নরেশের ভোট চাইতে শতাব্দী
তৃণমূল প্রার্থী নরেশচন্দ্র বাউরির হয়ে দুবরাজপুর ব্লক এলাকায় বেশ কয়েকটি সভা করলেন সাংসদ শতাব্দী রায়। রবিবার বিকেলে জনসভাগুলি ছিল হেতমপুর এলাকার ধরমপুর, বালিজুড়ি এলাকার মঙ্গলপুর, লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার প্রতাপপুরে। এ ছাড়াও দুবরাজপুর এলাকার ধর্মশালায় একটি মহিলা কর্মী সম্মেলনও করেন শতাব্দী। ভিড়ে ঠাসা ধর্মশালার হল দেখে সাংসদের জি়জ্ঞাসা, ‘‘এত সমর্থক থাকার পরও কেন গতবার বিধায়ক এল না?’’ সংবাদমাধ্যমকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি শতাব্দী। তিনি বলেন, ‘‘মিডিয়া যাই বলুক, বিরোধীরা যাই বলুক তৃণমূলই সরকার গড়বে। আবার মুখ্যমন্ত্রী হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে চ্যানেলগুলো সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত আমাদের গালিগালি করছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গালিগালাজ না করলে সংসার চলে না। আসলে সাংবাদিক হতে হলে মিথ্যেবাদী হতে হয় নাকি মিথ্যেবাদী হলে সাংবাদিক হয়, আমি জানি না কোনও একটা কিছু হবে। কিন্তু তারাও কাটতে কাটতে ২০০ আসনের কম তৃণমূলকে দিচ্ছে না। এত বড় শত্রুরা যখন এ কথা বলছে, কেন আমরা দুবরাজপুরকে তৃণমূল বিধায়ক দেব না।’’
জোট প্রার্থী
রামপুরহাট বিধানসভা কেন্দ্রে কে জোটের প্রার্থী তার জবাব প্রশ্ন তুলে এ বার বিরোধীদের চাপের মুখে ফেলল তৃণমূল। তৃণমূল প্রার্থী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় মুরারই এর পলসায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ‘‘নলহাটি তে তো জোটের প্রার্থী ফরওয়ার্ড ব্লক দলের। মুরারই কেন্দ্রে জোট প্রার্থী কংগ্রেসের। রামপুরহাটে একজন বলছেন আমি বামফ্রন্ট ঘোষিত ফরওয়ার্ড ব্লক দলের প্রার্থী মহম্মদ হান্নান। আর একজন ফ্লেক্সে নিজের ছবির পাশে সূর্যকান্ত মিশ্রের ছবি লাগিয়ে বলছেন, ‘‘আমি জোট প্রার্থী।’’ তাঁদের কাছে আমার প্রশ্ন আপনাদের কে প্রার্থী বলুন তো?’’ এর পরেই আশিসবাবু কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘আগে কংগ্রেসের প্রতীক ছিল গাই বাছুর, পরে হাত, এখন হাতের ভিতর কাস্তে।’’ কংগ্রেস প্রার্থী সৈয়দ সিরাজ জিম্মি বলেন, ‘‘পায়ের তলায় মাটি সরে গেলে অনেকেই এরকম কথা বলে। তৃণমূলও বলছে।’’
দেখা হল না
অভিষেকের হেলিকপ্টার তখনও নামেনি। কিন্তু, এসে গিয়েছেন তাঁরা। তৃণমূলের যুবনেতাকে দেখতে হেলিপ্যাডের খুব কাছে উৎসুক চোখে দাঁড়িয়ে ছিলেন বেশ কিছু মাঝবয়সি মহিলা। কাছ থেকে যুবরাজকে দেখতেই সুবিধেজনক জায়গা বেছে নেওয়া, মানছেন তাঁরা। কিন্তু, দেখা হল কই! আক্ষেপ ছুড়ে এঁদের একজন বললেন, ‘‘হেলিকপ্টার নামতেই ধুলোয় চোখ বন্ধ হয়ে গেল যে!’’ এরপরে তাঁরা একে অপরের দিকে চেয়ে বলতে লাগলেন, ‘‘হেলিকপ্টারে আসার কি দরকার ছিল? গাড়িতে এলেই তো ভাল করে দেখতে পেতাম।’’
পাহারাদার
নির্ভয়ে নিজের ভোট নিজে দেওয়ার ডাক দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ভোটের আগের রাতে টাকায় বা মদের বোতলে যাতে ভোট কেনাবেচা না করা যায়, তাই শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই মানবাজারে সজাগ। সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক তথা মানবাজার জোনাল সম্পাদক সাম্যপ্যারী মাহাতো জানাচ্ছেন, ভোটের আগের রাতে সমর্থন পেতে শাসক দল প্রলোভন দেখায়। নগদ টাকার কারবার চলে। তা রোখার জন্য ভোটের আগের রাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে এ বার তাঁরা বাড়তি সতর্কতা নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘দলের কর্মীদের বলেছি প্রতিটি পাড়ায়, প্রতিটি বুথে ভোট যাতে কেনাবেচা না হয় তা দেখতে হবে। এলাকায় অপরিচিত গাড়ি অথবা অন্য দলের কর্মীরা ভোট প্রচারের নামে ঢুকলে তাঁদের কাজকর্মের উপর নজর রাখতে হবে।’’ আবার মানবাজারের তৃণমূল প্রার্থী সন্ধ্যারানি টুডুর স্বামী তৃণমূল নেতা গুরুপদ টুডুর অভিযোগ, ‘‘ভোট কেনাবেচা করেই সিপিএম এতদিন ক্ষমতায় টিকে ছিল। এটা ওদেরই দেখানো পথ। তাই সিপিএম যাতে পুরনো খেলা খেলতে না পারে এ জন্য দলীয় কর্মীদের আগেই সতর্ক করে দিয়েছি। কর্মীদের বলেছি ভোটের আগের রাত থেকে ভোটদান পর্যন্ত তাঁদের যাতে কেউ প্রভাবিত করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলেছি।’’ দু’পক্ষই আপাতত নিজের নিজের ঘাঁটি আগলে পড়ে থাকছেন।
শেষ মুর্হূতে
তীব্র রোদের ঝাঁঝ মাথায় নিয়ে টানা প্রায় মাসখানেকের প্রচারপর্ব শেষ হয়েছে শনিবার। রবিবার প্রার্থীরা প্রায় সকলেই শেষ মুর্হূতের রণকৌশল ছকতে ব্যস্ত ছিলেন। পুরুলিয়ার দুই হেভিওয়েট নেতা শান্তিরাম মাহাতো ও নেপাল মাহাতোও কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন। এ দিন সাতসকালেই চা খেয়ে গাড়াফুসড় গ্রামের বাড়ি থেকে চাষমোড়ের কার্যালয়ে এসে কর্মীদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরামবাবু। বাড়ি ফিরে স্নান সেরেই সোজা পুরুলিয়া শহরের কার্যালয়ে চলে যান। সেখান থেকে মোবাইলে নিজের বিধানসভা এলাকার বিভিন্ন বুথের কর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখেন। রুটি-সবজি দিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সারতে সারতে বিকেল। জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপালবাবুও সকালে তাঁর ইচাগ গ্রামে বাড়ি থেকে বের হয়ে বাঘমুণ্ডি যান। কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সকাল থেকে যাঁর যা কাজ রয়েছে তাঁকে মনে করিয়ে দেন তিনি। নিজে ছুটেছেন বিভিন্ন গ্রামে কর্মীদের কাছে। কর্মীদের বাড়িতেই রুটি-তরকারি দিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সেরে বলেন, ‘‘কর্মীদের সঙ্গে তো বছরভরই যোগাযোগ থাকে। এ দিন শেষ মুর্হূতের দায়িত্বটুকু শুধু বুঝিয়ে দেওয়া হল।’’
হারানো প্রাপ্তি
শুনলে মনে হবে হারানো প্রাপ্তি নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন। শনিবার পুরুলিয়া পলিটেকনিক কলেজে গেলে তেমনটা মনে হলে ভুল কিছু হতো না। সেখানে ভোটকর্মীদের ইভিএম দেওয়া হচ্ছিল। মাইকে কখনও ভেসে আসছিল— অমুক পোলিং পার্টি আপনারা ভোটিং কম্পার্টমেন্টের পিচবোর্ড নিতে ভুলে গিয়েছেন। পিচবোর্ড নিয়ে যান। কখনও বা কোনও পোলিং পার্টিকে বারবার ডাকা হচ্ছিল। এক ভোটকর্মীর কথায়, ঘোষণার বহর শুনে মনে হচ্ছে, মেলায় যেন ঘনঘন লোকের জিনিস হারিয়ে যাচ্ছে।
জলঘোলা
তিনি হাঁটবেন। কিন্তু ঠা ঠা রোদে পিচ তেতে উঠেছে। ধুলোও তো কম নয়! মানুষ দু’বেলা জল না পেলেও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদযাত্রার জন্য রবিবার তাঁর দলেরই বাঁকুড়া পুরসভা গাড়ি করে জল ছড়ালো রাস্তায়। তা নিয়ে কটাক্ষ শুরু করেছেন বিরোধীরা। তবে বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্তের দাবি, মোট দু’গাড়ি জল ছড়ানো হয়েছে। তবে তা পানীয় নয়। স্থানীয় একটি পুকুর থেকে জল নেওয়া হয়েছে।’’