একটা শব্দে চার বছর আগে ধুন্ধুমার বেধেছিল! হত্যার চক্রান্ত দেখেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার ভোটের সময়ে তাঁর মুখেই সেই শব্দ! বিরোধীদের উদ্দেশে। ‘ভ্যানিশ’! মমতা চান, এ বারের ভোটে বিরোধীরা ভ্যানিশ হয়ে যাক! ভোটের পরে আর যেন তাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া না যায়।
কলকাতার সত্যনারায়ণ পার্কের জনসভায় শনিবার কংগ্রেস-সিপিএম-বিজেপি’কে বিঁধে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘ভোটের পরে ম্যাজিশিয়ান পাঠিয়ে দেব। যারা আপনাদের ভোটের বাক্স থেকে ভ্যানিশ করে বালিশে ঘুম পাড়িয়ে দেবে!’’ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের গণনা হবে ১৯ মে। তার পরে বিরোধী কংগ্রেস-সিপিএম বা বিজেপি কারওরই রাজ্যে অস্তিত্ব থাকবে না বোঝাতে এর পরেই মমতা বলেন, ‘‘ভোটের বাক্স খোলা হলে সিপিএম চোখে দেখবে সর্ষেফুল। কংগ্রেসের ভাঙবে ভুল। আর বিজেপি কুলকুল। ঠান্ডায় থাকবে, ভালো থাকবে!’’
এই ‘ভ্যানিশ’ শব্দ নিয়েই ২০১২ সালের এপ্রিলে তুলকালাম ফেলে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র ই-মেল মারফৎ একটি ব্যঙ্গচিত্র তাঁর ৬২ জন বন্ধুকে ফরওয়ার্ড করেছিলেন আর সেই ব্যঙ্গচিত্রেই ছিল, তৃণমূল নেত্রী মমতা তদানীন্তন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়কে ভারতীয় রেলের লোগো দেখিয়ে বলছেন, ‘দেখতে পাচ্ছ মুকুল, সোনার কেল্লা! জবাবে মুকুল রেল মন্ত্রকে তাঁর পূর্বসূরি দীনেশ ত্রিবেদীর ছবি দেখিয়ে বলছেন, ‘‘ওটা দুষ্টু লোক!’’ তখন মমতার জবাব, ‘ভ্যানিশ’! এই ব্যঙ্গচিত্রের জেরে তাঁকে খুনের আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে অম্বিকেশবাবু জড়িত বলে মমতা অভিযোগ করেছিলেন। পুলিশ গ্রেফতার করে এক রাত থানার লক-আপে রেখেছিল অম্বিকেশবাবুকে।
চার বছর পরে আর এক এপ্রিলে কংগ্রেস-সিপিএমের জোটকে আক্রমণ করতে গিয়ে মমতা ভ্যানিশ-অস্ত্রে তা হলে বিরোধীদের খুনের হুমকি দিয়েছেন বলে পাল্টা অভিযোগ আনছেন অম্বিকেশবাবু। গণতান্ত্রিক জোট সমর্থিত বেহালা পূর্ব কেন্দ্রের নির্দল প্রার্থী অম্বিকেশবাবু প্রচারের ফাঁকেই বলছেন, ‘‘মানুষ যাতে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট না দেয়, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী এই ধরনের খুনের হুমকি দিচ্ছেন ভোটারদের। ভয় দেখাচ্ছেন। তাই আর শো-কজ নয়। ওঁর বিরুদ্ধে অবিলম্বে কমিশন এমন ব্যবস্থা নিক, যাতে ওঁর মুখ বন্ধ থাকে!’’
দিনকয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রীর অনুগত বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও বিরোধীদের ভ্যানিশ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। বিরোধীদের অভিযোগের ভিত্তিতে অনুব্রত এখন নির্বাচন কমিশনের নজরবন্দি। মু্খ্যমন্ত্রীর মুখেও ‘ভ্যানিশ’ শুনে চার বছর আগের ক্ষত-স্মৃতি ফিরিয়ে এনে অম্বিকেশবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তো দুষ্কৃতীদের নেত্রী। ওঁর মুখে এ ধরনের কথা শোনাটাই স্বাভাবিক!’’ তবে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি মুকুল। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ কথায় কোনও মন্তব্য হয় নাকি!’’
কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা এবং বিধাননগরের জোটপ্রার্থী অরুণাভ ঘোষের প্রশ্ন, ‘‘আমরা কি সবাই দুষ্টু লোক? উনি আমাদের সবাইকে খুন করে দেবেন?’’ সিপিএমের আইনজীবী নেতা বিকাশ ভট্টাচার্যও প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘ভ্যানিশ মানে খুন করে দেওয়া, অম্বিকেশের কার্টুনের পরে এই ব্যাখ্যাই তো দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী! এখন উনি যা বলছেন, তার মানে তো সরাসরি খুনের হুমকি। উনিও কি বিরোধীদের যাঁরা ভোট দেবেন, তাঁদের এ ভাবে হুমকি দিচ্ছেন?’’ ভ্যানিশ শব্দ ব্যবহারে অম্বিকেশের হাজতবাস প্রসঙ্গ টেনে বিকাশবাবুর মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীরও তো হাজতবাস হবে তা হলে! না হলে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে বোঝাতে হবে, অন্য কোনও মানে রয়েছে তাঁর ভ্যানিশ শব্দের!’’