ভবানীপুরে বিজেপির জনসভায় সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে পরেশ রাওয়াল এবং রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। উপস্থিত রাজ্যের বিজেপি নেতা রাহুল সিংহও। বুধবার ভবানীপুরে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
ম্যাজিক সংখ্যা মাত্র ১! ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে মাত্র একটি আসন— ভবানীপুরে পরিবর্তন করতে পারলেই গোটা রাজ্যে আপনা-আপনি পরিবর্তন হয়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরে দলীয় প্রার্থী চন্দ্র বসুর সমর্থনে বুধবার প্রচারে গিয়ে এই বার্তাই দিলেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।
প্রথম দফার ভোটের আগে রাজ্যে প্রচারে এসে সারদা, নারদ এবং উড়ালপুল কেলেঙ্কারি নিয়ে মমতাকে তীব্র আক্রমণ করেছিলেন অমিত। রাজ্যে উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের অভাবের জন্যও দায়ী করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে। এ দিনও অমিত সেই সব অভিযোগ করেছেন। সঙ্গে এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, ‘‘একটা বিধানসভা আসন— ভবানীপুরে বদলে দিন। গোটা রাজ্যের ভাগ্য বদলে যাবে।’’ অমিত জানান, প্রচারসভায় আসার পথে বিমানবন্দরে একটি বাচ্চা তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে পরিবর্তনের জন্য ১৫০টা আসন দরকার কি না। তিনি তাকেও একই ব্যাখ্যা দিয়ে এসেছেন। তাঁর আরও বক্তব্য, কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী কোনও কেন্দ্রের মানুষ যা পায় না, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে শ্রদ্ধা জানানোর সেই বিরল সুযোগ পেয়েছেন ভবানীপুরের মানুষ। সেখানকার বিজেপি প্রার্থী চন্দ্রবাবু নেতাজির নাতি। সেই যুক্তিতেও চন্দ্রবাবুকে ভোট দেওয়ার আর্জি জানান অমিত।
বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতির বক্তব্য, পাঁচ বছর আগে সাম্যবাদীদের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য এ রাজ্যের মানুষ তৃণমূলকে বিপুল ভোটে জিতিয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষমতায় এসে তারা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান— কোনও ক্ষেত্রেই বাম জমানার থেকে এগোতে পারেনি। উল্টে তারা দুর্নীতিগ্রস্ত বলে চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রে দু’বছর সরকার চালানোর পরেও মোদীর গায়ে কোনও কালি লাগেনি। বরং, তাঁর নেতৃত্বে দেশে সার্বিক উন্নয়ন হচ্ছে। অতএব, পশ্চিমবঙ্গের জনতারও বিজেপি-কে ক্ষমতায় এনে সেই উন্নয়নের সুফল নেওয়া উচিত।
নারদ-কাণ্ডের প্রসঙ্গে অমিত এ দিন কটাক্ষ করেন, ‘‘আমি কখনও কাউকে এত নির্লজ্জ ভাবে ঘুষ নিতে দেখিনি! আর অদ্ভুত ব্যাপার, যাঁরা ঘুষ নিলেন, মমতাজিও তাঁদের কিছু বললেন না! তাঁদের হুঁশিয়ারিও দিলেন না! তাঁরা ভোটেও লড়ছেন!’’ ওই সভায় বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ এবং রাহুল সিংহ, প্রাক্তন ত্রিকেটার চেতন শর্মা, সাংসদ অভিনেতা পরেশ রাওয়ালও রাজ্যে পরিবর্তনের পক্ষে সওয়াল করেন।
মমতার কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব তাঁকে যখন দুর্নীতি নিয়ে কটাক্ষ করছেন, তখন শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বেহালা পূর্ব এবং ফিরহাদ হাকিমের কলকাতা বন্দরের প্রচারসভায় মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন, ‘চোর’ তকমায় তিনি বিধ্বস্ত!
বেহালা চৌরাস্তার সভায় সরাসরিই মমতা বললেন, ‘‘যদি আমার কোনও অন্যায় হয়, আমাকে দুটো চড় মারুন। আমি কিছু ভাবব না। কিন্তু চোর বললে, কুৎসা, অপমান করলে গায়ে লাগে।’’ গত চার বছরে কোনও রকম অন্যায় হয়ে থাকলে, মানুষ তাঁর উপর অভিমান করলেও যেন আশীর্বাদের হাত না সরান— কুলটিতে প্রচারে গিয়ে এই অনুরোধ করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। রাজ্যে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়ার আঁচ পেয়ে এ বার নিজের গালেও মানুষকে চড় মারতে বললেন তিনি।
রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের ব্যাখ্যা, নারদ-কাণ্ডের ফাঁসে তৃণমূল এখন হাঁসফাঁস করছে। তা থেকে নিষ্কৃতি পেতেই শোভন এবং ফিরহাদের কেন্দ্রে গিয়ে মমতাকে নিজেকে ‘সৎ’ বলে তুলে ধরতে হয়েছে। বেহালার সভায় মমতা এ দিন বলেন, ‘‘আমার কথা বিশ্বাস না হলে আমায় বলে দেবেন। আমি কিছু মনে করব না। যত দিন আপনারা ভাববেন, তত দিনই থাকব।’’