড়ার ইঙ্গিত মিলতেই তাঁর সাদা দাড়ির ফাঁকে ফিরছে হাসির ঝিলিক।
তবে, ফুরফুরে মেজাজেই রয়েছেন জোট প্রার্থী সিপিএমের মাহফুজুল করিম। কারণ, যেখানে মনিরুলের দাপটে পঞ্চায়েত ভোটে তাঁরা প্রার্থীই দিতে পারেনি, সেখানে এ বার বেশ কিছু জায়গায় ভোটের আগে এবং ভোটের দিন তৃণমূলের সঙ্গে সমানে টক্কর দিয়েছেন জোটের কর্মীরা। তবুও চিন্তা কি যায়? চাপ ভুলে থাকতেই কর্মীদের বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন। লাভপুরের কার্যালয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বাড়ি ফিরতেই সেই কথা মনে পড়িয়ে দিচ্ছে দুই মেয়ে, ১১ বছরের নিশাত এবং ৫ বছরের মাহনাজ। বাড়িতে রাখা দলীয় পতাকা হাতে দিব্যি তারাও ভোটের আগে দলীয় কর্মীদের কাছে শোনা স্লোগান আউড়াচ্ছে— ‘এ বার ভোটে জিতবে কে’?
দলের নিজস্ব নেটওয়ার্কে বিভিন্ন এলাকার কর্মীদের ভাল-মন্দ খবর আসছে। চলছে তুমুল বিশ্লেষণ। মাহফুজুলের বৃদ্ধা মা মাহফুজা এবং আশাকর্মী স্ত্রী জাহানারার বিশ্বাস, এ বার জয়ের মালা পাবেন তাঁদেরই ঘরের লোক। তবু চিন্তা যায় না। মাহফুজুল তাই বলছেন, ‘‘দিন সাতেকের মধ্যে ফল ঘোষণা হলে এতটা চাপ নিতে হতো না!’’