ব্রিগেডের মঞ্চে শুভেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র।
নন্দীগ্রামে ভোটের আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেন ‘প্রাক্তন বিধায়ক’-এর প্যাড ছাপিয়ে রাখেন। রবিবার ব্রিগেড সমাবেশ থেকে এমনই ঘোষণা করলেন শুভেন্দু অধিকারী। আরও বললেন, ‘‘মাননীয়াকে হারাবই, হারাবই, হারাবই!’’
শনিবার রাতেই নন্দীগ্রামে মমতার বিরুদ্ধে তাঁর নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে বিজেপি। তার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ব্রিগেড সমাবেশে শুভেন্দুর বক্তৃতায় যে সে প্রসঙ্গ আসবে, তা স্বাভাবিক। যেমন স্বাভাবিক যে, সেই বক্তৃতায় আসবে ‘ভাইপো’ প্রসঙ্গও। শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘তোলাবাজ ভাইপো বলছে, পদ্মের ডাঁটি শুকিয়ে যায়। আর ঘাসফুল যত কাটবে তত গজায়। আমরা ওই কোম্পানি ছেড়ে এই পার্টিতে এসেছি আপনাকে কাটতে নয়, সমূলে উৎপাটন করতে। তাই বাংলার মানুষ সাবধান! বালিচোর, কয়লাচোর, গোমাতাচোর এরা। গোমাতাকে বাংলাদেশে পাচার করে তোলাবাজ ভাইপো আর তার কোম্পানি। এরপর ফিরে এলে মানবদেহেব কিডনি পাচার করবে। তাই এখন থেকেই সাবধান!’’
পাশাপাশিই শুভেন্দু আক্রমণ করেছেন রাজ্যের বেকার সমস্যাকে। বলেছেন, ‘‘ডবল ইঞ্জিন সরকার করতে হবে। দু’কোটি বেকার কোথায় যাবে? শিল্প নেই! একটা এয়ারপোর্ট করতে পারেনি। একটি সি-পোর্ট করতে পারেনি। ৪৪ বছর আমরা কেন্দ্রের সঙ্গে ঝগড়া করে থেকেছি। এবার দিল্লি আর রাজ্যে একই দলের সরকার চাই। আপনারা বাংলা আমাদের দিন। আর মাননীয়াকে নন্দীগ্রামে আমি হারাবই, হারাবই, হারাবই। আপনারা ভরসা রাখতে পারেন।’’ কেন তিনি নন্দীগ্রামে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকে হারানোর বিষয়ে ওই দাবি করছেন? তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন শুভেন্দু। বলেছেন, ‘‘আপনারা বিশ্বাস রাখুন। আমি ওই মাটিটা চিনি। আমি ওই মাটিতে ২০ বছর কাজ করেছি। মাননীয়া, আমি নন্দীগ্রামের বুথে ভোট দেব। আমি ওখানকার ভোটার। আর আপনাকে টিভি-তে দেখতে হবে আপনি হারবেন। তাই এখন থেকেই প্রাক্তন বিধায়কের প্যাড ছাপিয়ে রাখুন।’’ প্রসঙ্গত, শুভেন্দু এতদিন হলদিয়ার ভোটার ছিলেন। কিছুদিন আগেই তিনি নন্দীগ্রামের ভোটার হিসেবে নিজের নাম সেখানকার ভোটার তালিকায় নথিভুক্ত করেছেন।
রাজ্যবাসীর উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিয়ে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বলেন, ‘‘তৃণমূলযদি ফিরে আসে, তাহলে পশ্চিমবঙ্গ কাশ্মীর হবে। কাশ্মীরের পণ্ডিতদের যে অবস্থা হয়েছিল, আমাদেরও সেই অবস্থা হবে। মাননীয়া বুদ্ধি কিনেছেন ৫০০ কোটি টাকা দিয়ে। সেই টাকা ১০০ দিনের কাজের টাকা। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা। কয়লা, বালি, গরু পাচারের টাকা দিয়ে বুদ্ধি কিনেছেন। সেই বুদ্ধিদাতারা বলল, ‘দিদিকে বলো’। আবার বলল, ‘বাংলার গর্ব মমতা’। কেন বর্ণপরিচয়ের স্রষ্টা বিদ্যাসাগর বাংলার গর্ব হবেন না! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি জাতীয় সঙ্গীতের স্রষ্টা, কেন তিনি বাংলার গর্ব নয়! হরেকৃষ্ণ মন্ত্রের প্রবক্তা শ্রীচৈতন্যদেব কেন বাংলার গর্ব নয়! হরিবোলের স্রষ্টা হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুর কেন বাংলার গর্ব হতে পারেন না! কিন্তু ‘বাংলার গর্ব’ এখন মমতা।’’
শুভেন্দুর কথায়, ‘‘স্বামী বিবেকানন্দ হারিয়ে গেলেন! তারপর দেখলাম ‘দিদির দূত’। কিন্তু তাতে দেখলাম তোলাবাজ ভাইপো ভূত। এখন বলছে ‘বাংলার মেয়ে’। শুনে রাখুন মাননীয়া, আপনাকে বাংলা নিজের মেয়ে বলে স্বীকার করে না। আপনি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ফুফু আর রোহিঙ্গাদের খালা। তাই এই সরকারকে উপড়ে ফেলতে হচ্ছে।’’ পাশাপাশিই বাম-কংগ্রেস-সিদ্দিকির সংযুক্ত মোর্চাকে আক্রমণ করে শুভেন্দু বলেন, ‘‘কিছুদিন আগে এখানেই একঝুড়ি লোক নিয়ে আব্বাস সিদ্দিকি বলেছিল, বামফ্রন্ট আর কংগ্রেসকে ভোট দিতে। কিন্তু এখন এখানে যাঁরা বসে আছেন, তাঁরা পরীক্ষিত ও জনগণের দ্বারা নির্বাচিত। সিপিএম-কংগ্রেস এখন তুষ্টিকরণের রাজনীতি করছে। ওদের ভোট দেবেন না। রাজ্যে বিজেপি-র সরকার আনতেই হবে।’’